
আসামের সব থেকে বেশি মহিলা ভোটকেন্দ্র কাছাড়ে, "আমরা কোনও ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই," বললেন ডিসি
রাত পোহালেই নির্বাচন, কাছাড় জেলায় রাজ্যে সব থেকে বেশি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে। তবে এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে, রাজ্যের সব থেকে বেশি মহিলা পরিচালিত ভোট কেন্দ্রও এবার কাছাড় জেলায়। বুধবার মহিলা আধিকারিকরা উধারবন্দের নেট্রিপ থেকে নিজেদের দায়িত্বের জিনিসপত্র নিয়ে গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা হয়েছেন। যাবার পথে বরাক বুলেটিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় নিজেদের অনুভূতি তুলে ধরেছেন। তাদের কথায়, “মহিলারা কোনভাবেই পুরুষদের থেকে কাজের বেলায় বা যেকোনও ক্ষেত্রে পিছিয়ে নন। এই কথাটা বারবার সমাজকে মনে করিয়ে দিতে হয়। এবার মহিলারা নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কোনও পুরুষের সাহায্য ছাড়াই সুন্দরভাবে যখন পালন করবেন, জনমনে আবার লিঙ্গ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটা বার্তা দেওয়া হবে।”
২০১৬ সালের নির্বাচনে কাছাড় জেলায় প্রথম সম্পূর্ণ মহিলা-চালিত ভোট কেন্দ্র চালু করা হয়েছিল। সেই বছর এই উদ্যোগটি যেহেতু পরীক্ষামূলক ছিল, ফলে মাত্র ১০ টি সেন্টার বানানো হয়েছিল। এবার জেলায় ২০১টি সম্পূর্ণ মহিলাচালিত ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এই বিষয়ে জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি বলেন, “এবার নির্বাচনে যেসব সরকারি আধিকারিকদের নিযুক্ত করা হয়েছিল এর মধ্যে পুরুষরা বেশি সংখ্যায় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন জানিয়েছেন। অর্থাৎ মহিলারা প্রথম থেকেই দায়িত্বনিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজেদের দাপট দেখিয়েছেন। আমরা যখন সম্পূর্ণ মহিলা চালিত ভোটকেন্দ্রের কথা ভেবেছি, তখন মহিলা আধিকারিক কতজন রয়েছেন সেটা গুনে দেখা হয়েছে। যেসব আধিকারিকরা সম্পূর্ণ মহিলা-চালিত ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন, আমরা তাদের কাজে লাগিয়েছি। আগামীকাল তারা একটি নতুন ইতিহাস গড়বেন যেটা সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে গিয়ে পৌঁছুনো অবশ্যই জরুরি।”
জেলাশাসক জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ মহিলা-পরিচালিত ভোটকেন্দ্রগুলি বেশিরভাগ শহর বা শহরের কাছাকাছি এলাকায়। অনেক মহিলার রয়েছেন যাদের ছোট বাচ্চা রয়েছে, তাদের যাতে অসুবিধে না হয় সেজন্য এই সুবিধাগুলো দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোথাও একা থাকা ভোট কেন্দ্রকে সম্পূর্ণ মহিলা-চালিত করা হয়নি। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নির্বাচন কমিশন ঠিক করেছেন যেখানে এক হাজারের বেশি ভোটদাতা রয়েছেন সেই কেন্দ্রের পাশে আরেকটি কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে এবং ভোটদাতার সংখ্যা ভাগ করা হবে। এমন ভোটকেন্দ্রগুলোকেই সম্পূর্ণ মহিলা চালিত কেন্দ্র হিসেবে ঠিক করা হয়েছে। প্রত্যেক কেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং অফিসার এবং তিনজন পোলিং অফিসার রয়েছেন। এছাড়া চেষ্টা চলছে যাতে মহিলা পুলিশ আধিকারিকদের সেখানে দায়িত্বে রাখা যায়।
পুলিশ সুপার বিএল মিনা জানিয়েছেন, তাদের বাহিনীতে এত বেশি মহিলা আধিকারিক না থাকলেও যতজন রয়েছেন প্রায় প্রত্যেককেই সম্পূর্ণ মহিলা-চালিত ভোটকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা চলছে। এছাড়া পুলিশের তরফে এসব ভোট কেন্দ্রকে বিশেষভাবে সুরক্ষা দেওয়া হবে যাতে প্রশাসনের এই উদ্যোগটি সফল হয় এবং সমাজে একটা সুন্দর বার্তা ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলার শিক্ষিকা মেঘমালা দে এমন একটি ভোট কেন্দ্রের আধিকারিক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। উধারবন্দের নেট্রিপে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “আমার ছেলে এখন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। একজন পুরুষ হিসেবে এটাই তার গড়ে ওঠার বয়স। আমরা তাকে সব সময় মহিলাদের সম্মান করতে শিখিয়েছি। তাকে যখন বলি, আমরা কয়েকজন মহিলা আধিকারিক মিলে নির্বাচনের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করছি, সে অত্যন্ত গর্বিত বোধ করে। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যখন সে নিজে চাকরি করবে, তার সঙ্গে কাজ করা মহিলাদের হয়তো আরেকটু বেশি সম্মানের চোখে দেখবে।”
শিলচর ডিএনএনকে উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমি ধর বলেন, “আমি এক মেয়ের মা, আমার সন্তান ডাক্তার এবং সমাজে মাথা উঁচু করে বেঁচে আছে। আমার চাকুরী প্রায় শেষ পর্যায়ে চলছে এবং হয়তো এই নির্বাচন আমার কাছে দায়িত্ব পালন করার শেষ সুযোগ। আজ এখানে দাঁড়িয়ে যখন দেখতে পাচ্ছি আমাদের জেলায় সবথেকে বেশি মহিলা-চালিত ভোটকেন্দ্র রয়েছে এবং নিজে এর অংশ হচ্ছি, অত্যন্ত আনন্দিত মনে হচ্ছে। সমাজে মহিলাদের সমান অধিকার রয়েছে এই কথাটা বারবার মনে করিয়ে দিতে হয়, কাল কাছাড় জেলায় আমরা মহিলারা এই কথাটা আবার সমাজকে মনে করিয়ে দিতে চলেছি।”
কাটিগড়ার তামান্না নাসরিন বড়ভূঁইয়া বলেন, “আমরা মহিলা আধিকারিকরা কোনও পুরুষের থেকে কম কাজ করিনা, এটা বারবার প্রমাণ দিতে হয়। এবার শুধুমাত্র মহিলারা মিলে নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করব, এটা ভেবে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা প্রমান করে দেব চারজন মহিলা মিলে শুধু অন্যের নিন্দা করে না, নির্বাচন প্রক্রিয়ার মতো কঠিন দায়িত্বও পালন করতে পারে।”
কাছাড় জেলার সাতটি কেন্দ্রে ভোটদাতার সংখ্যা ১০ লক্ষের বেশি। মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৮৩৪টি, মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৬১, নির্বাচন ১ এপ্রিল এবং ভোট গণনা ২ মে।
Comments are closed.