Also read in

কাছাড় থেকে কার্গিল: অপারেশন বিজয়ে শহীদ নন্দ চাঁদ সিংহের বীরগাথা; ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চায় তার ভাইপো ও

সেটা ছিল ১৯৯৬ সাল, শহীদ আই. নন্দ চন্দ সিংহ তখন ১৯ বছরের তরতাজা যুবক । তখনই এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন; সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে জাতির সেবা করতে হবে। যদিও তার বাবা-মা খুব দৃঢ়ভাবে তার এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন না, তবু তারা দেশের জন্য লড়াই করার স্বপ্নে তাকে বাধা দেয়নি।

শহীদ নন্দ চাঁদ শিলচর শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে লক্ষীপুরের একটি ছোট গ্রাম আওয়াংলেইয়ের বাসিন্দা।

যেমন ভাবা তেমন কাজ, ১৯৯৭ সালে জম্মু ও কাশ্মীরে তার প্রথম পোস্টিং হয়েছিল। সেখানে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি কাউন্টার ইন্সারজেন্সি ব্যবস্থায় অংশ নিয়েছিলেন। তিন বছরের প্রথম মেয়াদ শেষ করার পর, তিনি “অপারেশন বিজয়” এর অংশ হিসাবে কার্গিলে ‘পোস্টিং’ পেয়েছিলেন। ৩১৫ ফিল্ড রেজিমেন্টের একজন সিপাহী (জিডি) পদে যোগ দেন। পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে সীমান্তে প্রায় ৩ মাস যুদ্ধ করার পর, নন্দ চাঁদ “স্পিন্টার ইনজুরিতে” আহত হয়ে দেশের অখন্ডতা রক্ষা করতে শহীদ হন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর ।

তার বাবা-মা তার বীরত্ব, সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের কথা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আজও গর্বের সাথে উল্লেখ করেন। তার বাবা আই কেতামণি সিং এবং মা বেন্দা দেবী ৮৫ বছরের বেশি বয়সী এবং আজ তাদের ছেলের স্মৃতিকে সম্বল করে বেঁচে আছেন। লক্ষ্মীপুরের আওয়াংলেইয়ে তাদের গ্রামের বাড়িতে নির্মাণ করা একটি স্মারক, সমাধির পাথর এবং ইউনিফর্ম পরা তাদের ছেলের একটি ছবি আজ ও সবাইকে স্বাগত জানায়।

বেন্দা দেবী বলেন, “আমি কখনই আমার ছেলেদের তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করা থেকে বিরত করিনি কিন্তু সবসময় নিশ্চিত করেছি যে তারা সঠিক পথে রয়েছে। যখন আমার ছেলে নন্দ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় তখন আমি চিন্তিত ছিলাম তবে গর্বিতও বোধ করছিলাম। তার প্রথম মেয়াদ শেষ করার পর সে আমাদের সাথে ঠিকমতো সময় কাটাতেও পারিনি। আগের দিনে যোগাযোগ করা এতটা সহজ ছিল না, চিঠিগুলো আমাদের কাছে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগত। আমরা তার একটি চিঠি থেকে জানতে পেরেছিলাম যে তাকে কার্গিলে পোস্টিং করা হয়েছে এবং আমরা এতটুকুই জানতাম”। তখন ও টেলিভিশন এই প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে পৌঁছায়নি এবং তাই রেডিওর খবর থেকে মোটামুটি একটা খবরা খবর পেয়ে যেতেন। এই সীমিত তথ্য সত্বেও তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে সীমান্তের অবস্থা গুরুতর। মণিপুরীতে বেন্দা দেবী স্মরণ করেন যে তাদের ডাকঘরটিও খুব দূরে ছিল এবং একই সময়ে, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চিঠি পাঠানো এত সহজ ছিল না।

There are reports that state Martyr Jintu Gogoi is the only Kargil Martyr from Assam. Here is the martyrdom certificate of Martyr Nanda Chand Singha, Operation Vijay

তাদের ছেলের মৃত্যুর খবর তাদের কাছে সরাসরি পৌঁছায়নি কারণ তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য কোন টেলিফোন ছিল না। বেন্দা দেবী স্মরণ করেন, “লক্ষীপুর থানা থেকে পুলিশ আধিকারিকরা একদিন আমাদের গ্রামে এসে আমার স্বামীর নাম খুঁজতে থাকে। স্থানীয় লোকেরা তাদেরকে আমাদের বাড়ি দেখিয়েছিল এবং এভাবেই আমরা ওই দুঃখজনক বার্তাটি পেয়েছিলাম”। এই খবর তাদের হতভম্ব করে দিয়েছিল এবং তারা তখন কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। “সেনাবাহিনীর নির্দেশে, তারা আমাদের স্থানীয় থানা থেকে কার্গিল পর্যন্ত তার কমান্ড্যান্ট এবং সিনিয়র অফিসারদের সাথে কথা বলার জন্য একটি সরাসরি লাইন সেট করে। তারা আমাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং আমার ছেলের আত্মত্যাগের কথা ও বলছিল। সেনাবাহিনীও আমাদের পরিবারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছে৷” আজ ২৩ বছর পর এই দিনটির কথা স্মরণ করে বেন্দা দেবী কান্নায় ভেঙে পড়েন৷

“এরপর তার তিরঙ্গা পতাকায় মোড়া মরদেহ শিলচরে নিয়ে আসা হয়” এবং এই দিনের কথা বলতে গিয়ে শহীদের মা আরও বলেন, “আমাদের সেনাবাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছিল যে তার মরদেহ একটি ফ্লাইটে কুম্ভীরগ্রামে আনা হবে এবং সেই অনুযায়ী প্রায় পুরো গ্রাম তাকে গ্রহণ করতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ছেলে। আর্মি এবং তার রেজিমেন্ট আমাদের বাড়ির রাস্তা তৈরি থেকে শুরু করে আচার-অনুষ্ঠানে সাহায্য করা পর্যন্ত সবকিছু করেছে। আমরা তাদের কাছ থেকে নিঃশর্ত সাহায্য ও সমর্থন পেয়েছি এবং তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা সবাই আমাদের পরিবারের সাথেই ছিল”।

এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মানুষ এবং অনেক সেনা কর্মকর্তা তাদের বাড়িতে যান এবং তাদের সাধ্যমত সাহায্য করেন। পরিবার বলেছে, “যদিও তিনি কখনো দেশে ফিরে আসেননি, সেনাবাহিনী এবং সরকার তাদের যা যা করা সম্ভব করেছে”। তার সাহসিকতার জন্য, তাকে ৫০ তম স্বাধীনতা বার্ষিকীতে “সেনা পদক” দেওয়া হয়। অত্যন্ত বিষাদের সাথে পরিবারের সদস্যরা স্মরণ করেন যে, তার অন্ত্যেষ্টি অনুষ্ঠানের কথা একটি মাইকের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়েছিল এবং যতদূর মাইক পৌঁছেছিল সেখান থেকে জনগণ এই উপত্যকা এবং সমগ্র জাতির পক্ষে এই সাহসী হৃদয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল।

এই জাতীয় সাহসিকতা এবং জাতীয়তাবাদের চেতনা সম্ভবত পরিবারে সঞ্চারিত হয় এবং সেই কারণেই নন্দ চাঁদের ভাগ্নেও তার কাকার মতো সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে এবং জাতির সেবা করতে চায়।

পুনশ্চ. এই নিবন্ধটি Poireitomba Huidrom এর অবদান ছাড়া সম্ভব হতো না; তিনি কথোপকথনটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন।

Comments are closed.