
"বরাকে ১০ দিনে অক্সিজেনের চাহিদা ২০ গুণ বেড়েছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে," বললেন ডাঃ রাজদীপ রায়
এই বছরের করোনা ভাইরাসের আক্রমণের ধরন একেবারে নতুন এবং গত বছর থেকে আলাদা। বরাক উপত্যকায় ৪০ লক্ষের বেশি লোক বসবাস করেন এবং তাদের জন্য শুধুমাত্র শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউর পরিসেবা রয়েছে। এই বছর রোগীদের অনেক বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে, এমনকি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার পরেও অনেকের অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ছে। গত ১০ দিনে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেনের চাহিদা ২০ গুণ বেড়েছে। আমাদের মনে হচ্ছে আগামী ১০ দিনে সংক্রমনের মাত্রা অনেক বাড়বে, ফলে প্রত্যেক লোককে আরও সাবধান হতে হবে, এমনটাই বললেন শিলচরের সাংসদ তথা চিকিৎসক ডাঃ রাজদীপ রায়। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা রুখতে বরাক উপত্যকার প্রত্যেক ব্যক্তির সহায়তা চাইলেন তিনি।
রাজদীপ বলেন, “সরকার নিয়ম বানিয়ে দিতে পারে, তবে সেটা কাজে আসবে যখন জনগণ মানতে চাইবেন। ঘোড়াকে নদীর ধারে নিয়ে গেলেও জল খাওয়াটা ঘোড়ার ইচ্ছায় হয়, তাকে জোর করে কাজ হয়না। এই বছর যে ভাইরাস কাজ করছে সেটা কতটুকু ভয়াবহ, আমরা শুধু অনুমান করতে পারছি, তাকে এখনো পুরোপুরি চেনা যায়নি। তবে আমাদের মনে হচ্ছে ভাইরাস এখন বাতাসে রয়েছে এবং তার মারন-ক্ষমতা আগে থেকে অনেক বেশি। এবছর মৃত্যুর হারও আগের থেকে অনেক বেশি। শুধুমাত্র সচেতন এবং সাবধান থেকে আমরা হয়তো মহামারীকে কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে পারি। এই সময়ে বেশিরভাগ লোকের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে যাবে, তখন লড়াইটা আরেকটু সহজ হবে। প্রথম ডোজ নেওয়া একজন লোক ভ্যাকসিন না নেওয়া ব্যক্তি থেকে ৭০% বেশি সুরক্ষিত, দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর একজন লোক ৯৬% পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকতে পারেন। আমাদের দুটো কাজ করতে হবে, প্রথমটা হচ্ছে একেবারেই নিজেকে ভাইরাসের থেকে দূরে রাখতে হবে এবং দ্বিতীয়টা হচ্ছে, যতই কষ্ট হোক, প্রত্যেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করুন। এই সময়ে উদাসীনতা বা একে অন্যের উপর দোষারোপ করে নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে আপস করবো না।”
পরিস্থিতি কিভাবে ভয়াবহ হচ্ছে এই বিষয়ে তিনি বলেন, “সংক্রমণের হার বরাক উপত্যকায় এখন প্রায় ৯%, দিল্লিতে সেটা প্রায় ৩০%, সেখানে পরিস্থিতি প্রায় মহামারীর রূপ নিয়েছে এবং আমরা সাবধান না হলে সেখানে পৌঁছে যেতে বেশি সময় লাগবে না।
শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে, সরকার চেষ্টা করছে জেলাস্তরে হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেন এবং আইসিইউ পরিষেবা উন্নত করতে। তবে সময় আমাদের হাতে কম এবং দায়িত্ব অনেক বেশি। রাজ্যের সাতটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্তত ১৮০ জন সিনিয়র ডাক্তার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরিসেবা দিচ্ছেন। রোগীদের চিকিৎসা করার পাশাপাশি জুনিয়র ডাক্তার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এর মধ্যে অন্যতম। ভাইরাস তার ধরন বারবার পাল্টাচ্ছে এবং আক্রমণের গভীরতা বাড়ছে। এই সময় দাঁড়িয়ে আমরা শুধুমাত্র নিজেদের সুরক্ষিত রেখে এবং সচেতন থেকে সমাজকে বাঁচাতে পারি। বরাক উপত্যকার প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে আমাদের এটাই আবেদন, এই লড়াইয়ে প্রত্যেকে একে অন্যের পাশে থাকুন।”
শিলচরের নবনির্বাচিত বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী গুয়াহাটি থেকে ফিরে সরাসরি শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পিপিই কিট লাগিয়ে তিনি হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ঢোকেন এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। রোগীরা তাকে চিনতে না পেরেও নিজেদের কথাগুলো তুলে ধরেছেন। সেই অনুভূতির ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে অনেক উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার পরেও রোগীদের মৃত্যু হচ্ছে। তবে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝলাম, পরিষেবা অনেক উন্নত। আমরা সাধারণ মানুষের পাশে আছি, তবে সরকার একা লড়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে জিততে পারবেনা। প্রত্যেক ব্যক্তিকে এই লড়াইয়ে সমানভাবে যোদ্ধা হিসেবে কাজ করতে হবে। প্রত্যেকে মানষিক ভাবে পজিটিভ থাকব এবং সচেতন থাকবো, এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।”
Comments are closed.