মৈত্রী প্রকল্পের পাঁচটি অত্যাধুনিক থানা সহ ধলাইয়ে বায়ো-ডাইভারসিটি পার্কের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী
অসম সরকারের মৈত্রী প্রকল্পের অধীনে ৭৩টি পুলিশ থানাকে উন্নতমানের রূপ দেওয়ার কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রথম ধাপে বরাক উপত্যকার পাঁচটি থানাকে উন্নত করা হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে কাছাড়ের উধারবন্দ, জয়পুর ও ধলাই সহ বদরপুর এবং হাইলাকান্দি থানা। রবিবার এই পাঁচটি থানা উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। এছাড়া ধলাইয়ে বায়ো ডাইভারসিটি পার্কের উদ্বোধন করবেন তিনি। বনমন্ত্রকের অধীনে থাকা রাজ্যের মোট ২৪টি বায়ো ডাইভারসিটি পার্কের মধ্যে কাছাড়ের এই পার্কটি রয়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন। আগামীতে কাছাড় জেলার প্রথম চিড়িয়াখানাও গড়ে তোলার পরিকল্পনা ইতিমধ্যে নিয়েছে বনমন্ত্রী।
রবিবার এবং সোমবার কাছাড় বিজেপির নানা অনুষ্ঠান রয়েছে। সরকারি অনুষ্ঠান এবং দলীয় অনুষ্ঠানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী রবিবার রাতে কাছাড়েই থাকবেন। জেলা বিজেপির সদস্য সহ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, সাংসদ রাজদীপ রায়, বিজেপির জেলা সভাপতি কৌশিক রাই এবং দলের বরিষ্ঠ কর্মী নিত্যভূষণ দে শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেন। তারা দুই দিনের অনুষ্ঠান সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেন, “রবিবার সরকারিভাবে দুটো অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে, একটি উধারবন্দে এবং অপরটি ধলাইয়ে। এদিন দুপুর দেড়টায় বিশেষ বিমানে কুম্ভীর গ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে শিলচরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন এবং প্রথমে যোগ দেবেন উধারবন্দ থানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে; উধারবন্দ এবং জয়পুর থানার উদ্বোধন অনুষ্ঠান একই জায়গায় হবে। এরপর সোজা চলে আসবেন ধলাই সমষ্টিতে। সেখানে মৈত্রী প্রকল্পের থানার উদ্বোধন করার পাশাপাশি বায়ো ডাইভারসিটি পার্কের ও উদ্বোধন করবেন। এখানে অনুষ্ঠান শেষ করে রাতে শিলচরে থাকবেন এবং পরের দিন জেপি নাড্ডাকে বরণ করবেন।”
বায়ো ডাইভারসিটি পার্ক নিয়ে তিনি বলেন, “অসম এবং উত্তর-পূর্বের এক হাজারেরও বেশি বহুমূল্য গাছপালা এই পার্কে লাগানো হয়েছে, এদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক গাছ দেখেছি যেগুলো এখন প্রায় দেখাই যায় না, সেগুলো খুজে বের করা হয়েছে এবং এই পার্কে লাগানো হয়েছে। আগামীতে কাছাড়ে একটি চিড়িয়াখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে অনেক বিরল প্রজাতির পশুপাখিদের আমরা রক্ষা করতে পারব।”
ডিআইজি দিলীপ কুমার দে জানিয়েছেন, মৈত্রী প্রকল্পের অধীনে যে থানাগুলো গড়ে উঠেছে তাতে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সহ নানা সুবিধা। শুধুমাত্র পুলিশ নয়, সাধারণ মানুষ যখন থানায় কোনও কাজে যাবেন, তাদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে টেকনোলজির ব্যবহার আরও অনেক বেশি হবে এবং এক সময় অনলাইনে এফআইআর নেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে পৌঁছে যাবে পুলিশ বাহিনী। এই নতুন থানাগুলো নতুন যুগের সূত্রপাত করবে।”
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে প্রচারের দামামা বরাক উপত্যকা থেকেই বাজিয়েছিল বিজেপি, প্রধানমন্ত্রীর সফর দিয়ে সেটা শুরু হয়। এই ধারা বজায় রেখেই আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের দামামা আক্ষরিক অর্থে বরাক থেকেই বাজাতে চলেছে শাসক দল। ১১ জানুয়ারি শিলচর পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘বিজয় সংকল্প সমাবেশ’ নামে বিরাট সভা আয়োজন করেছে জেলা বিজেপি। এতে উপস্থিত থাকবেন দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি জগত প্রকাশ নাড্ডা, রাজ্যিক সভাপতি রঞ্জিত কুমার দাশ, মূখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল, নেডা চেয়ারম্যান ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সহ অন্যান্যরা। আরও একজন বড় মাপের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। কাছাড় জেলায় বিজেপি এবার সাতটি আসনে নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করার লক্ষ্য প্রচারে নামছে এবং এই সভা এরই অংশ।
জেলা বিজেপির কৌশিক রাই এব্যাপারে বলেন, ” রাজ্যে বিজেপির ১০০+ লক্ষ্যে যে প্রচার হবে এর আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত হচ্ছে এই সভা। রাজ্য বিজেপি বরাক উপত্যকাকে কতটুকু গুরুত্ব দেয় এটাও এর মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে। কাছাড় জেলায় এবার বিজেপি সবগুলো আসনে জয়ী হতে চলেছে। দলের তৃণমূলস্তরের কর্মীরা এত ভালো কাজ করছেন যে সাধারণ মানুষ বিজেপি ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল যেসব প্রকল্প জনগণের স্বার্থে চালু করেছেন তার সুফল একেবারে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিজেপির কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সভার মাধ্যমে আমাদের নির্বাচনী প্রচারের পরিকল্পনাও পরিষ্কার হবে।”
রাজদীপ রায় বলেন, “অতীতে নির্বাচনে বিজেপি ধীরে ধীরে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আমাদের দলের ভোট বৃদ্ধি হয়েছে। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে শুধু ভোট নয় আমাদের সিটও বাড়বে। আমরা সংকল্প নিয়েছিলাম প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর মূর্তি বানাবো, মাত্র ১৩০দিনের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। অথচ কংগ্রেস দল গত কুড়ি বছরে রাজীব গান্ধীর মূর্তি উন্মোচন করতে পারেনি। অতীতে তারা বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বেঁধে ছিলেন এবং বিফল হয়েছেন। আগামী বছর নির্বাচনের পর তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন।”
Comments are closed.