Also read in

'মলিন শর্মা যেভাবে মরেছে সেরকম আরও দু'একটাকে মারতে হবে,' কাঁঠালরোডে সাংবাদিক হিমু লস্করকে প্রকাশ্যে হুমকি টিপার চালকদের

দেড় বছর আগে শহরের বরিষ্ঠ চিত্রসাংবাদিক মলিন শর্মাকে পিষে মেরে চলে গিয়েছিল একটি দ্রুতগামী টিপার। সম্প্রতি একইভাবে কাঁঠাল রোডে এক ব্যক্তিকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এবার শিলচরের আরেক বরিষ্ঠ সাংবাদিক সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকার হিমু লস্করকে প্রকাশ্যে পিষে মারার হুমকি দিল টিপার-চালকরা। রাস্তায় একা পেয়ে তাকে হুমকি দেওয়া হলো। হুমকির বয়ানে মলিন শর্মার নামও উঠে আসে। হিমু লস্করের বয়ান অনুযায়ী, তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, “ডাম্পারের ধাক্কায় পিষে মরতে হয়েছিল মলিন শর্মাকে, এবার আরও দুই-একটা সাংবাদিককে এভাবে মারতে হবে, এদের বার বেড়েছে।” পাশ থেকে আরেকজন সমর্থন করে বলল, “এটি উত্তম প্রস্তাব, এই কাজে আমার গাড়ি নিয়ে যা।” হিমু লস্কর কিছুটা প্রতিবাদ করলেও তিনি রাতের বেলা একা ছিলেন, খুব বেশি প্রতিবাদ গড়ে তোলা যায়নি। তবে রবিবার এব্যাপারে পুলিশের আধিকারিকদের কাছে জানানো হয়েছে, সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন হিমু লস্কর।

ঘটনাটি জানার পর থেকেই সংবাদ মহলে প্রচণ্ড ক্ষোভ দেখা দেয়। এর কারণ দুটো, প্রথমটা এভাবে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া এবং দ্বিতীয়ত প্রয়াত মলিন শর্মার নাম এনে কথা বলা। দুষ্কৃতিরা প্রকাশ্যে বলছে তারা জানে কোন গাড়ি মলিন শর্মাকে মেরেছিল। ঘটনার দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনও বলতে পারেনি কোন গাড়ি ঘটনাটি ঘটিয়েছিল, অপরাধীকে গ্রেফতার করা তো অনেক দূরের। ২০১৮ সালের ২৮ জুলাই রাত এগারোটা নাগাদ তারাপুরের ফায়ার ব্রিগেড কার্যালয়ের সামনে মৃত্যু হয়েছিল মলিন শর্মার। তৎকালীন পুলিশ সুপার মুগ্ধজ্যোতি দেবমহন্ত আশ্বাস দিয়েছিলেন অপরাধমূলক কাজে লাগাম টানতে শহরের প্রয়োজনীয় পয়েন্টে সিসিটিভি বসানো হবে, সেটাও শুধুমাত্র আশ্বাস হিসেবেই থেকে গেছে, বাস্তবে এর রূপায়নের কাজ কখনই শুরু হয়নি।

রবিবার পুলিশ বিভাগের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি দিলীপ কুমার দে, জেলাশাসক কীর্তি জল্লি, পুলিশসুপার বিএল মিনা সহ অনেকেই। সেখানে সাংবাদিকরা জড়ো হয়ে প্রথমে পুরো ঘটনাটি ডিআইজির কাছে তুলে ধরেন। পাশাপাশি সদর থানায় এব্যাপারে এজাহার দায়ের করেন হিমু লস্কর। ডিআইজি দিলীপ কুমার দে সঙ্গে সঙ্গে কাছাড়ের পুলিশ প্রশাসনকে এব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।

এরপর সাংবাদিকরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে উপস্থিত হন এবং সেখানে ঘটনাটি বিস্তারিত ভাবে বিএল মিনার কাছে তুলে ধরা হয়। উপস্থিত ছিলেন শিলচর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শংকর দে, বরিষ্ঠ সাংবাদিক সুবীর দত্ত সহ অন্যান্যরা। হিমু লস্করকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার ঘটনার পাশাপাশি কাটিগড়ার সাংবাদিক ইমাদ উদ্দিন মজুমদারের উপর হামলার ব্যাপারেও আলোচনা হয়। দুই ক্ষেত্রেই দোষীদের অতিসত্বর গ্রেফতার করার দাবি তোলেন সাংবাদিকরা।

কাটিগড়ায় সাংবাদিককে আক্রমণ করার ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ সুপার জানান, রবিবার রাতের মধ্যেই দোষীকে গ্রেফতার করা হবে। কাঁঠাল রোডে সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় শুধুমাত্র দোষীদের আটকানো নয়, বরং এলাকায় পুলিশ পাহারা বসানো হবে বলে আশ্বাস দেন বিএল মিনা। তিনি বলেন, “দুই ব্যাপারে আমরা অবগত এবং দোষীদের কোনওভাবেই রেহাই দেওয়া হবে না। কাটিগড়ায় ইতিমধ্যে আমাদের আধিকারিকরা দোষীকে শনাক্ত করে নিয়েছেন এবং রবিবার রাতের মধ্যেই গ্রেফতার করা হবে। তবে কাঁঠাল রোডে যেভাবে সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া হয়েছে এর পিছনে পুরনো একটি ঘটনার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতীতে আরেক সাংবাদিককে গাড়ির চাকায় পিষে প্রাণ দিতে হয়েছিল, হুমকির মধ্যে যেহেতু তার কথার উল্লেখ রয়েছে, আমরা দোষীদের গ্রেফতার করে পুরনো ঘটনার যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করব। হয়তো এতে একসঙ্গে দুটি ঘটনায় সাফল্য পাওয়া যাবে। তবে বারবার ঘটনা ঘটার পর আমরা তৎপর হবো, এমনটা নয়। যেহেতু এলাকায় কিছু লোক হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, আমরা সেখানে সন্ধ্যার পর থেকে আমাদের আধিকারিক মোতায়েন করব। টিপার বা ট্রাকের দৌরাত্ম নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আমরা আরও কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চলেছি। আগামীতে এসব জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে।”

বৈঠক সেরে বেরিয়ে এসে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শংকর দে বলেন, “শনিবারে একই দিনে একদিকে কাটিগড়া সাংবাদিককে হত্যার চক্রান্ত করা হলো এবং শিলচরের এক সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দেওয়া হল। সাংবাদিকদের সুরক্ষা এখন প্রশ্নের মুখে, অথচ প্রশাসন এব্যাপারে নীরব। আমরা কোনওভাবেই এই ঘটনাগুলো মেনে নিতে পারছিনা, আগামীতে প্রত্যেক সাংবাদিকের সুরক্ষার খাতিরে গর্জে উঠব।”

সামরিক প্রসঙ্গ পত্রিকা কর্ণধার এবং সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী তার পত্রিকার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হুমকির ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এক সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার সময় আরেক নিহত সাংবাদিকের প্রসঙ্গ টেনে আনা হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে অপরাধীরা একে অন্যের সঙ্গেই রয়েছে। মাফিয়ারা এত সাহস পাচ্ছে যে তারা পুলিশ বা সংবাদমাধ্যম দুটোকেই তোয়াক্কা করে না। প্রশাসনকে এব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত এবং সর্বতোভাবে সাংবাদিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব নেওয়া উচিত। এটা শুধু একজন বা দুজন সাংবাদিকের সুরক্ষার কথা নয়, সমাজে সংবাদমাধ্যম এবং বাক-স্বাধীনতার সুরক্ষার ব্যাপারও বটে।”

Comments are closed.

error: Content is protected !!