প্লাজমাদাতার পা ধুইয়ে সম্মান জানালেন উপাধ্যক্ষ, বললেন 'আমি প্লাজমা ঋনী'
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্করকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়েছিল। তিনি উপত্যকার প্রথম রোগী যার শরীরে প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার করা হয়। ১০ দিনের মাথায় তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। এবার প্লাসমাদাতা প্রত্যেক ব্যক্তির বাড়ি বাড়ি ঘুরে সম্মান জানাচ্ছেন তিনি। বৃহস্পতিবার কনকপুরের প্লাসমাদানকারী যুবক নবিদুল ইসলাম লস্করের বাড়ি পৌঁছে তার পা ধুয়ে দেন বিধায়ক আমিনুল হক লস্কর। পাশাপাশি তাকে সংবর্ধনা প্রদান করেন। জেলায় যারাই প্লাজমা দিচ্ছেন প্রত্যেককে এভাবে সম্মান জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার।
বরাক বুলেটিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “আমি একজন প্লাজমা ঋনী, কোনও অজানা এক ব্যক্তির দান করা প্লাজমা আমার শরীরে দেওয়ায় এত বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। এবার আমি আমার এলাকায় ঘুরে ঘুরে যারাই প্লাজমা দিতে সমর্থ, তাদের কাছে অনুরোধ রাখব, তারা যেন এগিয়ে আসেন। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তারা প্রয়োজনীয় তথ্য আমাদের কাছে তুলে ধরবেন। তাদের নিরিখে যারা প্লাজমা দিতে সমর্থ প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে আমি নিজে অনুরোধ রাখব। তবে এটি অবশ্যই স্বেচ্ছায় দান, তাই কেউ যদি দিতে চান তবেই দেবেন, আমরা শুধু অনুরোধটুকু রাখব।”
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের পাশে প্লাজমা সংগ্রহের একটি সেটআপ গড়ে তোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১১ জন লোক এখানে প্লাসমা দিয়েছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার। হাসপাতালের পক্ষ থেকে ডাঃ ভাস্কর দেবনাথ জানিয়েছেন, প্লাজমা দানের বিশেষ কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। যেসব সিম্পটোমেটিক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়েছেন তাদের প্লাজমা নেওয়া হবে। তারা চিকিৎসাধীন থাকাকালীন যেদিন প্রাথমিক উপসর্গ দেখা যায়নি, তার ২৮ দিন পর তারা প্লাজমা দান করতে সমর্থ। এছাড়া হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ন্যূনতম ১২.৫ হতে হবে। স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো থাকতে হবে, আগের রাতে ঘুম ভালো হতে হবে এবং কোন ধরনের নেশাদ্রব্য আগের দিন সেবন করতে পারবেন না। অনেকেই স্বেচ্ছায় দান করতে এগিয়ে আসছেন, কিন্তু তাদের এসব ক্ষেত্রে অসঙ্গতি থাকায় নেওয়া যাচ্ছে না। প্লাজমা সংগ্রহ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একদিনও বাদ যায়নি, প্রায় প্রতিদিন একজন বা দুইজন প্লাজমা দিয়েছেন। আগামীতে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে একসঙ্গে বেশি মানুষ চলে এলে অসুবিধা হতে পারে। একজন ব্যক্তির প্লাজমা সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় ন্যূনতম লাগে।
আমিনুল হক লস্করকে দেওয়ার জন্য দুই ইউনিট প্লাসমা গুয়াহাটি থেকে আনানো হয়েছিল। এর মধ্যে এক ইউনিটি তার শরীরে দেওয়া হয়েছে। আরেক ইউনিট সংকটজনক অবস্থায় থাকা এক রোগীকে প্রদান করা হয়েছিল। তিনি বুধবার সুস্থ হয়ে কোভিড ওয়ার্ড থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডাঃ ভাস্কর গুপ্ত জানিয়েছেন, পবন আগরওয়াল নামের ৭০ বছর বয়সের এক ব্যক্তির হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারির পর কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ে। তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা করা হয়, গুয়াহাটি থেকে আনা প্লাজমা তার শরীরে প্রবেশ করানো হয় এবং তিনি সুস্থ হন। এটি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি বড় প্রাপ্তি। এর আগে ৯১ বছর বয়সের এক মহিলা এখান থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ফলে জনমনে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে অযথা আতঙ্ক থাকার কোন মানে হয় না।
Comments are closed.