"সাধারণ মানুষ বোমা ছুড়ে মারেননা, এটা বড় কোনও দলের কাজ," লায়লাপুরে বিদ্যালয় ভাঙচুর নিয়ে বললেন ডিআইজি
বৃহস্পতিবার রাতে অসম-মিজোরাম সীমান্ত এলাকায় একটি বিদ্যালয়ে বোমা ছুড়ে মারা হয়েছে, এতে বিদ্যালয়টি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি অসম সরকারের চালিত বিদ্যালয় এবং রাজ্যের জমিতেই বানানো। বিদ্যালয়টিতে আক্রমণের পেছনে মিজোরামের জমিদখলকারি বাহিনীর হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রত্যেকেই। শনিবার সাংসদ রাজদীপ রায় এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। অসম পুলিশের সাউদার্ন রেঞ্জের ডিআইজি দিলীপ কুমার দে বলেন, এসব কাণ্ড সাধারণ মানুষের নয়, এর পেছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। তবে অসমের দখল করা জমি মিজোরামকে ছাড়তেই হবে।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বৈঠকের পর বৈঠক হয়েছে, কিন্তু অসম এবং মিজোরামের মধ্যে জমি বিবাদ মেটেনি। প্রায় তিন কিলোমিটার অসমের জমি দখল করেছে মিজোরামের পুলিশ বাহিনী। কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিকের উপস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মিজোরাম তাদের পুলিশ অসমের জমি থেকে সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও সেটা এখনও কার্যকরী হয়নি। বৈঠকের পর অসমের পক্ষ থেকে অনেকগুলো পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া হয়েছে, কিন্তু মিজোরাম পক্ষ কথা রাখেনি। এরইমধ্যে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ১৯৭১ সালে স্থাপিত একটি পাঠশালাকে বোমা মেরে গুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা।
ডিআইজি জানিয়েছেন, ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে এবং পুলিশ দুষ্কৃতীকে শনাক্ত করার কাজে লেগে গেছে। তিনি বলেন, “বোমা মেরে বিদ্যালয় উড়িয়ে দেওয়া সাধারণ মানুষের কাজ নয়। অত্যন্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুষ্কৃতীরা কাজটি করতে পারে। সীমান্ত সমস্যা সমাধানের বৈঠকে দুই রাজ্যের পক্ষ থেকেই শান্তি বজায় রাখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দিকে আমরা কড়া নজরদারি রাখছি তবু একটি বিদ্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হল। হয়তো এর পিছনে উদ্দেশ্য অন্য, হয়তো তারা চাইছে এলাকায় অশান্তি বৃদ্ধি পাক। বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল দুই রাজ্যের মধ্যে সংযোগকারী রাস্তা খোলা থাকবে এবং আটকে পড়া ট্রাকগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে। বৈঠকের পর আমরা এখন পর্যন্ত প্রায় ১২০০টি ট্রাক ছেড়েছি, এর মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মিজোরামে অবাধে প্রবেশ করেছে। অথচ তারা এখনও পুলিশ বাহিনী সরিয়ে নেয়নি। আমরা চাইব মিজোরামের পক্ষ থেকে সীমান্ত এলাকায় যেন আর কোনও অশান্তি ছড়ানো না হয়। দুই রাজ্য মিলেমিশে যাতে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা এবং শান্তি বজায় রাখতে পারি।”
শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। শনিবার তিনি একটি টুইট করে নিজের কথাগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এভাবে সরকারি বিদ্যালয় গুঁড়িয়ে দেবার চেষ্টা অত্যন্ত নিন্দাজনক। ১৯৭১ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছিল এবং এটি আসামের জমিতে রয়েছে। আমাদের রাজ্যের সম্পত্তি এভাবে কেউ বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সরকার বারবার চেষ্টা করছে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে। কেন্দ্র সরকারের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে, এরপরেও কেন মিজোরাম সরকার তাদের পুলিশ বাহিনী আমাদের জমি থেকে সরিয়ে নিচ্ছে না, এটা জানতে চাই।”
অসমের প্রায় তিন কিলোমিটার জমি দখল করেছে মিজোরামের পুলিশ বাহিনী। এনিয়ে গত বুধবার সকালে অসম এবং মিজোরামের গৃহসচিবের বৈঠক হয়, তবে এতে কোনও সমাধানের সূত্র বেরিয়ে আসনি। শেষপর্যন্ত কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধি সত্যেন্দ্র কুমার গার্গের মধ্যস্থতায় শিলচরে এদিন সন্ধ্যায় আরেক দফা বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে অসমের জমি থেকে পুলিশ বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেয় মিজোরাম সরকার। তবে সীমান্তবিবাদ সমস্যা পুরোপুরিভাবে মেটানো যায়নি। বৈঠকে শুধুমাত্র বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়।
সত্যেন্দ্র কুমার গার্গের মধ্যস্থতায় আয়োজিত বৈঠকে অসমের গৃহসচিব জ্ঞানেন্দ্র দেব ত্রিপাঠী এবং মিজোরামের গৃহসচিব পি লালবিয়াকসাঙ্গি অংশ নিয়েছিলেন। তবে এর পরের দিন মিজোরামের পক্ষ থেকে বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রায় অস্বীকার করা হয়। এমনকি মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরাম থাঙ্গা এব্যাপারে একটি টুইট করেন।
দুই রাজ্যের আধিকারিকদের মধ্যে বৈঠক নিয়ে সীমান্ত এলাকায় উৎসাহ ছিল, অনেকেই ভেবেছিলেন সমস্যার সমাধান হবে। সেটা না হওয়ায় তারা রেগে যান এবং জোর গলায় বলেন, সমস্যা সমাধান না হলে মিজোরামের কোনো ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে পরবর্তীতে কেন্দ্র সরকারের আশ্বাসের খবর পেয়ে তারাও ট্রাক চলতে বাধা দেননি। কিন্তু মিজোরামের পক্ষ থেকে একই মনোভাব দেখানো হচ্ছে না।
Comments are closed.