আসছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, শেষবারের মত মিজোরামের সঙ্গে কথা বলবে অসম: মুখ্য সচিব জিষ্ণু বড়ুয়া
লাগাতার কেন্দ্র সরকারের মধ্যস্থতায় বৈঠকের মাধ্যমে অসম এবং মিজোরামের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা মিটছেনা। এবার কেন্দ্র সরকারের সেনাবাহিনী পাঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা রওনা দিয়েছে এবং অতিসত্বর কাছাড় এবং করিমগঞ্জে সীমান্ত এলাকায় এসে পৌঁছাবে। এর আগে দুই রাজ্যের মুখ্যসচিব করে শেষবারের মতো আলোচনা হবে, এতে সমাধানসূত্র বেরিয়ে না এলে বাকিটা কেন্দ্র সরকার দেখবে, এমনটাই বললেন মুখ্যসচিব জিষ্ণু বড়ুয়া। মঙ্গলবার তিনি লায়লাপুর এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এরপর বুধবার সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি বসে কেন্দ্র সরকারের সেনা পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া সীমান্ত সমস্যার ঐতিহাসিক দিকগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, এসব ব্যাপারে দুই পক্ষকে মুখোমুখি বসে আলোচনা করতে হবে।
বুধবার দুপুর বারোটা নাগাদ কাছাড়ের জেলাশাসক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যসচিব। তার সঙ্গে ছিলেন ডিজিপি ভাস্কর জ্যোতি মহন্ত, ডিআইজি দিলীপ কুমার দে সহ পুলিশের বিভিন্ন আধিকারিকরা। এছাড়া বরাক উপত্যকার তিন জেলার জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার বৈঠকে যোগ দেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার আগে আধিকারিক স্তরে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে জিষ্ণু বড়ুয়া বলেন, “সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় একজন নিরীহ ব্যক্তির হত্যা হয়েছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এব্যাপারে পর্যাপ্ত তদন্ত করছি, এছাড়া পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে, আমরা সেটা নিয়েও আলোচনা করতে রাজি আছি। সর্বাবস্থায় শান্তি বজায় রাখা আমাদের প্রথম লক্ষ্য, এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্তরে বৈঠক হয়েছে। আমরা শুধু নিজেরা আলোচনা করিনি, পুরও ব্যাপারে কেন্দ্র সরকারের হস্তক্ষেপ রয়েছে। যেহেতু দুই রাজ্যই কেন্দ্র সরকারের অধীনে রয়েছে, আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই যেকোনও পদক্ষেপ নিতে পারি। মিজোরামের পুলিশ অসমের জমিতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বসে আছে। আমরা পাল্টা ব্যাবস্থা করে নিচ্ছিনা, তবে পরিস্থিতির উপর নজরদারি রয়েছে। এবার কেন্দ্র সরকার সীমান্ত এলাকায় তাদের বাহিনী পাঠাচ্ছে, বিশেষ করে এবং করিমগঞ্জ সংলগ্ন সীমান্ত এলাকার জন্য। আমাদের উপর নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী সক্রিয় হওয়ার আগে আমরা যাতে রাজ্যস্তরে আবার বৈঠক করি। এই বৈঠক দুই রাজ্যের মুখ্যসচিব স্তরের হবে। এতে সমাধানসূত্র বেরিয়ে না এলে আমরা কেন্দ্র সরকারের কাছে সেটা জানিয়ে দেব। পরবর্তী সিদ্ধান্ত তারা নেবেন।”
সীমা নির্ধারণ সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, “আপাতত কেন্দ্র সরকারের সার্ভে অফ ইন্ডিয়া দ্বারা নির্ধারিত সীমান্ত মেনেই আমরা চলছি। যদি এব্যাপারে কোনও অন্যমত থেকে থাকে, সেটা নিয়ে দুই পক্ষের আলোচনা হতে পারে। তবে এভাবে পুলিশ বাহিনী নিয়ে জমি দখল করার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবেনা।”
সোমবার মিজোরামের পুলিশ কাস্টডিতে অসমের নাগরিক ইন্তাজুল আলী লস্করের মৃত্যুর পর সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্য সচিব জিষ্ণু বড়ুয়া এবং ডিজিপি ভাস্কর জ্যোতি মোহন্ত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং মৃত ব্যক্তির বাড়িতেও যান। পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা করা পাঁচ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান তুলে ধরেন। এলাকায় পৌঁছে তারা মিজোরাম সরকারের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেন।
মুখ্যসচিব জিষ্ণু বড়ুয়া বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিবেশী ঠিক করতে পারিনা, যারা পাশে আছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে সহাবস্থানে থাকতেই হবে। আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা মিটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে হবে। তবে মিজোরাম যেভাবে অসমের জমি দখল করেছে এবং আমাদের রাজ্যের বাসিন্দাদের উপর হামলা চালাচ্ছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
তবে সীমান্ত এলাকায় অসমের মুখ্যমন্ত্রী পরিদর্শন করলেও মিজোরামের পক্ষ থেকে কোনও আধিকারিক সেই সময় উপস্থিত হননি। জানা গেছে সেখানে মানুষ এবং কিছু এনজিও স্থানীয় জেলাশাসককে আসতে বাধা দিয়েছিলেন। এদিকে অসমের জমিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অর্থনৈতিক অবরোধ চলছে। এপারের কোনও মালবোঝাই গাড়ি মিজোরাম যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরা এবং মনিপুর অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী মিজোরামে পাঠাতে সাহায্য করছে বলেও শোনা গেছে।
Comments are closed.