"কোভিড নিয়ে ভাবুন, লকডাউন নয়," বললেন ডিসি; অতিসত্বর ভ্যাকসিন নিন: লক্ষণন
জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল। প্রায় তিন মাসের মাথায় রবিবার উধারবন্দের দয়াপুর এলাকার মনোহর গোড় (৫০) নামের ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এবং তার শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া জানিয়েছেন বরাকে ইতিমধ্যে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। এব্যাপারে জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক এবং চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে এই সময়ে একজন ব্যক্তির ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া। আমরা আগামীতে স্বাস্থ্যবিভাগের আধিকারিক এবং নির্বাচন আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নতুন নিয়মাবলী জারি করবো। তবে এই সময় দাঁড়িয়ে সব থেকে প্রয়োজনীয় হচ্ছে করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতন হওয়া। আমি জানি দীর্ঘদিন ধরে সচেতন থাকতে থাকতে সাধারণ মানুষের মধ্যে হয়তো একটা চিন্তা এসেছে, এখন আগের মত সচেতন না থাকলে হবে, তবে এমন ভাবনা একেবারেই নিরাপদ নয়।”
তিনি আরও বলেন, “অনেকেই হয়তো করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে লকডাউনের আশঙ্কা দেখছেন। যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায় তাহলে ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে, তবে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে করোনা ভাইরাসের কথা ভাবা বেশি জরুরি। অযথা লকডাউন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার থেকে বেশি প্রয়োজনীয় হচ্ছে কিভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা যায় সেটা ভাবা। আমি প্রত্যেকের কাছে আবেদন করবো আপনারা জানেন কিভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হয়, ফলে এখন থেকে আরও বেশি সচেতন হোন।”
ন্যাশনাল হেলথ মিশনের ডিরেক্টর তথা কাছাড় জেলার প্রাক্তন জেলাশাসক ডাঃ এস লক্ষণন প্রত্যেক ব্যক্তিকে সচেতন থাকতে বলেছেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে আবেদন জানিয়েছেন। বরাক বুলেটিনের সঙ্গে ফোনে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “আমরা বারবার বলেছি করোনাভাইরাস কোনোভাবেই ফুরিয়ে যায়নি শুধুমাত্র সংক্রমনের সংখ্যা কমে গেছিল। বিভাগের পক্ষ থেকে যত বেশি সম্ভব লোককে ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে। আমি প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে অনুরোধ জানাবো, আপনাদের নিকটতম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান এবং ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে সচেষ্ট হন। যদি শরীরে কোনও ধরনের সংক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিয়ে থাকে, তাহলে পরীক্ষা করিয়ে নিন এবং চিকিৎসাধীন হোন। গত এক বছর ধরে যেভাবে আপনারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে নিজেদের সুরক্ষিত রেখেছেন সেটা আরও জোর কদমে চালিয়ে যান। আমরা গত বছর প্রত্যেকে চেষ্টা করে সংক্রমণকে মহামারী রূপ দেওয়ার থেকে আটকে দিয়েছিলাম, এবারও সেই কাজ করতে হবে।”
অসম সহ পাঁচটি রাজ্যে আগামী সপ্তাহ থেকে কয়েক ধাপে নির্বাচন শুরু হচ্ছে। অসমে প্রথম দফায় নির্বাচন হবে ২৭ মার্চ এবং বরাক উপত্যকায় নির্বাচনের দিন হচ্ছে ১ এপ্রিল। এর আগে বিভিন্ন দলের নির্বাচনী জনসভা হচ্ছে এবং সেখানে প্রচুর ভিড় চোখে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বড় বড় নেতারা অসমের অন্যান্য জায়গা সহ বরাক উপত্যকায় আসছেন। কিন্তু কোনও সভায় সমর্থক, প্রার্থী বা নেতাদের মাস্ক ইত্যাদি ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় যদি ভিড়ে দুই-একজন ব্যক্তি করোনা ভাইরাস নিয়ে ঢুকে পড়েন, তাহলে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেশি। হয়তো এই কথা মাথায় রেখেই শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া বলেছেন, “নির্বাচনের পর সংক্রমণের হার কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।”
Comments are closed.