Also read in

চড়ক পূজা যেন বরাকবাসীর জন্য নববর্ষের প্রস্তুতিরই অঙ্গ

এতদঞ্চলে চৈত্রসংক্রান্তি মানেই চড়ক পূজা। সন্ন্যাসীরা একমাস কৃচ্ছসাধন করেন এরপরেই পূজা সম্পন্ন করেন। এক মাস ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিনের বেলা শিব গৌরীর নাচ এবং রাত্রিবেলা শিব গৌরী ও কালির নাচ অনুষ্ঠিত হয়। এর সাথে সাথে জনগণের কাছ থেকে দানও সংগ্রহ করা হয়। চড়ক পূজার আগের দিন গাছকে জল থেকে তুলে এনে পুজো করা হয় এবং একে মাঠের মধ্যে শক্তভাবে মাটিতে পুঁতে স্থাপন করা হয়। এটির উচ্চতা প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট। এই অনুষ্ঠানে যে দেবতাকে পূজা করা হয় তাকে বলা হয় অর্ধনারীশ্বর। এই মূর্তিতে অর্ধেক শিব এবং অর্ধেক পার্বতী থাকেন। মনে করা হয় যে প্রকৃতি এবং মানুষের সহাবস্থান কে কল্পনা করে এই মূর্তির রূপ দেওয়া হয়েছে।

 

 

শিলচরে এখন বেশ কয়েকটি স্থানে চড়ক পূজা হয়। এর মধ্যে আছে ইন্ডিয়া ক্লাবের পাশের মাঠ, চাঁদমারির মাঠ ,সুভাষ নগরের মাঠ প্রভৃতি। আজকের এই চড়ক পূজার অনুষ্ঠানে আমরা চিরাচরিতভাবে যা চলে আসছে তাই দেখতে পেলাম।প্রথমেই শিব গৌরী নাচ, কালির নাচ তারপরে একে একে দেখা গেল শরীরের নানা স্থানে লোহার শিক ঢুকানো এবং বড়শির কাটা গাঁথা । সাথে ছিল জলন্ত কয়লার আগুনের উপর নাচ। ধারালো দা এর উপর নাচ এবং মাটির নিচে এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে জীবন্ত মানুষকে পুঁতে রাখা। শরীরের কাটা গাঁথা এবং শিক বাধার ফলে এক বিন্দুও রক্ত কিন্তু বের হয় না, এটা কিছুটা হলেও আশ্চর্যজনক।

বৈজ্ঞানিকভাবে এর অনেক ব্যাখ্যা করা হয় কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা মনে করেন যে এতে অলৌকিক কিছুটা অবশ্যই আছে। এই দৃশ্যগুলি উপস্থিত জনগণের দেহে মনে শিহরণ জাগায়। ভারতবর্ষের অন্যান্য স্থান যথা ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গে চড়ক পূজাতে বড়শির কাঁটা বাধা নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের এই শিলচর তথা বরাক উপত্যকায় চড়ক পূজার এটি একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। হাজার হাজার মানুষ বড়শির কাঁটা বেঁধে চড়ক পূজার গাছে ঝুলার দৃশ্য দেখার জন্য সন্ধ্যে পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলেন। আজকের এই অনুষ্ঠানে আমরা এই সবগুলো ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম।

 

একই সাথে সবগুলো চড়ক পূজার অনুষ্ঠানে ছোটখাটো মেলা বসেছিল। ছোট ছোট শিশুরা এর থেকে অনেক আনন্দ লাভ করে।

Comments are closed.