
২৪ এপ্রিল : গতবছর লকডাউন এর জেরে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার গোটা ফুটবল মরশুম ভেস্তে গিয়েছিল। করোনার দাপটে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টও আয়োজন করতে পারিনি ডি এস এ। ফলে ঘরে বসেই সময় কাটাতে হয়েছিল এখানকার ফুটবলারদের। এবারও কিন্তু পরিস্থিতি সেই একই দিকে এগোচ্ছে। বরং গত বছরের তুলনায় এবার করোনা পরিস্থিতি গোটা দেশেই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। এমন অবস্থায় অনিশ্চয়তার গর্ভে চলে গিয়েছে শিলচরের ফুটবল মরশুম।
ডি এস এর ফুটবল বাই লো অনুসারে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই আন্তঃক্লাব দলবদল অনুষ্ঠিত হবার কথা। এবারও সে অনুসারে দিনক্ষণ ঠিক করেছিল সংস্থা। ৭-১০ এপ্রিল হবার কথা ছিল আন্তঃক্লাব দলবদল। কিন্তু ক্লাবগুলোর অনুরোধে সেটা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় সংস্থা। স্থানীয় ক্লাবগুলির যুক্তি ছিল, দলবদল হয়ে গেলে ফুটবলারদের অগ্রিম চুক্তির একটা অর্থ দিতে হবে। এরপর যদি করোনার জন্য গোটা মরশুম ভেস্তে যায় তাহলে ক্লাবগুলির বিরাট আর্থিক ক্ষতি হয়ে যাবে। ক্লাবগুলির সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই ডি এস এ এবারের দলবদলের দিন পিছিয়ে দিয়েছে। আসলে সংস্থা স্থানীয় ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেই দল বদলের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তাহলে এক সপ্তাহ আগে ক্লাব গুলিকে দলবদল এর দিন জানিয়ে দেওয়া হবে।
তবে এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে? কারণ এই মুহূর্তে গোটা দেশে যা অবস্থা তাতে পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ শহরেই এই মুহূর্তে লকডাউন অথবা কারফিউ চলছে। শহর শিলচরেও রাত ছটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত দোকানপাট বন্ধ থাকছে। গোটা দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাছাড়ের করোনা সংক্রমনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন অবস্থায় আজ শিলচর ডি এস এ তাদের সব ধরনের অ্যাকাডেমি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে সংস্থার ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট ও টি টি শিবির ও অ্যাকাডেমিগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এগুলো বন্ধ থাকবে।
একদিকে যখন কাছাড় সহ এরাজ্য ফের লকডাউন এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন ফুটবল মরশুম নিয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। যদিও এবার মহিলা ফুটবল দিয়ে মরশুম শুরু করেছিল সংস্থা, কিন্তু বাকি সব টুর্নামেন্টগুলোর ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। গত বছরের পর যদি এবারও ফুটবল মরশুম ভেস্তে যায় তাহলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে জুনিয়র ফুটবলারদের। বয়স বেড়ে যাওয়াতে তারা নিজ নিজ ক্যাটাগরিতে আগামী মরশুমে খেলতে পারবেন না। এনিয়ে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা অথবা আসাম ফুটবল সংস্থারও কিছু করার নেই।
বিষয়টা কিন্তু শুধু ফুটবলারদের মধ্যে থেমে নেই। শিলচরের মত শহরে স্পনসরশিপ পাওয়া খুবই কঠিন। বিশেষ করে খেলাধুলার মাঠে। তাই করোনাকালে যখন গোটা বিশ্ব আর্থিক মান্দায় ভুগছে তখন চট করে একটা ফুটবল দল তৈরি করে নেওয়াও খুব কঠিন হবে। বিশেষ করে সুপার ডিভিশনের মত একটা টুর্ণামেন্টে। ফুটবল মরশুমের কথা মাথায় রেখে স্থানীয় ক্লাব গুলি মৌখিকভাবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি করে রেখেছিল। কিন্তু এখন সেটা একেবারে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে হয়তো এ মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হয়ে যেত যে কোনও একটা টুর্নামেন্ট। তবে এখন আর সেটা হচ্ছে না। জুন মাসেও যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় তাহলেতো ফুটবলাররা আন্তঃজেলা দলবদলও করতে পারবে না। সব মিলিয়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ফের একবার শিলচরের ফুটবল মরশুম কে চরম অনিশ্চয়তার গর্ভে ঠেলে দিয়েছে।
Comments are closed.