দ্বাদশ শ্রেণীর প্রশ্নপত্র ফাঁস: পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ তদন্ত কমিটির; বিশদভাবে আলোচনার জন্য কাউন্সিলের বৈঠক ২৯ মার্চ
প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রাথমিক রিপোর্ট আসার পর আসাম উচ্চতর মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (এ.এইচ.এস.ই.সি) এই বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক বি সি দাসকে কমিটির প্রধান পদে নিযুক্ত করা হয় এবং কটন ইউনিভার্সিটির তিনজন অনুষদ সদস্যকে বিষয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
কমিটি গত রাতে (১৯ মার্চ, ২০১৮) এ.এইচ.এস.ই.সিকে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে কমিটি উল্লেখ করেছে যে সায়েন্স অ্যাকাডেমির পরীক্ষার সঙ্গে কাউন্সিলের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মিল রয়েছে। কমিটি মনে করে যে এই মিলগুলিকে নেহাত কাকতলীয় হিসেবে গণ্য করা যাবে না। দাসের নেতৃত্বাধীন প্যানেল এই বিষয়ে একটি ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়েছে এবং একটি তদন্ত সংস্থা কর্তৃক তাৎক্ষণিক তদন্ত চালানোর পরামর্শ দিয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনে এ.এইচ.এস.ই.সিকে পুনরায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার পরামর্শ দিয়েছে, কারণ তারা মনে করে যে যারা এই অনুরূপ প্রশ্নপত্রগুলি পায়নি তাদের সঙ্গে অন্যায় করা হবে।
এরইমধ্যে এ.এইচ.এস.ই সি গোয়ালপাড়া স্থিত সায়েন্স অ্যাকাডেমির (জুনিয়র কলেজে) স্বীকৃতি বাতিল করেছে় এবং ঘোষণা করেছে যে এই বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করার জন্য এবং পুনরায় পরীক্ষা সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ২৯ মার্চ,২০১৮ তারিখে কাউন্সিল একটি বৈঠকের আয়োজন করবে।
বরাক বুলেটিনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কাউন্সিলের একজন সিনিয়র অফিসার আমাদের জানান যে কমিটি তাদের কাজ করেছে এবং কাউন্সিল এখন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন “আমরা ইতিমধ্যেই বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির স্বীকৃতি বাতিল করেছি”, যেটাকে তিনি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। “দেখুন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি, ফাঁস তখন হয় যখন হুবহু মুদ্রিত প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে পেয়ে যায়, এই ঘটনাটা একটু আলাদা সম্পূর্ণভাবে। সায়েন্স একাডেমির প্রশ্নগুলি হুবহু অক্ষরে অক্ষরে মিলেনি।আমরা বিষয়টি দেখবো এবং ন্যায্য তদন্ত নিশ্চিত করব। ”
তিনি মনে করেন, মুদ্রণের পর প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি,”কাউন্সিলের কাছে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, আমরা সব ব্যবস্থাগুলিকে আবার পরীক্ষা করে দেখেছি এবং কোনো কিছুতে আমরা নিরাপত্তা লঙ্ঘন দেখতে পাইনি”।
ইতিমধ্যে ছাত্র সংগঠন এবং অন্যান্য বিভিন্ন সংগঠন এই বিষয়ে একটি সিআইডি অনুসন্ধান দাবি করছে এবং সিআইডি তদন্ত যথেষ্ট না হলে সিবিআইকেও জড়িত করার কথা বলছে।১০ মার্চ,২০১৮ তারিখে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান যে কাউন্সিলের বিষয়টি এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করতে হবে, তিনি কাউন্সিলকে জীববিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করার জন্য বলেন এবং প্রয়োজনে হলে পরীক্ষাটি এক দুই দিনের জন্য পিছিয়ে দেবার কথা বলেন। জীববিজ্ঞান পরীক্ষা ১৭ মার্চ, ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল এবং তা স্থগিত করে ২৪ মার্চ ২০১৮ তারিখে আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শর্মা মনে করেন যে এ.এইচ এস.এই.সির প্রশ্নপত্র ফাঁস শিক্ষার্থীদের সরকার পরিচালিত মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তি করানোর একটি সহজ উপায়। আসামে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় (এ. এইচ.এস.এই.সি) প্রথম দশজন স্থানাধিকারীকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় কোনো প্রবেশিকা পরীক্ষা ছাড়াই। বিগত চার বছরে এ. এইচ.এস.এই.সির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিভিন্ন খবর এসেছে।
এই সব কিছু একটি আঞ্চলিক নিউজ চ্যানেলের প্রতিবেদন থেকে শুরু হয়। প্রতিবেদনটিতে সায়েন্স একাডেমির ‘টেস্ট পেপার’ এবং প্রকৃত প্রশ্নপত্রের মধ্যে অদ্ভুতভাবে থাকা সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়, যার পরে বিভিন্ন যুব সংগঠন, ছাত্র সংগঠন এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বিষয়টির সঙ্গে জড়িত হয়ে তার উচিত তদন্ত দাবি করে।
এটির সঙ্গে কে জড়িত, কিভাবে সায়েন্স একাডেমির প্রশ্নপত্রের সঙ্গে চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের এত মিল, এটি একটি অভ্যন্তরীণ চক্র ছাড়া কি সম্ভব, অনুসন্ধানকারী সংস্থাগুলির অনেক কিছু বের করার আছে,পরীক্ষা আবার অনুষ্ঠিত হতে পারে, আমরা ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ তারিখে এটি সম্পর্কে জানতে পারব। আপাতত দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা তাদের ছুটির পরিকল্পনাগুলি বাতিল করে পড়াশোনার কথা ভাবতে পারে।
Comments are closed.