Also read in

'প্রতিবেশীর মতো ব্যবহার করুক মিজোরাম, না হলে আমাদের কঠোর হতে সময় লাগবে না,' লায়লাপুরে মুখ্য সচিব

আমরা আমাদের প্রতিবেশী ঠিক করতে পারিনা, যারা পাশে আছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে সহাবস্থানে থাকতে হবে। একে অন্যের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা মিটিয়ে চলতে হবে। মিজোরাম যেভাবে অসমের জমি দখল করেছে এবং আমাদের রাজ্যের বাসিন্দাদের উপর হামলা চালাচ্ছে, এমনটা মেনে নেওয়া যায় না। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না হলে প্রয়োজনে মিজোরামের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে অসম সরকার, এমনটাই বললেন মুখ্যসচিব জিষ্ণু বড়ুয়া। অসম-মিজোরাম সংলগ্ন ফ্রেঞ্চ নগর এলাকার নিহত ইন্তাজুল আলী লস্করের বাড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি কথাগুলো বলেন। তার সঙ্গে ছিলেন ডিজিপি ভাস্কর জ্যোতি মোহন্ত। তিনি বলেন, “আমরা অনেক কিছু সহ্য করেও আলোচনার পক্ষে রয়েছি। আমরা অন্যায় করছিনা এবং অন্যায় মেনেও নেব না।”

মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের নির্দেশে মুখ্যসচিব জিষ্ণু বড়ুয়া মঙ্গলবার সন্ধ্যেবেলা অসম মিজোরাম সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এলাকায় এসে মিজোরামের পুলিশ কাস্টডিতে মারা যাওয়া অসমের বাসিন্দা ইন্তাজুল আলী লস্করের বাড়ি পরিদর্শন করেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “গত দুই সপ্তাহ ধরে অসম-মিজোরাম সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় যে ধরনের অশান্তি দেখা দিয়েছে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দুই রাজ্যের মধ্যে নিজস্ব সমস্যা বা অভিযোগ থাকতেই পারে। সেটাকে সামনে রেখে এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করার কোনও প্রয়োজন নেই। কেন্দ্র সরকারের নির্দেশে একের পর এক আধিকারিক এলাকা পরিদর্শন করছেন, আমরা আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাইছি। কিন্তু মিজোরামের পক্ষ থেকে বারবার সেটা লংঘন হচ্ছে, এবার এক ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। তারা যদি অসমের দখল করা জমি না ছাড়েন এবং এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করার মতো পদক্ষেপগুলো বন্ধ না করেন, তাহলে অসম সরকার বাধ্য হয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।”

কেন্দ্র সরকারের মধ্যস্থতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মিজোরাম সরকার অসমের জমি থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। তবে পরবর্তীতে তারা এটি নাকচ করে দেয়। সম্প্রতি মিজোরাম সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, অসমের জমি থেকে তারা পুলিশ বাহিনী সরাবেন না। এব্যাপারে জিষ্ণু বড়ুয়াকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমরা যথেষ্ট আলোচনা করেছি, তবে তারা যদি বারবার কথা না রাখেন, আমাদের বাধ্য হয়ে অন্যভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। আমাদের হাতে বাহিনী কম নয়, তাই আমাদের ভয় পাওয়ার বা মাথা নত করার কোনও কারণ নেই। আশা করি এই কথার অর্থ মিজোরাম সরকার বুঝবে।”

ডিজিপি ভাস্কর জ্যোতি মহন্ত বলেন, “আমাদের পুলিশ অত্যন্ত বিচক্ষণ এবং ভদ্রভাবে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। আমরা কেন্দ্র সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনায় রয়েছি। তবে অন্যায়ের মাত্রা ছাড়ালে আমরা চুপ করে বসে থাকব না। আমাদের রাজ্যের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, এব্যাপারে তদন্ত চলছে। মিজোরাম যদি আগামীতে এধরনের ব্যবহার বন্ধ না করে, আমরা কেন্দ্র সরকারের অনুমতি নিয়ে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে উত্তর দিতে প্রস্তুত।”

এদিন মুখ্য সচিবের সঙ্গে ছিলেন বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, সাংসদ রাজদীপ রায় সহ পুলিশ এবং সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। বনমন্ত্রী মৃতের পরিবারের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া অনুদানের পাঁচ লক্ষ টাকা তুলে দেন।

নিহত ইন্তাজুল আলী লস্করের মৃতদেহ মঙ্গলবার অসীম সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে মিজোরাম সরকার। এরপর শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত হয়েছে এবং সন্ধেবেলা মৃতদেহ জানাজার জন্য এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এলাকায় প্রায় এক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে ‘গো ব্যাক মিজোরাম’ স্লোগান দিচ্ছিলেন। অনেকেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ বলেন, “জনপ্রতিনিধিরা সমস্যা সমাধান করতে পারেন না শুধুমাত্র ভাষণবাজি করেন। তাদের চোখের সামনে মিজোরাম প্রথমে জমি দখল করেছে, এবার আমাদের মানুষ তুলে নিয়ে হত্যা করছে। অথচ আমাদের সরকার এবং পুলিশ আমাদের ন্যূনতম সুরক্ষা দিতেই পারছে না।”

এলাকাবাসীরা একসময় নিজেই রাস্তা বন্ধ করে মিজোরামকে অসমের জমি ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টা করেছেন। তবে এখনো সমস্যা সমাধানের দিকে এগোয়নি। মুখ্য সচিব এলাকায় এসে কড়া বার্তা দিলেও আগামীতে সরকার মিজোরামের কবল থেকে অসমের জমি ছাড়াতে কতটুকু কঠোর হবে, এটাই দেখার বিষয়।

Comments are closed.

error: Content is protected !!