Also read in

অটল অমৃত যোজনার কার্ড থাকা সত্ত্বেও শিলচরের ত্রাণশিবিরে বিনা চিকিৎসায় ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলার মৃত্যু

ত্রাণশিবিরে মারা গেলেন ক্যান্সার আক্রান্ত এক মহিলা। নাম সপ্না কুর্মী। বয়স ৫০ বছর। রবিবার সকাল দশটা নাগাদ শিলচরের সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ত্রাণশিবিরে মহিলার মৃত্যু ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এর বরাক সফরে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করার সময় ত্রাণ শিবিরে আশ্রিত বন্যাক্রান্ত এই মহিলার মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।

মৃত স্বপ্না কুর্মীর জামাতা পিন্টু দাস জানান, গত বছর দুয়েক ধরে তার শাশুড়ি স্বপ্না কুর্মী ক্যান্সার রোগে ভুগছেন‌। স্বপ্না কুর্মীর বাড়ি শহরের ইটখলার রামকৃষ্ণ পল্লীতে। সেখানে তাদের নিজের বাড়ি রয়েছে। কিন্তু ভয়াবহ বন্যায় তাদের বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়ার পরে বাধ্য হয়ে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেন। পরিবারে স্বপ্না কুর্মীর স্বামী জগন্নাথ কুর্মী, দুই ছেলে, এক মেয়ে,নাতি-নাতনি রয়েছে। এক ছেলে গুয়াহাটিতে কর্মরত। স্বামী জগন্নাথ কুর্মী একজন ডায়াবেটিস রোগী। তারা সবাই বাধ্য হয়ে এই ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

বলা হয়েছে, আর্থিক অভাবে স্বপ্না কুর্মীর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। পরিবারের লোকেরা অভিযোগ করেছেন সরকারের দেওয়া অটল অমৃত যোজনার কার্ড থাকা সত্ত্বেও তারা কোনো আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাননি। এ ব্যাপারে পুরসভার চেয়ারম্যান বিধায়ক ও নেতা আমলাদের কাছে আর্জি জানানো সত্ত্বেও কোনো সাহায্য না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন।তারা আরো জানান, এর আগে ২০০৪ সালেও তারা বন্যায় আক্রান্ত হয়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রিত ছিলেন। তাদের মতে এবারও তারা বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হয়েছেন।

এদিকে স্বপ্না কুর্মীর মৃত্যুতে গোটা পরিবার শোকাহত। ত্রাণশিবিরে আশ্রিত অন্যান্য লোকেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন। ইতিমধ্যে পরিবারের লোকেরা আর্থিক সাহায্যের জন্য ব্যাপারটি জেলা শাসকের নজরে এনেছেন। এদিন দুপুর পর্যন্ত এই ত্রাণশিবিরে স্বপ্না কুর্মীর মৃতদেহ দেখতে কোনো নেতাকর্মী আসেনি। শিবিরের সবাই এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

স্বামী জগন্নাথ কুর্মী জানান, বর্তমানে তিনিও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে রয়েছেন। কাজকর্ম নেই, অর্থের অভাবে স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে না পেরে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। বিধায়কের বাড়িতে গিয়ে দেখা করতে পারেননি, কারণ বিধায়ক বাড়িতে ছিলেন না। চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে জানানো সত্ত্বেও খোঁজ নেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিন দিন আগে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সরকারি সাহায্য পাওয়ার আশায় ডিসির অফিস থেকে একটি ফর্ম এনেছিলেন। এখনো তা জমা দেননি। এই অবস্থায় স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় গোটা পরিবার শোকাহত। পরিবারের এই দুঃসময়ে সকলের কাছে সাহায্যের আর্জি জানান তিনি। শিলচরের ত্রাণশিবিরে এবার এটাই প্রথম কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো।

Comments are closed.