
ভারোত্তলক থেকে লোন বোলে সোনা জয়, হার না মানসিকতাতেই বাজিমাত করেছেন কমনওয়েলথে গৌরব অর্জন করা নয়নমণি
প্রত্যেক সাফল্যের পিছনে লুকিয়ে থাকে কঠিন পরিশ্রম। যে কোনও স্পোর্টস হোক না কেন, সাফল্য পেতে হলে কঠিন পরিশ্রম করতেই হবে। এর কোনও শর্টকাট নেই। লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। থাকতে হবে অদম্য লড়াই করার মানসিকতা। হার না মানসিকতা। যতই বাধা আসুক, লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে। তখনই মিলবে সাফল্য। এই মন্ত্রে বিশ্বাস করেই ২০০৮ সালে নিজের সফর শুরু করেছিলেন নয়নমণি শইকীয়া। এরপর নানা বাধা টপকে ২০২২ সালে পেলেন কেরিয়ার এর সবচেয়ে বড় সাফল্য।
এদেশে লোন বোল সম্পর্কে খুব কমেরই ধারণা রয়েছে। এবছর বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসের শুরুতে লোন বোলে যে ভারতের একটা দল অংশ নিচ্ছে, সেটা হাতে গুনা কয়েকজনেরই জানা ছিল। ফলে এমন একটা স্পোর্টসে পদকের আশা করা তো ছিল দিনের আলোতে স্বপ্ন দেখার মতই। তবে বড় কিছু করতে হলে নাকি স্বপ্নটাও বড় হতে হয়। নয়নমণি শইকীয়া এমনই এক স্বপ্ন দেখেছিলেন। যা বাস্তবে পরিণত হলো বার্মিংহাম গেমসে। লোন বোলে ঐতিহাসিক সোনা জিতল ভারত। আর সেই দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে সোনা জিতে দেশের মান বৃদ্ধি করলেন অসমের নয়নের ‘মণি’।
প্রত্যেক সফল খেলোয়াড়ের মতই নয়নমণির জীবনটাও উত্থান পতনে ভরা। তিনি শুরু করেছিলেন একজন ভারোত্তলক হিসেবে। তবে পিঠের চোটের জন্য সেটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। চোট থেকে বাঁচতে তিনি বেছে নেন লোন বোল কে। সেটা ২০০৮ সালের কথা। তখন গুটিগুটি পায়ে এদেশে হাঁটতে শিখছে লোন বোল। কাজেই ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে নয়নমনিকে।
অসমের এই সোনা জয়ী এথলিট রবিবার এসেছিলেন লক্ষীপুরে। এম এল এ কাপ লক্ষীপুরের ফাইনালের প্রধান অতিথি হিসেবে। সেখানেই ক্যারিয়ারের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন নয়নমণি। বলেন, ‘২০১০ দিল্লি কমনওয়েলথ গেমস এর জন্য জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু ডাক পাবার পর আমার বড় ভাই মারা যান। ফলে ফেডারেশন আমার মানসিক চাপের কথা চিন্তা করে আমায় স্ট্যান্ড বাই করে দেয়। সেবার আর আমার পক্ষে গেমসে খেলা সম্ভব হয়নি। তবে হার মানিনি। ভেঙ্গে পড়িনি। বরং নতুন উদ্যমে শুরু করি।’ তিনি আরো বলেন, ‘২০১১ সালে ন্যাশনাল গেমস হয়েছিল ঝাড়খণ্ডে। সেবার আমি দুটি সোনা জিতেছিলাম। এই পারফরমেন্সের সুবাদে আমি ডাক পেয়ে যাই ২০১৪ কমনওয়েলথ গেমসে।’
২০১৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নয়নমনি। ২০১৬ সালে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তখন শারীরিকভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল সোনা জয়ী এথলিট কে। খুবই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন নয়নমনি। এরমধ্যে তিনি এমন একটি স্পোর্টস কে বেছে নিয়েছিলেন যেখানে ফেডারেশন ও ছিল আর্থিকভাবে দুর্বল। ফলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রতিটি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে এই অসম কন্যাকে। তবে তিনি লড়াই থেকে সরে যাননি। জাতীয় স্তরের ধারাবাহিক পারফরমেন্সের পর আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভালো পারফর্ম করেন তিনি।
নয়নমনির আশা, বার্মিংহামের সোনা জয় লোন বোল কে এক নতুন দিশা দেখাবে। তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন আমাদের নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হতো। অনেকে তো জাতীয় দলে ডাক পেয়েও অর্থের অভাবে সরে দাঁড়াতো। আশা করি এবার চিত্রটা বদলাবে।’ আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এতটা বছর ধরে লড়াই করার পরও এ বছর কমনওয়েলথ গেমসে কোচ ছাড়াই নামতে হয়েছিল নয়নমনিদের।
এ রাজ্যে লোন বোলে র সম্ভাবনা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে নয়নমনি বলেন, ‘দেখুন, যে কোন স্পোর্টসে সাফল্য আসতে হলে ভালো পরিকাঠামো দরকার। আমাদের রাজ্যে তো লোন বোলে-র মাঠই নেই। শুধু একটি মাঠ রয়েছে। আশা করি শীঘ্রই এ রাজ্যে আরও মাঠ তৈরি হবে।’
Comments are closed.