কারও চোখ রাঙানি নয়, করোনার জন্যই বড়দিনে জনসমাগমের অনুমতি দিচ্ছেনা শিলচরের গির্জাগুলো
কোন ও দলের চোখরাঙানি নয়, করোনা ভাইরাসের জন্যই এই বছর সাধারণ মানুষের জন্য দরজা বন্ধ রাখছে শিলচরের প্রধান গির্জাগুলো। সম্প্রতি শিলংয়ে কেএসইউ সদস্যদের দ্বারা রামকৃষ্ণ মিশনের বিবেকানন্দ কালচারাল সেন্টারে তালা ঝোলানোর রেশ টেনে বজরং দল শিলচরে বার্তা দিয়েছিল, কোনও হিন্দু ব্যক্তি বড়দিনে গির্জায় গেলে মারধর করা হবে। তবে এবার শিলচর শহরের গির্জাগুলোই পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, বড়দিনে সাধারণ মানুষের জন্য তাদের দরজা প্রায় বন্ধ। এদিকে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক তবে গির্জার পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সুরক্ষা চাইলে সেটা অবশ্যই দেওয়া হবে। বড়দিন উদযাপন নিয়ে অনেকের চোখ রাঙ্গানি এবং অনিহা থাকলেও শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনে চিরাচরিত নিয়মে যীশু-পুজোও হচ্ছে।
শিলচর শহরের প্রধান তিনটি গির্জা হচ্ছে অরিয়েন্টাল বিদ্যালয়ের প্রেসবিটারিয়ান গির্জা, জেলাশাসক কার্যালয়ের কাছের ব্যাপটিস্ট গির্জা এবং সোনাই রোডের ক্যাথলিক গির্জা। প্রতিটি গির্জা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এবার গির্জার ভেতরই নিয়ম রক্ষার বড়দিন উদযাপন হবে তবে এতে সাধারণ মানুষের ঢোকার অনুমতি থাকবে না। কোনও কোনও গির্জায় বাইরে ‘নো এন্ট্রি’ পোস্টার লাগিয়ে দেওয়া হবে।
ক্যাথলিক গির্জার তরফে ফাদার জাস্টিন বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে মাথায় রেখে পৃথিবীর প্রায় সবকটা দেশেই এবছর বড়দিন উদযাপন সীমিত করা হয়েছে। আমরা চাইনা ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন করতে গিয়ে কোনও মানুষের ক্ষতি হয়। চিরাচরিত নিয়ম মেনে গির্জায় সীমিত অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে এবং এতে আমাদের ভেতরের লোকেরাই যোগ দেবেন। বড়দিন উদযাপনের জন্য সব ধর্মের মানুষ প্রতিবছর গির্জায় উপস্থিত হন, আমরা তাদের জোর করে বের করে দিতে পারব না। যাতে এমন পরিস্থিতি গড়েই না ওঠে যেখানে জনসমাগম সম্ভব, সেজন্য আমরা বড়দিনে গির্জার বাইরে ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড লাগিয়ে দেব।’
ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পাস্তর আইজাক আহমেদ বলেন, ‘বড়দিন উপলক্ষে চার্চের ভেতরে সীমিতভাবে একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে এতে ১০০ জনের বেশি যোগ দেবেন না। তবে চার্চের বাইরে মাঠে একটি এলইডির মাধ্যমে ভেতরের অনুষ্ঠান দেখানো হবে। সেখানে সীমিতভাবে দর্শকরা যোগ দিতে পারবেন এবং প্রত্যেকে কোভিড প্রটোকল মেনে চলবেন। সবাইকে পরিষ্কার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোনভাবেই যাতে নিয়ম লঙ্ঘন না করেন।’
প্রেসবিট্যারিয়ান চার্চের তরফে বেভারেন্ট জুবিন্তাক্ত লোয়াঙ্গে বলেন, ‘আমরা নিজেরা সীমিতভাবে যীশুর জন্মদিন উদযাপন করব কিন্তু সাধারণ মানুষকে এতে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিচ্ছি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভবিষ্যতে হয়তো আগের মতো বড়দিন উদযাপন হবে। তবে এই বছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে এবং আমরা কোনভাবেই উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে সংক্রমণের শরিক হতে চাইনা।’
বরাকের অন্যান্য গির্জাগুলোয় অনুষ্ঠান সীমিত ভাবেই করা হচ্ছে। তবে বজরং দলের হুমকির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তারা উত্তর দিতে রাজি হননি। কোভিড প্রটোকল থাকায় অন্য কোনও কথা আসছে না, এমনটাই তাদের বয়ান। কেউ কেউ আবার পরিষ্কার জানিয়ে দেন তারা এব্যাপারে জানেনই না, তাই মন্তব্য করার কোনও মানে হয় না। বজরং দলের একজন সদস্য বয়ান দিলেও বাকিরা পরবর্তীতে এব্যাপারে আর কোনও মন্তব্য করেননি। এমনকি কেউ বড়দিনে হিন্দুদের গির্জায় যেতে আটকানোর ব্যাপারে কোন তোড়জোড় এখনও শুরু করেননি।
এই বছর বড়দিনে গির্জায় অতিরিক্ত সুরক্ষা দেওয়া হবে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে ডিআইজি দিলীপ কুমার দে বলেন, ‘একটা বয়ানকে নিয়ে যেভাবে প্রচার হয়েছে আদতে ততটা খারাপ নয় আমাদের পরিস্থিতি। যেভাবে দুর্গোৎসব বা ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে আমরা সুরক্ষা দিয়ে থাকি, বড়দিন উদযাপনের ক্ষেত্রেও সমান সুরক্ষা থাকবে। সেদিন জেলায় অনেক বড় অনুষ্ঠান রয়েছে ফলে সুরক্ষা ব্যবস্থা আমরা আগে থেকেই অনেক শক্ত করে তুলেছি। এছাড়া গির্জাগুলো থেকে আমাদের কাছে অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য আবেদন জানানো হয়নি তাহলে জোর করে আমরা কেন পুলিশ ঢুকিয়ে দেবো। শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব উদযাপন হবে এবং কোন অশান্ত পরিস্থিতি দেখা দিলে আমাদের বাহিনী তৈরি থাকবে। এই বিষয়ে এর থেকে বেশি ভাবনার কিছু নেই।’
এদিকে শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনে অন্যান্য বছরের মতো এবারও যীশু-পুজো আয়োজিত হচ্ছে। তবে সেটা ২৫ ডিসেম্বর নয় তিথি মেনে একদিন আগে আয়োজিত হচ্ছে। সর্বধর্ম সমন্বয়ের এক অনন্য নজির হিসেবে রামকৃষ্ণ মিশনের মত হিন্দু মন্দিরে যিশুখ্রিস্টের পুজো আয়োজিত হয়।
Comments are closed.