Also read in

শীতের মরশুমেই পাইলিং এর কাজ শেষ করুন, বালাছড়া-হারাঙ্গাজাও মহাসড়কের নির্মাণ কার্য নিয়ে এন এইচ আই ডি সি এল- সুসি ইনফ্রাস্ট্রাকচার কে কড়া বার্তা দিলেন সাংসদ রাজদীপ

 

৮ অক্টোবর : বালাছড়া থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত ২৫.১৫ কিলোমিটার মহাসড়কের কাজের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এন এইচ আই ডি সি এল এবং সুসি ইনফ্রাস্ট্রাকচারের আধিকারিকদের সঙ্গে এক বৈঠক করলেন শিলচরের সাংসদ ডা রাজদীপ রায়। গতকাল মহাসড়কের কাজের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে এন এইচ আই ডি সি এল এবং বরাত প্রাপ্ত কন্ট্রাকটর সুসি ইনফ্রাস্ট্রাকচারের শীর্ষ আধিকারিকদের নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান শিলচরের সাংসদ। তিনি এন এইচ আই ডি সি এলের জি এম কর্নেল পুরজা, প্রজেক্ট ম্যানেজার শংকর সংকল্প এবং সুসি ইনফ্রাস্ট্রাকচারের শীর্ষ আধিকারিক আবু তাহেরকে সাফ জানিয়ে দেন, শীতের মরশুমেই পাইলিং এর কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।

শুক্রবার বিলপার স্থিত নিজের বাড়িতে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বালাছড়া-হারাঙ্গাজাও মহাসড়কের ২৫.১৫ কিলোমিটার অংশের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন শিলচরের সাংসদ। তিনি জানান, দুমাস আগে কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে তার নেতৃত্বে একটি দল বালাছড়া-হারাঙ্গাজাও গিয়েছিল। তবে এই মুহূর্তে কাজ কতটুকু এগিয়েছে, সর্বশেষ পরিস্থিতি কি, সেটা জানার জন্যই তিনি বরাত প্রাপ্ত কন্ট্রাক্টর এবং এন এইচ আই ডি সি এলের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। শিলচরের সাংসদ বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হলে আসন্ন শীতের মরশুমকে কাজে লাগাতেই হবে। এই মুহূর্তে আমাদের সম্পূর্ণ ফোকাস রয়েছে বালাছড়া থেকে হারাঙ্গাজাও পর্যন্ত ২৫.১৫ কিলোমিটার অংশে।’ সাংসদ রাজদীপ বলেন, ‘চুক্তি অনুসারে কাজের ১০ শতাংশ সম্পূর্ণ করার কথা ছিল ১৩.০৭.২০২০। এটা হয়েছে। পরবর্তী ধাপ হচ্ছে ৩৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে হবে এবছর ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে। এটা অর্জন করতে হলে পাইলিং এর কাজে গতি আনতে হবে। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি সেই অনুসারে শীতের মরশুমে পাইলিং এর কাজ সম্পূর্ণ না হলে সমস্যা দেখা দেবে। কারণ আগামী বছর মার্চের পর বৃষ্টি নেমে যাবে। ফলে বাধাপ্রাপ্ত হবে পাইলিংয়ের কাজ। তাই মাটির নিচ থেকে মাটির স্তর পর্যন্ত পাইলিং ও পাইল ক্যাপ এর কাজ যদি সম্পূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে কাজের গতি অনেকটাই বেড়ে যাবে।’

সাংসদ জানান, পাইলিং এর কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তিনি বরাত প্রাপ্ত সংস্থাকে একটা টার্গেট ফিক্সড করে দিয়েছেন। সেটা হচ্ছে দুর্গ পুজোর পর থেকেই দিনে কুড়িটি পাইলিং সম্পূর্ণ করতে হবে। ‌ এজন্য ইতিমধ্যেই একটি বড় মেশিন এসে গেছে। ‌ সড়কপথে আরো চার-পাঁচটি বড় মেশিন আসার কথা রয়েছে। ‌ সেগুলি এসে গেলে পাইলিং এর কাজে গতি বেড়ে যাবে। বালাছড়া-হারাঙ্গাজাও অংশে মোট ৯৬টি কালভার্ট নির্মাণ করার কথা। এরমধ্যে ৬৩ টির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। তিনটির কাজ চলছে। বাকি গুলোর কাজ এখনো বাকি। ‌ এই অংশে সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হচ্ছে বড় ব্রিজের সংখ্যা। মোট ৯টি বড় ব্রিজের মধ্যে ৭ টিতেই এখনো হাত দেওয়া হয়নি। শুধু দুটির কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সাংসদ বলেন, ‘এই বালাছড়া-হারাঙ্গাজাও অংশে বড় ব্রিজ গুলির কাজ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। এখনো সেভাবে পাইলিং ওই আরম্ভ হয়নি। ‌ এজন্যই আমি মহা সড়কের নির্মাণ সংস্থা এবং এই অংশের বরাত প্রাপ্ত সংস্থাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছি, দ্রুত পাইলিংয়ের কাজ শুরু করতে হবে। একবার মাটির কাজ শেষ হয়ে গেলে বর্ষার মরশুমে অন্য কাজ করা যাবে। তবে পাইলিং শেষ না হলে বর্ষা এসে গেলে বিরাট সমস্যা হবে।’

এই অংশে ছোট ছোট ব্রিজ রয়েছে মোট ২২টি। এর মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে। বারোটির কাজ চলছে। আর বাকি সাতটিতে এখনো হাত দেওয়া হয়নি। বালাছড়া-হারাঙ্গাজাও অংশে ড্রেন হবে ২৬.১ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৯.৭৭ কিলোমিটার সম্পূর্ণ হয়েছে। ড্রেনের সঙ্গে প্রটেকশন দেওয়ালের কাজও প্রায় অর্ধেকের বেশি বাকি। শিলচরের সাংসদ আশাবাদী, বালাছড়া-হারাঙ্গাজাও অংশের কাজ শেষ হয়ে গেলে মহাসড়কের বাকি অংশ সম্পূর্ণ হতে তেমন সমস্যা হবে না। সাংসদ রাজদীপ এটা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাতে মহাসড়কের কাজ শেষ হয় সেজন্য তিনি সব ধরনের চেষ্টা করছেন।

এদিকে, কদিন আগেই সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় কে কটাক্ষ করেছিলেন। সুস্মিতার বক্তব্য ছিল, শিলচরের সাংসদের একটাই কাজ, তা হচ্ছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে বিমানবন্দরে রিসিভ করা। এছাড়া কোনও কাজই শিলচরের সাংসদকে দেখা যায় না। এদিন এর জবাব দেন সাংসদ রাজদীপ। তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া সুস্মিতাকে একহাত নিয়ে বলেন, ‘যারা স্বার্থের লোভে একদল ছেড়ে অন্য দলের হাত ধরেছে, তাদের কাছ থেকে আমার কোনো সার্টিফিকেটের দরকার নেই। আমার কাজের বিচার জনগণ করবেন। আমি নিজের আড়াই বছরের কার্যকালে এখন পর্যন্ত যা কাজ করেছি তার সঙ্গে প্রাক্তন সাংসদের আড়াই বছরের কাজকর্ম খতিয়ে দেখলেই সবকিছু জলের মত পরিস্কার হয়ে যাবে। আমার কার্যকালে শিলচরে চিকিৎসা বিভাগ থেকে শুরু করে সড়ক সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাজ হচ্ছে। অনেক কাজ হয়েছেও। সংসদে আমি কতগুলি প্রশ্ন তুলেছি, সেগুলি দেখলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। কি কি প্রশ্ন তুলেছি, সেদিকে তাকিয়ে দেখলেই ওরা জেনে যাবে আমি কতটুকু কাজ করেছি।’ এখানেই না থেমে রাজদীপ আরো বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে রিসিভ করতে যাওয়া ও আমার কাজের মধ্যেই পড়ে। প্রাক্তন সাংসদ নিজের পাঁচ বছরের কার্যকালের যা করতে পারেননি, আমি তার থেকেও বেশি আড়াই বছরে করে দেখিয়েছি। তাই তাদের কাছ থেকে আমার কোনো সার্টিফিকেট এর দরকার নেই।’

Comments are closed.