সুস্মিতা দেবকে সাপের বাচ্চা বললেন উপাধ্যক্ষ আমিনুল, "সন্তোষ নয় সন্ত্রাস মোহন দেব ছিলেন তার বাবা"
“বরাক উপত্যকায় অস্বচ্ছ এবং সন্ত্রাসবাদী রাজনীতির আমদানি করেছিলেন সতীন্দ্রমোহন দেবের ছেলে সন্তোষ মোহন দেব। যেখানে মইনুল হক চৌধুরীর মতো মানুষ কংগ্রেসের নেতা হয়েও স্বচ্ছ রাজনীতির উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। সেখানে তার বিপরীতে হেঁটে সন্তোষ মোহন সাম্প্রদায়িকতার সাহায্য নিয়েছেন শুধুমাত্র নির্বাচনে সফল হওয়ার জন্য। তার বিষাক্ত রাজনীতির প্রভাব এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি বরাক উপত্যকার মানুষ, সেই নেতার মেয়ে সুস্মিতা দেব কি করে ভাল হবেন? সাপের বাচ্চা সাপই হয়, খরগোশ হয় না, এটা মনে রাখতে হবে। সুস্মিতা দেব এখন অচল নোটের মত, তাকে চলতে হলে অন্য পুরুষের কাঁধে উঠতে হয়, কিন্তু বরাক উপত্যকার কোনও পুরুষ তাকে কাঁধে নিতে রাজি নয়,” এমনটাই বললেন রাজ্য বিধানসভার উপাধ্যক্ষ তথা সোনাই সমষ্টির বিধায়ক আমিনুল হক লস্কর। রবিবার সোনাই বিধানসভা সমষ্টির উত্তর কৃষ্ণপুর এলাকায় আউলিয়া বাজার সংলগ্ন এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে কথাগুলো বলেন তিনি। সভায় উপস্থিত ছিলেন শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় সহ দলের অন্যান্য নেতারা।
সম্প্রতি সোনাই অঞ্চলে কংগ্রেসের সভায় সুস্মিতা দেবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী স্লোগান শোনা যায়। যদিও কংগ্রেসের তরফে বলা হয়, বিধায়ক আমিনুল হক লস্কর কংগ্রেসের সভা বানচাল করতে এই চক্রান্তে সহযোগিতা করেছিলেন। তবে রবিবার বিজেপির সভায় কথা বলতে গিয়ে সুস্মিতা দেব থেকে শুরু করে তার বাবা এবং দাদুর প্রসঙ্গ টেনে আনেন আমিনুল। তিনি বলেন, “বরাক উপত্যকার রাজনীতির সবথেকে উজ্জ্বল নাম হচ্ছেন মইনুল হক চৌধুরী। তিনি ধুবরির সাংসদ হলেও সেখানে একটি দেশলাই ফ্যাক্টরি পর্যন্ত করেননি, অথচ কাছাড়ে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু করে কাগজ কল সহ যতগুলো উন্নত প্রকল্প রয়েছে, প্রায় সবগুলোই তার হাত ধরে বরাকে এসেছে। সেই নেতাকে পরবর্তীতে দিল্লির গান্ধী পরিবার এবং শিলচরের দেব পরিবার কোনও সন্মান দেয়নি। মইনুল হক চৌধুরীর মৃত্যুর জন্য ইন্দিরা গান্ধী এবং তার ছেলে সঞ্জয় গান্ধী দায়ী। সঞ্জয় গান্ধীর গুন্ডামি এবং অন্যায় আবদার সমর্থন না করায় মইনুল হক চৌধুরীর মন্ত্রিত্ব কেড়ে নিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সকালের খবরের কাগজ পড়ে এটা জানার পর বাথরুমে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি, এরপরেই মারা যান বরাকের সুসন্তানটি। মৃত্যুর পর তাকে সম্মান জানিয়ে সোনাই থেকে রাঙ্গিরখাড়ি রাস্তাটি তাঁর নামে নামকরণ করেছিল রাজ্য সরকার। পরবর্তীতে সন্তোষমোহন দেব ক্ষমতায় এলে নামটি বদলে ফেলেন, আর আজ তার কন্যা সোনাই এসে লোকদেখানো নাটক করেন। আমি তাকে বলতে চাই, তুমি আগে শ্মশানে গিয়ে নিজের বাবাকে জিজ্ঞেস করো, তিনি কতটুকু সম্মান দিয়েছিলেন মইনুল হক চৌধুরীকে? কংগ্রেস দল যখন কাটা হাতকে নিজেদের পরিচয় বলে ঘোষণা করেছে, তখন থেকেই তাদের রাজনীতিতে সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় মেরুকরণ ইত্যাদি ঢুকে পড়েছে, বরাক উপত্যকায় এসবের নেতৃত্ব দিয়েছেন সুস্মিতা দেবের বাবা প্রয়াত সন্তোষ মোহন দেব। ভোটের জন্য মুসলমানদের গলা টিপে ধরে ছিলেন তিনি, আর আজ তার মেয়ে আমাদের বিজেপির নামে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে, এটা অত্যন্ত হাস্যকর।”
কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফ নেতাদের অচল নোটের সঙ্গে তুলনা করেন আমিনুল হক লস্কর। তিনি বলেন, “নোট বন্দির পরে পুরনো ১০০০ এবং ৫০০ টাকা এখন বাজারে অচল। ঠিক সেরকম কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফের নেতারা এখন বাজারে বিকছেন না, তারা অচল। সুস্মিতার মত কংগ্রেস নেতারা আমার কাছে নোট বন্দির আগের ১০০০ টাকার নোট, একেবারে মূল্যহীন। সুস্মিতা দেব আমার অঞ্চলে এসে বলে গেছেন তিনি যে কোনওভাবে আমাকে জিততে দেবেন না। আমি তাকে বলতে চাই, শিলচর পুরসভার নেত্রীর পদ হোক বা বিধায়ক ও সাংসদ, তুমি যতবার জয়ী হয়েছো, তোমার বাবা জীবিত ছিলেন বলেই সম্ভব হয়েছিল। এখন তিনিও নেই, আর তোমারও জয়ী হওয়ার কোনও আশা বেঁচে নেই। এখন তোমাকে চলতে হলে অন্য কোনও পুরুষের কাঁধে চেপে বসতে হয়। দিল্লিতে এই কাজটা তুমি করেছ, কিন্তু বরাক উপত্যকার কোনও যুবক তোমাকে কাঁধে নিতে রাজি নয়।”
সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সুস্মিতা দেব শিলচর পুরসভায় থাকাকালীন ২৭ জনকে চাকরি দিয়েছিলেন, এর মধ্যে মাত্র দুইজন মুসলমান ছিলেন। কংগ্রেসের নিজের কাজগুলোই বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, তারা কতটুকু মুসলমানবিরোধী। তারা এসে আমাদের শেখাচ্ছেন বিজেপি কতটুকু সাম্প্রদায়িক, আপনাদের আমরা পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, পারলে কাছাড় জেলার কোনও সমষ্টিতে আমাদের থেকে বেশি ভোট পেয়ে দেখান।”
মইনুল হক চৌধুরীর পর তিনিই সোনাই বিধানসভা সমষ্টির সবথেকে সফল বিধায়ক, এমনটাই দাবি আমিনুল হক লস্করের। তিনি বলেন, “আমার সমষ্টিতে ৫১ হাজার পরিবার রয়েছে যার মধ্যে ১৫ হাজার মানুষের রান্নার গ্যাসের কানেকশন ছিল না। আমাদের সরকার গত সাড়ে চার বছরে ৩৪ হাজার পরিবারকে এলপিজি গ্যাসের কানেকশন দিয়েছে। রাজ্যের প্রথম গ্যাস পাইপলাইন আমাদের এলাকায় বসেছে। বেশিরভাগ পরিবারের পাকা শৌচালয় ছিল না, ২৮ হাজার পরিবারকে সেটা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৩০ হাজার পরিবারের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না, আমরা ২৫ হাজার বাড়িতে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ কানেকশন দিয়েছি। ২২৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে আমাদের সমষ্টির রাস্তাঘাটের জন্য। আগে এলাকার মানুষ ভাল রাস্তা খুঁজতেন এখন ভাঙ্গা রাস্তা কোথায় আছে সেটা খুঁজে বেড়ান, যাতে সেগুলো উন্নত করা যায়। একেই বলে পরিবর্তন এবং উন্নতি। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে সাধারন মানুষ এতটাই লাভবান হয়েছেন, এখন আর তাদের ধর্মের নামে ভয় দেখিয়ে লাভ হয় না। আমরা এর উত্তর গতবছর লোকসভা নির্বাচনে পেয়েছি, আমি ২০১৬ সালে যতটুকু ভোট পেয়েছি ২০১৯ সালে তার থেকে বেশি ভোট পেয়েছিলেন আমাদের বিজয়ী সাংসদ রাজদীপ রায়। আমি নিজে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ এবং এইটুকু বুঝতে অসুবিধা হয় না যে আমাদেরকে এত বছর ধর্মের নামে শুধুমাত্র বিভ্রান্ত করা হয়েছে এবং ঠকানো হয়েছে। বিজেপি জনগণের দল, শুধুমাত্র হিন্দুদের নয়। গত পাঁচ বছরে সাধারন মানুষ দীর্ঘ সুবিধা পেয়েছেন ৭০ বছরে এর অর্ধেক টাও আমরা পাইনি, তাই এখন কেউ আমাদের বিভ্রান্ত করতে পারবে না।”
আমিনুল হক লস্করের সুর ধরেই সাংসদ রাজদীপ রায় বলেন, “কংগ্রেসের দ্বিচারিতা এবং নোংরা রাজনীতি এখন তার দলের লোকেরাই সহ্য করতে পারছেন না। রাজদীপ গোয়ালার মত তরুণ নেতাও তাই কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং আগামীতে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে। এখন মানুষ ভুল শুদ্ধ বিচার করতে জানেন এবং তাদের চট করে সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে ভুলানো যায় না। অবশ্যই এর জন্য দায়ী আমাদের শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আমরা সুস্মিতা দেব এবং তার সহযোগীদের পাল্টা চ্যালেঞ্জ করছি আপনারা পারলে কাছাড় জেলায় একটা আসন জিতে দেখান।”
Comments are closed.