রাস্তার পাশের পাথর-বালির স্তুপ যখন-তখন হয়ে উঠতে পারে পথচারীদের মরণফাঁদ
সারাবছর শিলচর শহরে বিভিন্ন রাস্তায় মাটি পাথর বালির স্তুপ চোখে পড়ে। তবে শীতের মরসুমে সেটা অনেকগুণ বেড়ে যায়। বছর দুয়েক আগে শিলচরের নরসিং উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক রাস্তার পাশে থাকা পাথরের স্তুপে পা পিছলে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছিলেন। গতবছর ন্যাশনাল হাইওয়ে রোডে রাস্তার পাশে রাখা পাথরে পিছলে একটি অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। এমন আরও অনেক ঘটনা রয়েছে যেগুলো খুব বড় আকার না নিলেও অত্যন্ত বিপদজনক অবস্থায় সাধারণ মানুষকে ঠেলে দিয়েছিল। তবে এখন বড় বড় বিল্ডিং বানানোর ক্ষেত্রে রাস্তার পাশে বালি-পাথর-মাটির স্তুপ রেখে দেওয়া কোনও নতুন কিছু নয়, যখন-তখন রাস্তা আটকে স্তুপ থেকে ঠেলায় সেগুলো তোলা হচ্ছে, প্রতিবাদ করলে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হন এলাকার বড় বড় দাদারা। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তরফে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
এই বছর পুরসভার নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, তবে একসময় পুরপতি নিহারেন্দ্র নারায়ন ঠাকুরের বিরুদ্ধে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিলেন, তিনি এসব কাজে তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের সাহায্য করেছেন। যদিও তিনি এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের ওপর দোষ চাপিয়ে ছিলেন।
শিলচর পৌরসভার দায়িত্বে রয়েছে এখন জেলা প্রশাসন, অতিরিক্ত জেলা শাসক সুমিত সত্যবানের অধীনে চলছে পুরসভার কাজ। বর্ষার সময়ে পুরসভার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি নিজে মাঠে নেমে নালা পরিষ্কার করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা সোনাই রোডের জমাজলের সমস্যা সমাধান হয়েছে। তবে শীতের মরসুমে রাস্তার পাশে বালি-পাথরের স্তুপ যেভাবে মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটা নিয়ে তার কোনও মাথাব্যথা দেখা যায় না। তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা সব ক্ষেত্রে নাক গলাতে পারিনা, তবে কেউ যদি এগিয়ে এসে বলেন রাস্তার পাশে এসব রাখায় তাদের অসুবিধা হচ্ছে আমরা তখন এগুলো হটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। কিন্তু এখনো কেউ সরাসরি আমাদের কাছে এসে বলেন নি তাদের অসুবিধা হচ্ছে। যদি জনগণের অসুবিধা না হয় তাহলে আমরা কেন নিজে থেকে এব্যাপারে নাক গলাবো?
লকডাউন পরবর্তী সময়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট সহ বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে। শীতের মরসুমে এই কাজগুলো তুলনায় অনেক বেশি হয়। এছাড়া লকডাউনে এসব কাজ বন্ধ ছিল সেগুলোও এখন দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে। এতে রাস্তার পাশে স্তুপ করে রাখা বালি-পাথর ইত্যাদির পরিমাণ বেড়েছে। সম্প্রতি হাসপাতাল রোডে দেশবন্ধু রোডের পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছিল পাথর। মাঝরাতে রাস্তার মাঝখানে এভাবে পাথর রেখে দেওয়ায় যে কেউ দুর্ঘটনাগ্রস্ত হতে পারতেন। ভাগ্যিস তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি, তবে ভবিষ্যতে ঘটবেনা এটা বলা যায়না।
সাধারণ মানুষ এসবের বিরুদ্ধে কথা বলতে খুব একটা জোর পান না কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বড় বড় বিল্ডিং বানানোর কাজ নেন ক্ষমতাশালী লোকেরা। কথা বলে পেরে ওঠার খুব একটা সম্ভাবনা থাকেনা। জেলায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিন জেলার কোনও না কোনও এলাকায় দুর্ঘটনায় কেউ প্রাণ হারাচ্ছেন। বিভিন্ন কারণ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে রাস্তার পাশে স্তুপিকৃতভাবে বালি-পাথর ইত্যাদি রেখে দেওয়া। প্রশাসন নিজেরাও এব্যাপারে খানিকটা অসহায় মনোভাব প্রদর্শন করে, এতে সাহস বাড়ে যারা এসব কাজ করছে তাদের।
Comments are closed.