সীমান্তে মিজো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আকসার ডাকা বনধ সমর্থন করছে না বিজেপি সহ কোনও গেরুয়া সংগঠন
মিজোরামের দ্বারা অসমের জমি অধিগ্রহণ এবং অসমবাসীদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে ১২ ঘন্টার বরাক উপত্যকা বনধের ডাক দিয়েছে ছাত্র সংগঠন আকসা। তাদের ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার এতে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস দল সহ কয়েকটি সংগঠন। তবে বন্ধের সমর্থন করছে না বিজেপি সহ কোনও গেরুয়া সংগঠন। বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, তারা এধরনের বনধ সমর্থন করেন না, এমনকি তারা বনধের ব্যাপারে অবগতও নন। বেশ কিছু সংগঠন এই বন্ধের ডাকে সাড়া দিলেও এদের সমর্থন করছে না সরকার পক্ষে থাকা বিজেপি দল। তাদের বয়ান, “সীমান্ত বিবাদে বরাক উপত্যকার সাধারণ মানুষের কোনও অবদান নেই। যেটা হচ্ছে সেটা মিজোরামের পক্ষ থেকে হচ্ছে, তাই বনধ ডেকে উপত্যকার সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করার কোনও মানে হয় না।”
গত একমাস ধরে বরাক উপত্যকার তিন জেলায় থাকা মিজোরাম সংলগ্ন এলাকায় লাগাতার জমি দখলের প্রয়াস চালাচ্ছে মিজো বাহিনী। সম্প্রতি লায়লাপুর এলাকার এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে হত্যা করা হয়। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং বিজেপি এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং কেন্দ্র সরকারের বাহিনীও এসে পৌঁছে গেছে, তবে অসমের দখল করার জমি ছাড়তে নারাজ মিজোরাম। স্থানীয় মানুষ সীমান্ত এলাকায় প্রায় ১০দিন ধরে অর্থনৈতিক অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে অসমে অর্থনৈতিক অবরোধ চললেও মনিপুর এবং ত্রিপুরা রাজ্য থেকে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী সরবরাহ পাচ্ছে মিজোরাম। এবার এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বরাক উপত্যকার তিন জেলায় ১২ঘণ্টার বন্ধ ঘোষণা করেছে ছাত্র সংগঠন আকসা।
সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তারা বনধ ঘোষণা করেছিলেন। এরপর বেশ কয়েকটি সংগঠন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে কাছাড় জেলা কংগ্রেস। শুক্রবার কংগ্রেসের তরফে বলা হয়, তারা এই বন্ধের নৈতিক সমর্থন করছেন। তবে বনধ সফল করতে কোনও কংগ্রেস কর্মী মাঠে নামবেন না। দলের তরফে অভিজিৎ পাল বলেন, “বিজেপি সরকারের ব্যর্থতার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে অসম-মিজোরাম সীমান্ত সমস্যা সমাধান না হওয়া। আমাদের রাজ্যের মানুষ দিনের পর দিন হেনস্থা হচ্ছেন, তাদের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে, অথচ চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছে বিজেপি সরকার। আমাদের রাজ্য কমিটির কয়েকজন সদস্য এবং জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেবের নেতৃত্বে আগামীতে লায়লাপুর পরিদর্শন করা হবে। আমরা এই বনধের নৈতিক সমর্থন করছি।”
বিজেপি সহ কোনও গেরুয়াপন্থী সংগঠনই বনধের সমর্থন করছে না। কাছাড় জেলা বিজেপির সভাপতি কৌশিক রাই জানিয়েছেন, তারা এই বনধ নিয়ে অবগত নন এবং এর সমর্থন করছেন না। তিনি বলেন, “রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার সমস্যার সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আমাদের পুলিশ লাগাতার এলাকায় থেকে মানুষের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি কেন্দ্রের সেনাবাহিনী পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে। এরপর এভাবে অযথা বনধ ডেকে সাধারণ মানুষের জন্য পরিস্থিতি কঠিন করে তোলার কোনও মানে হয়না।”
একই সুরে করিমগঞ্জ জেলা বিজেপির সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা তো জানিইনা কোনও বনধ হচ্ছে বলে। মিজোরামের সঙ্গে জমি বিবাদ আজকের নয়, বহু দশক ধরে এই সমস্যার সমাধান হয়নি। অতীতের সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজটি করেনি, ফলে আজ আমাদের ভুগতে হচ্ছে। আমাদের সরকার যথাসম্ভব চেষ্টা করছে সমস্যা সমাধান করে এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর নয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিক নিজে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আমরা সরকারের কাজে বিশ্বাসী। এধরনের বনধ ডেকে কোনও সমস্যার সমাধান হবার নয়, সীমান্ত বিবাদে সাধারণ মানুষের কোনো হাত নেই। তাহলে অযথা বন্ধের নামে কেন তাদের হেনস্থা করা?”
Comments are closed.