
সুস্থ হয়ে ফিরলেন জেলার প্রথম করোনা আক্রান্ত, এসপ্তাহেই ছাড়া পেতে পারেন করিমগঞ্জের করোনা রোগী
প্রায় তিন সপ্তাহ লড়াই করে করোনা ভাইরাসকে হারালেন কাছাড় জেলার প্রথম আক্রান্ত সাজিবুর রহমান। প্রাক্তন বিএসএফ কর্মী সাজিবুর ২ এপ্রিল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে ঘোষণা করে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রায় তিন সপ্তাহ চিকিৎসাধীন রেখে এবং বেশ কয়েকটি টেস্টের পর তাকে মুক্তি সুস্থ বলে ঘোষণা করেছে বিভাগ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নিজে এসে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শনিবার তাকে মুক্তি দেন। আপাতত আগামী ১৪ দিন তাকে উধারবন্দের নেট্রিপে স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাখা হবে। সেখানে তার পরিবারের সদস্যরা এসে দেখা করতে পারবেন। রমজান মাসে তিনি রোজা রাখলে তার ইফতারের ব্যবস্থাও স্বাস্থ্য বিভাগ করবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, সাজিবুর রহমান দিল্লির তাবলীগ জামাতে যোগ দিয়েছিলেন, ফলে তার পরীক্ষা করানো হয়। ২ এপ্রিল তিনি প্রথম করোনা টেস্টে পজিটিভ আসেন। এরপর ৭ এপ্রিল দ্বিতীয় টেস্ট হয়, ১০ এপ্রিল তৃতীয় টেস্ট হয়, দুটোতেই তিনি পজিটিভ ছিলেন। তবে ১৪ এপ্রিল চতুর্থ টেস্টে তার নেগেটিভ হওয়ার লক্ষণ ধরা পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী এই লক্ষণ ধরা পড়ার পর আরও দুবার টেস্ট হয়। ১৫ এপ্রিল এবং ১৭ এপ্রিল তার দুটি টেস্ট হয়েছে। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং আইসিএমআর-য়ে তার পরীক্ষা হয়েছে। সব জায়গাতেই রেজাল্ট নেগেটিভ হওয়ায় তাকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।। সাজিদুর রহমান ছাড়াও রাজ্যের মোট ১১ জনকে শনিবার মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সারা রাজ্যে ৩৪ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যেই একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাই এখন রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ২২।
শিলচর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসাধীন করিমগঞ্জের আক্রান্ত মুফতি জামাল উদ্দিন একজন ক্যান্সার রোগী। করোনা চিকিৎসার পাশাপাশি তার কর্কট রোগের বিভিন্ন সমস্যাও সামাল দিতে হচ্ছে। তারও চারটা টেস্ট হয়ে গেছে এবং ধীরে ধীরে সুস্থ হওয়ার দিকে এগোচ্ছেন তিনি। স্বাস্থ্য বিভাগ আশাবাদী আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে তার রিপোর্টও নেগেটিভ হবে এবং তাকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে।
বড়খলা বিধানসভার রাণীঘাট এলাকার পেলাডহর গ্রামের প্রাক্তন বিএসএফ কর্মী সাজিবুর রহমান জেলার প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তিনি দিল্লির নিজামুদ্দিন মরকজে অংশ নিয়েছিলেন। ৪ এপ্রিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা টুইটে খবরটি জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিভাগের তরফে জানানো হয়, ১৯ মার্চ দিল্লি থেকে জেলায় ফেরেন এবং বাড়িতেই হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন প্রাক্তন বিএসএফ কর্মী সাজিবুর রহমান। ২ এপ্রিল অসুস্থ অবস্থায় শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার লালা পরীক্ষা হয় এবং সন্ধ্যেবেলা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সাজিবুর রহমান ২০০৭ সালে অবসর নিয়েছেন। দিল্লিতে নিজামউদ্দিনের মরকজে অংশ নিয়ে ট্রেনে বাড়ি ফেরেন তিনি।
মুক্তি পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সাজিদুর রহমান বলেন, শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তাররা প্রথম দিন থেকে ভালো ভাবে তার চিকিৎসা করেছেন। তিনি এক সময় অনেকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন কিন্তু ডাক্তার এবং নার্সরা মানসিকভাবে তাকে শক্ত থাকতে সাহায্য করেছেন। এবার থেকে তিনি এবং তার পরিবার খুব সাবধান থাকবেন যাতে আগামীতে আর এধরণের সমস্যায় পড়তে না হয়।
সাজিদুর রহমানের গ্রাম পেলাডহর প্রায় পুরোপুরিভাবেই সিল করা রয়েছে। কোনও বাইরের ব্যক্তি গ্রামে প্রবেশ করতে পারছেন না এবং গ্রামের কেউ বাইরে বের হতে পারছেন না।শুক্রবার জেলা প্রশাসনের একটি দল গ্রাম পরিদর্শন করেছে। এমন অবস্থায় জেলা প্রশাসন গ্রামে পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী এবং ঔষধ পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। প্রশাসনের আধিকারিকরা শুক্রবার গ্রাম পরিদর্শন করে দেখেছেন, সেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি খুব সাবধানে লকডাউন পালন করছেন।
Comments are closed.