পৃথক বরাকের ডাক দিলেন আকসার প্রতিষ্ঠাতা প্রদীপ দত্তরায়
এই অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙালি সহ অন্যান্য অনঅসমিয়া জনগোষ্ঠীগুলোর অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে পৃথক রাজ্য দরকার বলে মনে করেন বরাকের ছাত্র সংগঠন আকসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তথা গৌহাটি উচ্চ ন্যায়ালয়ের বরিষ্ঠ আইনজীবী প্রদীপ দত্তরায়।
বুধবার শিলচর সার্কিট হাউসে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তিনি তার দাবির কথা জানান। তিনি বলেন, বরাকের মানুষের সহ্য করার ক্ষমতার জন্যই এত বছর ধরে বিভিন্ন আঘাতের পরও এই উপত্যকা আসাম থেকে আলাদা হয়নি। বার বার আমাদের আঘাত করা হয়েছে, বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বরাকের মানুষের প্রতি ঘৃণা এবং বিদ্বেষের মনোভাব নতুন নয়। বরাক উপত্যকার মানুষ সহাবস্থানে বিশ্বাস করেন, তাই আমরা আলাদা হয়ে যাইনি। তবে এখন নাগরিকত্ব সমস্যাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে বরাক-ব্রহ্মপুত্র আর একসঙ্গে থাকতে পারবে না।
নাগরিকত্ব নবায়ন প্রক্রিয়া, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সহ যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠক ইত্যাদিকে ঘিরে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা বরাকের মানুষের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের প্রদর্শন করছে। আমাদের কথা বলার অধিকারও কেড়ে নিতে চাইছে রাজ্যে অধিক ক্ষমতাশালী দলগুলো। আসু থেকে আলফা, সবাই একজোট হয়ে অনঅসমীয়াদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। তারা কাছাড়কে (অবিভক্ত) আসামের ক্যান্সার বলেন। তাহলে এই ক্যান্সারকে কেটে বাদ দিয়ে দিলেই হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল এবং বিজেপি সরকারের অন্যান্য নেতারা আপ্রাণ চেষ্ঠা করছেন যাতে এই বিভাজন আটকানো যায়। মুখ্যমন্ত্রী ঘনঘন বরাকে আসেন, এঅঞলের খবর রাখেন। নমামী বরাকের মতো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে এক মঞ্চে আনার চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও বরাক এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় সমান উন্নতি সাধনের চেষ্টা করছেন। তবে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলোর সঙ্গে তিনিও পেরে উঠছেন না। এমন অবস্থায় বরাক উপত্যকাকে আসাম থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাজ্য হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। তিন জেলার পাশাপাশি ডিমা হাসাও, নগাও এসব জেলার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। জানতে হবে, তারাও অসম থেকে আলাদা হয়ে আমাদের সঙ্গে মিলে নতুন রাজ্য গঠনে এগিয়ে আসবেন কি না। আমরা বরাকের সব আন্দোলনে বড়োল্যাণ্ডের নেতাদের পাশে পেয়েছি, এই আন্দোলনেও তারা আমাদের সমর্থন করবেন। হয়ত তারাও দীর্ঘদিনের পৃথক বড়োল্যাণ্ড দাবি জোরালো করে একই সঙ্গে অসম থেকে বেরিয়ে যেতে চাইবেন বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তথা সিআরপিসিসির অধ্যক্ষ তপোধীর ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে গুয়াহাটিতে হওয়া মামলার তীব্র নিন্দা করেন তিনি এবং এব্যাপারে তপোধীর ভট্টাচার্যের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, দেশের আইন ব্যবস্থাকে আমরা সম্মান করি। তপোধীর বাবুর জামিন নেওয়া সহ মামলার নিষ্পত্তি পর্যন্ত সব ব্যাপারে আমরা সঙ্গে থাকবো। তবে এই ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। নিজেদের আক্রোশ মেটানোর জন্য দেশের আইনের অপব্যবহার করার চেষ্টা করছেন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একাংশ মানুষ যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
Comments are closed.