Also read in

ঘর ছাড়া কুমারী মা খোলা মাঠেই করলেন সন্তান প্রসব, মারা গেল সদ্যোজাত শিশু

বাড়ির লোকেরা তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে, কুমারী মা তার সন্তানের বাবাকে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। এমন অবস্থায় প্রসব বেদনা নিয়ে প্রচন্ড শীতের রাতে খোলা মাঠেই পড়ে রইলেন। সেখানেই সন্তান প্রসব করলেন এবং চিকিৎসার অভাবে মাঠেই প্রাণ হারালো শিশুটি। এমন একটি ঘটনা ঘটেছে কাছাড় জেলার বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে সুকতলা এলাকায়।

এলাকাবাসীরা খবর দেওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীরা এসে মাকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছেন, তার চিকিৎসা চলছে। ঘটনার পর এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে কিন্তু মহিলাটি কিছুতেই সন্তানের বাবার নাম প্রকাশ করেননি। তবে জানা গেছে রিপন লস্কর নামের এক যুবক সন্তানটির বাবা। সে এখন শিলংয়ে রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে হঠাৎ তারা দেখতে পান মাঠের মাঝখানে এক মহিলা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেকেই সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে যান এবং দেখতে পান তিনি একটি সন্তান প্রসব করেছেন। ফুঁটফুঁটে সন্তানটি ঠান্ডায় জড়োসড়ো হয়ে গেছে এবং তার কোন নড়াচড়া নেই। তৎক্ষণাৎ তারা স্থানীয় চিকিৎসকদের খবর দেন এবং জানা যায় শিশুটি আর বেঁচে নেই। সন্তান প্রসব করা মহিলার স্বাস্থ্যও ভালো নয় এবং তিনিও ঠান্ডায় জড়োসড়ো। সন্তানটি মারা গেলেও মা-কে বাঁচাতে অনেকেই তৎপর হন। তার প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় এবং স্থানীয় সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে খবর দেওয়া হয়। পরে আসা কর্মীরা এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।

তবে সন্তানের মৃত্যুতে মা মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছেন। একইভাবে এলাকায় অনেকেই শোক ব্যক্ত করেছেন। এভাবে একজন অসহায় সন্তানসম্ভবা মা মাঠের মাঝখানে সন্তান প্রসব করেছেন এবং ফুটফুটে সন্তানকে জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই প্রাণ হারাতে হয়েছে, এতে কারো মন ভালো নেই। কুমারী মা-কে বারবার জিজ্ঞেস করলেও তিনি তার সন্তানের বাবার পরিচয় বলছেন না। তবে জিজ্ঞাসাবাদে এটুকু জানা গেছে তাকে সন্তানসম্ভবা অবস্থায় ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

ঘটনায় আবার প্রমাণ হয়েছে সমাজের একাংশ মানুষের মনোভাব কতটুকু নিম্নমানের। একজন সন্তানসম্ভবা জননী প্রসবের আগে মাঠের মাঝখানে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। কেমন হতে পারে সেই পরিবারের মানসিক দৈন্যতা। এক সন্তানসম্ভবা কুমারী মাকে এভাবে যন্ত্রণা ভোগ করতে একা ছেড়ে পালিয়ে গেছে সন্তানের বাবা রিপন লস্কর নামের লোকটি, কতটা কাপুরুষ হলে এমনটা করতে পারে কেউ, এমনটাই বলছেন এলাকাবাসীরা। যদিও কেউ কেউ মহিলার দিকেও আঙুল তুলছেন। তারা বলছেন, এমন অবস্থায় মাঠের মাঝখানে সন্তান প্রসব করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ভুল হয়েছে তার, অন্তত সন্তানের সুরক্ষার কথা ভেবে ভেবে এটুকু না করলে পারতেন তিনি। তবে পরিবার এবং সন্তানের বাবার কাছ থেকে স্বীকৃতি না পেয়ে কি ধরনের মানসিক যন্ত্রণায় তিনি ভুগছিলেন এটা শুধু তিনিই বলতে পারেন, অন্য কোনও ব্যক্তি সেটা উপলব্ধি করতে পারবেন না। স্বাস্থ্য কর্মীরা জানিয়েছেন মহিলা এখন শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠছেন তবে তার মানসিক যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।

Comments are closed.

error: Content is protected !!