কাছাড়ে করোনায় মারা যাওয়া ৯৭ জনের মধ্যে ৭১ জনই পঞ্চাশোর্ধ
স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাছাড় জেলায় ৯৭ জন ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এরমধ্যে ৭১ জনই পঞ্চাশোর্ধ। ৬০ বছর বা তার উপরের ৪০ জনের মৃত্যু করোনা ভাইরাসে হয়েছে। ৫০ বছরের উপরের মৃত ব্যক্তির সংখ্যা ৩১। প্রথম থেকে বলা হয়েছিল বয়স্ক এবং শিশুদের বেশি সুরক্ষা নিতে হবে। জুলাই মাসে সোনাইয়ের নরসিংহপুর এলাকার এক মহিলার মৃত্যু তার বাড়িতেই হয়। বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুর পর তার সোয়াব স্যাম্পল সংগ্রহ করে জানা যায় তিনি ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। সেটিই ছিল জেলার প্রথম করোনা ভাইরাসে মৃত্যু। পরবর্তীতে নারায়ন মিত্রের মৃত্যু থেকে শুরু হয় একের পর এক মৃতের সংখ্যাবৃদ্ধি। এক সময় প্রতিদিন ৫ বা ৬ জন করে লোক মারা যাচ্ছিলেন। এতে বিভিন্ন বয়সের লোক ছিলেন, তবে পরিসংখ্যান বলছে পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তির মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।
জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭১ জন পুরুষ এবং ২৬ জন মহিলা। রয়েছে আট দিনের নবজাতক থেকে শুরু করে দশদিনের শিশু। রয়েছে ২৭ বছরের যুবকও। ১০ থেকে ৫০ বছরের বয়স সীমার মধ্যে রয়েছেন ২২ জন। অর্থাৎ যুবক হলেও এই ভাইরাস থেকে মৃত্যু হবেনা এটা বলা চলে না। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাস আক্রমণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। প্রথমদিকে মৃত্যুর সংখ্যা নগন্য থাকলেও পরবর্তীতে হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে। শিলচর শহরে একজন ৩৮ বছর বয়সের আক্রান্ত ব্যক্তির হঠাৎ করে অক্সিজেন মাত্রা কমে আসে এবং তার মৃত্যু হয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সুস্থ হওয়ার পর সেই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এখনও করোনা পরবর্তী অসুস্থতা নিয়ে তেমনভাবে গবেষণা না হলেও চিকিৎসকরা বলছেন অনেকেই এই সময়ে অন্যান্য রোগে অনেক বেশি আক্রান্ত হন।
জেলায় সবথেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অবশ্যই সেখানে সবথেকে বেশি রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। হাসপাতালে ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেথ অডিট বোর্ড এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২৮টি সরাসরি কোভিড মৃত্যু, বাকি ৫৭টি নন-কোভিড মৃত্যু। ৩০ মার্চ বরাক উপত্যকার প্রথম হাসপাতাল হিসেবে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা শুরু করে।
রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপসর্গ থাকা প্রত্যেক আক্রান্ত ব্যক্তিকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তীতে শহরের তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড ওয়ার্ড চালু করে এবং সেখানেও ক্রিটিক্যাল অবস্থায় রোগীরা চিকিৎসার জন্য যান। বেসরকারি হাসপাতালে সবথেকে সফলভাবে কাজটি করে দেখিয়েছে গ্রীন হিলস হাসপাতাল। এখন পর্যন্ত এখানে সবথেকে বেশি আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসার জন্য গেছেন। পাশাপাশি সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরেই রয়েছে।তাছাড়া সেখানে সবথেকে বেশি ক্রিটিক্যাল রোগী চিকিৎসার জন্য গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ এবং মেডিক্যালের সহায়তায় অনেক রোগীকে প্লাজমা থেরাপিও দেওয়া হয়েছে। সেখানে মারা গেছেন ৭ জন আক্রান্ত ব্যক্তি। এর মধ্যে তিন ব্যক্তির মৃত্যুকে সরাসরি করোনায় মৃত্যু বলা হয়েছে। চারজনকে নন-কোভিড বলে ঘোষণা করেছে ডেথ অডিট বোর্ড।
ভ্যালি হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে তিন ব্যক্তি মারা গেছেন এবং কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালের এক ব্যক্তির মৃত্যু করোনা ভাইরাসে হয়েছে।
Comments are closed.