নতুন সাইবার ক্রাইম! নগ্ন হয়ে ভিডিও কল করে যুবতী, এরপর ব্ল্যাকমেইল; মামলা করলেন সাহসী যুবক
গোটা দেশে যখন করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক চরমে, সেই সময়ও থামছেনা সাইবার দুষ্কৃতিদের দৌরাত্ম্য। এবার শিলচর শহরে শুরু হয়েছে এক নতুন ধরনের সাইবার অপরাধ। প্রথমে এক সুন্দরী মেয়ে ফেসবুকে যুবকদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। সেটা একসেপ্ট হলে ফেসবুক থেকে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ভিডিও কল করে। গভীর রাতে ফোন করে, ফোনের ওপারে সে নগ্ন অবস্থায় নানান উত্তেজনা মূলক কথাবার্তা বলে। কিছুক্ষণ পর আরেকটি অজানা নম্বর থেকে একটি ভিডিও আসে, যে যুবক ফোন রিসিভ করেছিল তার এবং সেই মেয়েটির নগ্ন অবস্থায় আলাপচারিতার। অবশ্যই সেটা মর্ফড্ অর্থাৎ এডিট করা ভিডিও। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল, দফায় দফায় অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে এবং টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দিলে চলতে থাকে নানান হুমকি।
সোমবার শিলচর সদর থানায় এই ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেছেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং প্লাজমা ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ টেকনিশিয়ান দীপ রাজ। তবে পুলিশের তরফে তাকে বলা হয়েছে নম্বর ব্লক করে দিয়ে এসব উটকো ঝামেলা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে।
দীপ রাজ প্রায়শই উদ্বুদ্ধ রক্তদাতা এবং প্লাসমা-দাতাদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পান। তিনি সেগুলো এক্সেপ্ট করেন এবং অনেকেই তার কাছ থেকে ফোনে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ এবং উপদেশ নেয়। সম্প্রতি রিয়া শর্মা নামে একটি মেয়ে তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় এবং তিনি অ্যাক্সেপ্টও করেন। ফেসবুকে তার মোবাইল নম্বর আপলোড করা আছে এবং সেই নম্বরে রবিবার রাতে একটি মেয়ে ফোন করে। তবে সেটা সাধারণ কল নয়, হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল। তিনি ভেবেছিলেন কোন উৎসাহী রক্তদাতা বা প্লাজমাদাতা তরুণ ফোন করছে। তবে রিসিভ করতেই তিনি হতবাক। ওপারে একটি মেয়ে সম্পূর্ন নগ্ন অবস্থায় তাকে কুৎসিত ইশারা দিচ্ছে। তিনি ফোনের ক্যামেরা ঘুরিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন কেন এমনটা করছো, মেয়েটি এব্যাপারে উত্তর দেয়নি এবং কিছুক্ষণ পর তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর ব্লক করে দেন নম্বরটি। তবে আরেকটা অজানা নম্বর থেকে কিছুক্ষণ পর একটা ভিডিও আসে এবং দেখা যায় একটা ভিডিওতে সেই তরুণী এবং তার আলাপচারিতার একটি দৃশ্য। তরুণীও নগ্ন এবং দীপ রাজের মুখের অংশ মর্ফড্ করে আরেক নগ্ন যুবকের শরীর মিলিয়ে একটা কুৎসিত ভিডিও বানানো হয়েছে।
ভিডিওর সঙ্গে একটি মেসেজ রয়েছে, যদি বড় অঙ্কের টাকা না দেন তাহলে এই ভিডিও তার পরিবারের প্রত্যেক ব্যক্তিকে পাঠানো হবে এবং প্রয়োজনে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরা হবে। তিনি ঘাবড়ে যান নি, কারণ ভিডিও দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো এটা এডিট করা। তিনি সঙ্গে সঙ্গে নম্বর ব্লক করে দেন, তবে গভীর রাত পর্যন্ত অজানা নম্বর থেকে তার কাছে ফোন আসতে থাকে। সোমবার সকালে তার পরিবারের এক ব্যক্তির সঙ্গে রিয়া শর্মা নামের মেয়েটি ফেসবুকে যোগাযোগের চেষ্টা করে। এতে দীপ রাজ বুঝতে পারেন, এবার পুলিশের দ্বারস্থ হতেই হবে।
তিনি লিখিতভাবে এজাহার দায়ের করলেও পুলিশের তরফে খুব একটা বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তার কাছ থেকে নম্বর নিয়ে পুলিশের আধিকারিকরা তার সামনেই রিয়া শর্মাকে ফোন করেন। কিন্তু ওপার থেকে এক যুবক উত্তর দেয়, সে বলে “পুলিশ বা মন্ত্রী, যার কাছেই যাও, এর সমাধান হবে না। একটিই রাস্তা আছে টাকা দিয়ে দিতে হবে, না হলে এই ভিডিও প্রত্যেকের কাছে যাবে।”
পুলিশের আধিকারিকরা দীপ রাজকে বলেন এব্যাপারে খুব গুরুত্ব না দিতে, শুধুমাত্র এধরনের কোনও ফোন যাতে তিনি রিসিভ না করেন। তবে দীপ রাজ পুরো ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরায় অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানাচ্ছেন তারা এই ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন। অপরাধীদের হুমকিতে ভয় পেয়ে অনেকে টাকাও দিয়েছেন, তবে অপরাধীরা একবার টাকা নিলে ক্ষান্ত হয় না বারবার ভয় দেখাতে থাকে।
Comments are closed.