
অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটকে সাপ্লাই লাইন বলা হয়ে থাকে। এই স্তরে পারফর্ম করেই একজন ক্রিকেটার সিনিয়র দলের জন্য পথ প্রশস্ত করেন। তবে এই অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটাররাই যদি ক্রিকেটের মাঠকে কলঙ্কিত করেন তাহলে সেটা শুধু সেই জেলার জন্য নয়, রাজ্যের ক্রিকেটের জন্যও চরম লজ্জার বিষয়। ঠিক এমনই এক লজ্জাজনক কাণ্ড ঘটালেন রেল ও যোরহাটের ক্রিকেটাররা। জে কে বরুয়া আন্তঃজেলা অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটে শিলচর কে ছিটকে দিতে জেনেশুনে বাজে পারফর্ম করল রেলের ক্রিকেটাররা। আর সবকিছুই ঘটলো দুই আম্পায়ারের সামনে।
জে কে বরুয়া আন্তঃজেলা অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটের ফাইনালের জন্য এক পা বাড়িয়ে রেখেছিল শিলচর। গ্রুপে দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে রানরেটেও অনেকটা এগিয়ে ছিল গতবারের রানার আপরা। তাই রেলের বিরুদ্ধে যোরহাটের দরকার ছিল প্রথম ইনিংসে লিড। তার সঙ্গে রান রেট ও একটা ফ্যাক্টর ছিল। কারণ রেলের বিরুদ্ধে শুধু প্রথম ইনিংসে লিড দিয়ে হবে না। যোরহাটের দরকার ছিল ভালো নেট রান রেট ও। অবাক করার বিষয় হলো যোরহাটের দুটো টার্গেট পূরণ করতে সব ধরনের সাহায্য করল রেল দল। সঙ্গে ছিলেন দুই আম্পায়ার ও।
গোলাঘাটে চলতি ফাইনাল রাউন্ডের ম্যাচে রেল তাদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে যায় ৮৩ রানে। এরপর যোরহাট তাদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ১৮৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে রেল অলআউট হয় ১৯৮ রানে। ফলে আজ দ্বিতীয় দিন ম্যাচটা সরাসরি জয়ের জন্য যোরহাটের দরকার ছিল ৯৮ রানের। ১৪ ওভারে। একটা সময় যোরহাটের জয়ের জন্য দরকার ছিল শেষ তিন ওভারে ৫৩ রান। ম্যাচের শেষ ঘন্টার খেলা তখন প্রায় শেষ। তিন ওভারে এইরান সম্ভব নয় এটা বুঝতে পেরে দুই আম্পায়ার বেল তুলে নেন। তবে আম্পায়ার বেল তুলে নেবার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠে নেমে আসেন যোরহাট এর অধিনায়ক। দুই আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনার পর ফের শুরু হয় খেলা। এতে সম্মতি ছিল রেলের অধিনায়কের। সেই মুহূর্তে ফাইনালে কোয়ালিফাই করার জন্য যোরহাটের দরকার ছিল দু ওভারে ৩০।
তখনই শুরু হয় আসল নাটক। সাতজন স্লিপ ও দুজন গলি দিয়ে বল করেন রেলের বোলাররা। গোটা ম্যাচে পেস বোলিং করলেও তখন স্পিনার বনে যান রেলের এক বোলার। উপহারস্বরূপ যোরহাটের ব্যাটসম্যানদের একের পর এক ফুলটস দিয়ে যান রেলের বোলাররা। সহায়তায় এগিয়ে আসেন ফিল্ডাররা ও। দুটি বল বাউন্ডারি লাইন এর প্রায় একহাত আগে আটকে গেলেও রেলের এক ফিল্ডার সেটাকে কিক মেরে বাউন্ডারি লাইন এর ওপার পৌঁছে দেন। রেলের সহযোগিতায় শেষ দুই ওভারে ৩০ রান সংগ্রহ করে নেয় যোরহাট। এর ফলে শিলচর কে ছিটকে দিয়ে ফাইনালের টিকিট আদায় করে নেয় তারা। ম্যাচ শেষে শিলচরের (১.১৩৪) রান রেট টপকে যায় যোরহাট (১.১৩৫)। এভাবেই ক্রিকেটের মাঠ কে কলঙ্কিত করে জে কে বরুয়া আন্তঃজেলা ক্রিকেটের ফাইনালের টিকিট আদায় করে নেয় যোরহাট।
ম্যাচ শেষে এমন লজ্জাজনক কাণ্ড নিয়ে রেলের কোচের কাছে এর কারণ জানতে চান শিলচরের কোচ তথাগত দেব রায়। তবে তিনি কোনো জবাব পাননি। উল্টো রেলের এক ক্রিকেটারের অভিভাবক এসে কোচ তথাগত কে ঠেলা ধাক্কা দেন। রেল দলের এমন আচরণে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ও হতাশ শিলচর দল। কোচ তথাগত বলেন, ‘ভাবতে অবাক লাগছে কিভাবে একটা দল ক্রিকেটের স্পিরিট এর বিরুদ্ধে এমন লজ্জাজনক কাজ করতে পারে। সবচেয়ে খারাপ লাগছে আম্পায়ারদের ভূমিকা নিয়ে। আন্তঃজেলা ক্রিকেটে এমন লজ্জাজনক ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এই ম্যাচ থেকে কী শিক্ষা পেল এই ছেলেরা? এভাবে খেলেই কি এই ক্রিকেটাররা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়বে? এটা শুধু জেলা দলের জন্য নয়, গোটা রাজ্যের ক্রিকেটের জন্য এক কলঙ্ক।’
বিষয়টা নিয়ে অসম ক্রিকেট সংস্থার কাছে এক লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, জাতীয় স্তরে কেন রাজ্যের ক্রিকেট এতটা পিছিয়ে আজকের এই ঘটনা সেটা প্রমান করে দিল। রাজ্যের ক্রিকেটে এন এফ রেল এক বড় নাম। অসম রনজি দলে বছরের পর বছর রেল দলের ক্রিকেটাররা প্রতিনিধিত্ব করছে। যে দলের জুনিয়র ক্রিকেটাররা খেলার স্পিরিটের বারোটা বাজিয়ে ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করে সেই রাজ্যের পারফরম্যান্স জাতীয় স্তরে ভালো হবে কি করে? আরো লজ্জার বিষয় হচ্ছে রেল ক্রিকেটারদের এমন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে গেলেন দলটার কোচিং স্টাফ ও। এই জুনিয়র ছেলেদের তাহলে কি শিক্ষা দিচ্ছেন রেলের কোচরা? কম যাননি আম্পায়াররা ও। মাঠের স্পিরিট বজায় রাখার দায়িত্বটা কিন্তু আম্পায়ারদের। কিন্তু গোলাঘাটে আজ আম্পায়াররাই রেলের অনৈতিক কাজে সাহায্য করে গেলেন। সোজা কথায়, শিলচর কে ছিটকে দিতে আজ আন্তঃজেলা ক্রিকেটের ফাইনাল রাউন্ডে গোটা সিস্টেম কাজ করেছে। এর থেকে লজ্জা জনক রাজ্যের ক্রিকেটের জন্য আর কি হতে পারে?
Comments are closed.