পোস্টার নিয়ে বিভ্রাট, উত্তপ্ত মালুগ্রাম ঘনিয়ালা, পুলিশ বলছে, "সাম্প্রদায়িক নয়, ব্যক্তিগত ঝামেলা"
মালুগ্রাম ঘনিয়ালা এলাকায় রবিবার রাতে উত্তাল পরিস্থিতির গড়ে ওঠে, পুলিশ এবং সিআরপিএফ জওয়ানরা অনেক কষ্টে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। একসময় কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট হাওয়ায়ে চালাতে হয়েছে বলেও শোনা গেছে। পরিস্থিতি প্রায় সাম্প্রদায়িক রূপ নিচ্ছিলো। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর মুখে নানা ঘটনা শোনা গেছে। তবে পুলিশের তরফে পরিষ্কার বলা হয়েছে, “এটা ব্যক্তিগত ঝগড়া, এতে কোন সাম্প্রদায়িক উস্কানি নেই।” পাশাপাশি জানানো হয়েছে,সোমবার সকাল থেকে বৃহত্তর ইটখলা এলাকায় কারফিউ জারি করার সুপারিশ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার বিএল মিনা জানিয়েছেন, কয়েকজন যুবকের মধ্যে নিজস্ব ঝগড়া হঠাৎ করে একটু বেশি উত্তপ্ত পরিস্থিতি গড়ে তোলে, হয়তো একে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক ঘটনা ভেবে নিয়েছেন। এলাকায় দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা প্রায় সমান। ফলে এখানে অশান্তি দেখা দিলে একে সাম্প্রদায়িক বলে ধরে নেওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। এলাকাবাসীর কাছে শোনা গেছে, ছোটখাটো উত্তেজনা আগে থেকেই চলছিল। তবে এর বিভিন্ন দিক তদন্ত করে দেখা হবে। যদি কেউ অযথা উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এলাকাবাসীর একাংশ বলছেন ঘটনার সূত্রপাত শনিবার ঘটে। ঈদের সকালে কেউ একজন একটি সাম্প্রদায়িক পোস্টার লাগিয়ে দিয়েছিল। সেটা চোখে পড়া মাত্রই এলাকাবাসীরা নিজে থেকেই এটি সরিয়ে দেন এবং ঘটনার নিন্দা জানান। প্রাক্তন পুরকমিশনার তথা বিজেপি নেতা বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং এব্যাপারে বলেন, “শনিবার আমার কাছে এলাকার কিছু লোক এই ব্যাপারে খবর দিয়েছিলেন। এলাকায় মাংস বিক্রি নিয়ে একটা সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন উঠেছিল। আমি দুই পক্ষের অভিযোগকারীদের সঙ্গেই কথা বলেছি এবং তারা আমার কথা রেখে শান্ত হয়েছিলেন। তবে বিকেল নাগাদ আবার ছোটখাটো ঝগড়ার খবর পাই। আবার তাদের সঙ্গে কথা বলি এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। রবিবার রাতে ওই এলাকায় কয়েকজন যুবকের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে বলে খবর আসে। সম্ভবত নিজস্ব কোনও কারণেই এই ঝগড়াটি হয়েছিল। তবে কে বা কারা এই সূত্র ধরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অপপ্রচার করেছেন এটা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস রয়েছে পুলিশ সূত্র অবশ্যই খুঁজে বের করবে।”
বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আবার কেউ কেউ লিখেছেন, এলাকায় নাকি রাম মন্দিরের ভূমি পুজন অনুষ্ঠানের পোস্টার লাগাতে গেছিল দু’একটি যুবক। এতেই ঝামেলা বাঁধে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখা দেয়। তবে এব্যাপারে সরাসরি কেউ কথা বলেননি। রাজ্য পুলিশের দক্ষিণ আসাম রেঞ্জের ডিআইজি দিলীপ কুমার দে বলেন, “অকারনে এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার কোনও মানে হয় না। এখন এমনিতেই রাত সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত কারফিউ থাকে। আমরা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সোমবার পুরো দিন এলাকায় কারফিউ জারি রাখব। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এটা আগামীতে বৃদ্ধি করা হবে। তবে আমাদের সূত্রমতে পাওয়া খবর অনুযায়ী এটি একটি ব্যক্তিগত ঝগড়া।”
মালুগ্রাম থানার পক্ষ থেকে আনন্দ মেধি এবং তার সহকারি আধিকারিকরা উত্তেজনার খবর পেয়ে প্রথমে এলাকায় গেছিলেন। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে শুনে আমরা তাড়াতাড়ি সেখানে ছুটে যাই। একটা জায়গায় ঘটনা শুরু হলেও এলাকার বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর হয়েছে, দুষ্কৃতীরা একটি অ্যাম্বুলেন্স ভেঙে দিয়েছে, একটি যুবক কিছুটা জখম হয়েছে। তবে এর বেশি অশান্তি ছড়ায়নি। পুলিশ এবং সিআরপিএফ বাহিনী সময়মতো এসে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। আগামীতে এলাকায় কারফিউ থাকবে, এবং পুলিশের কড়া নজরদারিও থাকবে।”
শোনা গেছে ঘটনার পরবর্তীতে স্থানীয় কয়েকটি এলাকায় প্রচন্ড পাথর ছোড়া হয়েছে। অনেকেই নিজের ঘর ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র সরে যান। এদিকে পুলিশের আধিকারিকরা এলাকার গলি গলি ঢুকে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। ঘটনায় আর কেউ জখম হয়েছেন কিনা এটা পরবর্তীতে জানা যাবে। তবে এই লকডাউনের মধ্যেও কিভাবে এমন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিবেশ গড়ে উঠল এনিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন। তারা বলছেন, সরকারিভাবে ঘোষণা হওয়া লকডাউন- কার্ফুর সময় শুরু হওয়ার পরও কিভাবে এত বড় ঘটনা ঘটে, এটা আশ্চর্যের। এমন দুঃসময়ে আমরা শহরে হয়তো পুরোপুরি ভাবে সুরক্ষিত নই!
Comments are closed.