সুস্মিতা মুর্দাবাদ স্লোগান নিয়ে দুই পক্ষের হাতাহাতি, কংগ্রেস ভবনেই কংগ্রেসের ফাটল স্পষ্ট
শিলচর কংগ্রেস ভবনেই কংগ্রেসের মধ্যে ফাটল স্পষ্ট হয়ে গেল। আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (এপিসিসি) কার্যকরী সভাপতি কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের সামনে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ল দুই পক্ষ। দলের কর্মকর্তারা একে অপরকে গালিগালাজ থেকে শুরু করে ঠেলা ধাক্কাও করেন। জল এতদূর গড়িয়ে যায় যে পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত কমলাক্ষ কে দুই পক্ষকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে শান্ত করাতে হয়। বৈঠকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কমলাক্ষ কে শারীরিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। তবে তাতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও কংগ্রেসের মধ্যে বড়োসড়ো একটা ফাটল কিন্তু স্পষ্ট হয়ে গেছে। যা আগামী দিনে আরো ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।
আসাম কংগ্রেসের সভাপতি ভূপেন বরার নির্দেশ অনুসারে কাছাড় কংগ্রেসের হেডকোয়ার্টার শিলচর কংগ্রেস ভবনে এক জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন কমলাক্ষ। তবে কমলাক্ষ কংগ্রেস ভবনে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েকজন কংগ্রেস অনুগামী ফিসফিস শুরু করেন, ‘কাছাড় কংগ্রেসে কি কোনো নেতা নেই? করিমগঞ্জ থেকে কেউ এসে কাছাড়ের দায়িত্ব নিবে কেন?’ এ ছিল শুরু।
কানাঘুষা আরও জোরদার হতে থাকে। এর মধ্যেই একটা পক্ষ ‘সুস্মিতা দেব মুর্দাবাদ স্লোগান’ দিতে শুরু করেন। বৈঠকে উপস্থিত দলের সিনিয়র নেতারা তাদের থামিয়ে দেন। সিনিয়র নেতাদের যুক্তি ছিল, ‘যে ব্যক্তি এই মুহূর্তে পার্টির সঙ্গে জড়িত নয়, এমনকি এই বৈঠকে উপস্থিত নয়, তাকে নিয়ে ঝামেলা করা উচিত নয়। কংগ্রেস ভবনে তাকে হাইলাইট করা উচিত হবে না।’
এরপর কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের সভাপতিত্বে বৈঠক চলে। সেখানে উপস্থিত সদস্যদের কাছে তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার জন্য আহবান জানান। এপিসি সির কার্যকরী সভাপতি বলেন, ‘আমাদের দলে আমি বলে কিছু নেই। আমরা একটি দল। আমাদের একসাথে লড়াই করতে হবে।’ নিজের বক্তব্য শেষ করার আগেই বাধা পান কমলাক্ষ। তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন যুব কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি আনসার হোসেন বড়লস্কর। তার প্রশ্ন ছিল, আজকের বৈঠকে যারা অনুপস্থিত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে পার্টি কি ব্যবস্থা নেবে। সেই সময় প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিং এবং সঞ্জীব রায় আনসার কে শান্ত হতে বলেন। তারা জানান বিষয়টি দেখা হবে। পুরো বিষয়টা আনসারকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন অজিত সিং। তবে তার জবাব আনসারের বন্ধু ও সমর্থকদের মন জয় করতে পারেনি। তারা অজিত সিংহের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান। এতে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যা দু’পক্ষের হাতাহাতি তে পরিণত হয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, বৈঠকেই একপক্ষ দাবি করেছে আনসার এই মুহূর্তে নাকি সাসপেন্ড। সে অনুসারে আনসার আজকের এই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন না। তবে আনসার এর বক্তব্য ছিল, আজকের বৈঠকে কাছাড় কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন পদাধিকারী অনুপস্থিত ছিলেন। তাহলে তারা কি সুস্মিতা পন্থী? সুস্মিতা পন্থী বলেই কি তারা আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত হননি। সত্যি যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে তো এটা কার্যকরী সভাপতি কে অসম্মান করা হয়েছে। এই ইস্যু নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ঘটে যায়। এরপর এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পুরকায়স্থ বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে আনসার ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ড রয়েছেন। আমি এটা খতিয়ে দেখব। কে তাকে সাসপেন্ড করেছেন এবং কেন, সেটা আমায় দেখতে হবে। যাই হোক, আনসার এর প্রশ্নগুলি কিন্তু খুবই প্রাসঙ্গিক ছিল। যেসব পদাধিকারীরা আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তার কারণ খতিয়ে দেখার জন্য একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদি প্রকৃত কারণ ছাড়াই তারা অনুপস্থিত থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কমলাক্ষ দাবি করেন, ‘আজকের সভা ৯০ শতাংশ শান্তিপূর্ণ এবং কার্যকর ছিল। তাই, ১০ শতাংশ যা পরিকল্পনা অনুসারে যায়নি তা তুলে ধরা ঠিক হবে না। মানুষ আবেগগতভাবে কংগ্রেসের সাথে যুক্ত।এবং আজ এখানে বিপুল জনসংখ্যা তার প্রমাণ। আমরা আরও কঠিন লড়াই করব। কাছাড় কংগ্রেসে আমাদের সম্মিলিতভাবে লক্ষ্য হল ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজদীপ রায় কে পরাজিত করা।’
Comments are closed.