"এআইইউডিএফ সাম্প্রদায়িক মনোভাব দেখালে যেকোনও মুহূর্তে তাদের সঙ্গে আঁতাত ভেঙে দেবে কংগ্রেস" বললেন ক্যাম্পেইন কমিটির চেয়ারম্যান
আসন্ন নির্বাচনে বিজেপিকে রুখতে একদিকে যেমন সাম্প্রদায়িক তকমা পাওয়া এআইইউডিএফের সঙ্গে আঁতাত করছে কংগ্রেস, একই সঙ্গে নিরপেক্ষ রাজনীতির ধ্বজাধারী কিছু বাম দল এবং রাজ্যের বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে নিয়ে মহাজোট গড়েছে কংগ্রেস। তবে দল এবং জোটের ধর্মনিরপেক্ষ ছবি অক্ষুন্ন রাখতে যেকোনও সময় এআইইউডিএফের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিতে দ্বিধাবোধ করবে না কংগ্রেস, এমনটাই বললেন বিধানসভা নির্বাচনে প্রদেশ কংগ্রেসের ক্যাম্পেইন কমিটির চেয়ারম্যান তথা নগাঁওয়ের সাংসদ প্রদ্যুৎ বরদলৈ। বৃহস্পতিবার ধলাইয়ে জনহুংকার র্যালিতে দলের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বরাকে আসেন তিনি। শুক্রবার গুয়াহাটি ফিরে যাওয়ার আগে শিলচরে কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেন। তার সঙ্গে ছিলেন শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ তথা জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেব, প্রদেশ কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক নব তালুকদার সহ জেলা কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে নিজেদের পরিকল্পনার কথা আলোচনা করেন উপস্থিত নেতৃবৃন্দ। তারা বারবার সাম্প্রদায়িক বনাম ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের ব্যপারে কথা বলছিলেন। তাদের জোটের মিত্র দল এআইইউডিএফ বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে নিজেদের ধর্মীয় অবস্থান স্পষ্ট করেছে, অনেকেই দলটিকে সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যা দেন। এতে জোটের ধর্মনিরপেক্ষতা কতটুকু অক্ষুন্ন রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রদ্যুৎ বরদলৈ বলেন, “প্রথমত কোনও দল, সংগঠন বা ব্যক্তি যদি নিজের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য কাজ করে, তাকে সাম্প্রদায়িক বলা চলে না। ধর্মকে সামনে রেখে সমাজে যদি কেউ অশান্তি ছড়ায়, সেটা সাম্প্রদায়িকতা। দ্বিতীয়তঃ আমরা যদিও এআইইউডিএফের সঙ্গে জোটে থেকে নির্বাচনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এমনটা নয় আমাদের চোখ-কান বন্ধ থাকবে। যদি এমন কোনও মুহূর্ত দেখা দেয় যেখানে এআইইউডিএফ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়াতে শুরু করে, আমরা তাদের সঙ্গে আঁতাত ভেঙে দেব।”
জোট এবং সিট্ বাটোয়ারা প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরা বলেছিলেন, “শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়, তাই এআইইউডিএফ, সিপিআই, সিপিআইএমএল, সিপিএম, আঞ্চলিক গণমোর্চা ইত্যাদি বিজেপি-বিরোধী দলের সঙ্গে আঁতাত হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের একটাই লক্ষ্য, আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে দিসপুরের মসনদ থেকে হঠাতে হবে। রাজ্যের ১২৬টি আসনের প্রত্যেকটির জন্য আমাদের কাছে ৫ থেকে ৬ জন যোগ্য মুখ রয়েছে। ফলে আলোচনার পরেই আমরা তালিকা প্রকাশ করব। কংগ্রেস একটি হাইকমান্ড-ভিত্তিক দল, আমরা পর্যাপ্ত আলোচনার পরেই প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করব। যাদের নিয়ে মহাজোট হয়েছে, তাদের সঙ্গে সিট বাটোয়ারা নিয়ে এখনও কথাবার্তা শেষ হয়নি। আমরা অনেক যোগ্য প্রার্থী পাচ্ছি এবং নির্বাচনের ফলাফল এবার পুরোপুরি নতুন হবে।”
শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে অসম চুক্তির ৬-নম্বর ধারা বাস্তবায়ন এবং এর ব্যবহার করে রাজ্যে বাংলাদেশ সম্প্রদায়কে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখার বিজেপির পরিকল্পনা, ইত্যাদি নানান বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রদ্যুৎ বরদলৈ বলেন, “সারা রাজ্যের প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার কথা মাথায় রেখেই অসম চুক্তি বানানো হয়েছিল, এতে আমাদের রাজ্য শান্ত হয়েছিল। আসু চাইছিল ভিত্তি বর্ষ ১৯৫১ সাল হোক আর ইন্দিরা গান্ধী চাইছিলেন ভিত্তি বর্ষ ১৯৬৭ সাল হোক। ইন্দিরা গান্ধীর সিদ্ধান্তের অন্যতম শক্তিশালী সমর্থক ছিলেন সন্তোষ মহোন দেব। শেষমেষ ১৯৭১ সালের ২১ মার্চকে ভিত্তি রেখে অসম চুক্তি বানানো হল এবং এতে প্রত্যেকে রাজি হলেন। বিজেপি সরকার প্রথমে অসম চুক্তির মূল ভিত্তি ভেঙে দিয়ে পুনরায় ১৯৫১ সালকে ভিত্তি বর্ষ করার দাবি তুলছে। অথচ একই সঙ্গে ৬-নম্বর ধারা ব্যবহার করে রাজ্যের বাঙালি সম্প্রদায়কে ভয় দেখাচ্ছে। আমরা জনগণকে বিজেপির এই দ্বিচারিতার ব্যপারে স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দেব।”
শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়কে উদ্দেশ্য করে প্রদ্যুৎ বলেন, “আপনারা আজকাল শিলচরে মাল্টিমডেল লজিস্টিক পার্ক নিয়ে অনেক প্রচার করছেন। আমরা সরকারে থাকাকালীন ‘কালাদান মাল্টি মডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট’-য়ের মাধ্যমে বরাক উপত্যকাকে সরাসরি কলকাতার সঙ্গে জলপথে জুড়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলাম। প্রকল্পটি অনেক এগিয়ে যাওয়ার পরেও আমরা সরকারে না থাকায় এখন প্রায় বন্ধ। যদি বরাক উপত্যকার মানুষের সত্যিই ভাল চান তাহলে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এত ভাল একটি প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে উদ্যোগ নিন।”
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদ্যুৎ বরদলৈয়ের কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্নভাবে বিজেপি সরকারকে দোষারোপ করেন সুস্মিতা দেব। তিনি বলেন, অসম চুক্তির মূল ব্যাখ্যা করে রাজ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। গত পাঁচ বছরে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করার বদলে তারা উল্টো পথে ভোটের লড়াই নড়তে চাইছে।”
Comments are closed.