অমিত শাহ প্রতিশ্রুতি দিলেও বরাকে নারকটিক বিভাগ নিয়ে নির্বিকার সরকার
আজ আন্তর্জাতিক ড্রাগস এবং মানব পাচার বিরোধী দিবস। হয়তো সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগ রেখে বরাক উপত্যকায় এব্যাপারে অনেক অনুষ্ঠান হবে। বিধানসভা নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে শিলচরে এক সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। নির্বাচনী প্রচারে প্রত্যেক দল প্রতিশ্রুতির ডালা সাজিয়ে জনগণের সামনে পরিবেশন করে, এটাই স্বাভাবিক। তবে সেদিন গৃহ মন্ত্রী এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন বরাক উপত্যকায় বিশেষ নারকটিক বিভাগ গড়ে তোলা হবে। এর কারণ হচ্ছে বিভিন্ন রাজ্য এবং আন্তর্জাতিক সীমানা হয়ে এই এলাকায় ড্রাগস তথা নেশা জাতীয় দ্রব্যের পাচার হচ্ছে। নতুন সরকার আসার পর সারা রাজ্যে ড্রাগসের বিরুদ্ধে অভিযান চললেও বরাক উপত্যকায় বিশেষ নারকটিক বিভাগ গড়ে তোলার ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি নতুন মুখ্যমন্ত্রী বা সরকারের কোনও মন্ত্রী এব্যাপারে টু-শব্দটি করেননি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বরাক উপত্যকা একটি আন্তর্জাতিক ড্রাগস পাচার রুটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মায়ানমার থেকে মনিপুর এবং মিজোরাম হয়ে বরাক উপত্যকায় বিভিন্ন ধরনের ড্রাগ ঢোকে এবং সেটা করিমগঞ্জ এবং আগরতলা হয়ে বাংলাদেশে পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এছাড়া একটি অংশ চলে যায় ভারতবর্ষের অন্যান্য এলাকায়। গতবছর তৎকালীন মীনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে মাছের পেটে ঢুকিয়ে ড্রাগস ভারতে পাচার হয়। তিনি এব্যাপারে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে প্রকাশ্যে পুলিশের তরফে এর বিরুদ্ধে কোনও অভিযান চালানো হয়নি।
বরাক উপত্যকায় নারকটিক বিভাগ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা কোথায়? এর উত্তর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেই দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বরাক উপত্যকার যুবসমাজ ড্রাগসের কবলে চলে গেছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চক্র এই অঞ্চলে ড্রাগস পৌঁছে দিচ্ছে। এগুলো আটকাতে বিশেষ দল গঠন করে বরাক উপত্যকার প্রত্যেক এলাকায় বিশেষ নজরদারি রাখা হবে।’
অবশ্যই সেটা ছিল নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অনেক সময় সরকার গঠনের পর ক্ষমতায় থাকা দল ভুলে যায়। তবে বরাক উপত্যকায় নারকটিক বিভাগ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা সত্যিই রয়েছে। এলাকার যুব সমাজের একটা বড় অংশ ড্রাগসের কবলে চলে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় সিগারেট-গুটকার সঙ্গে প্রকাশ্যে ড্রাগস বিক্রি হয়। পুলিশ প্রকাশ্যে এমন লোককে অনেক বার আটক করেছে, কিন্তু এতে সরকারের টনক নড়েনি।
একসময় বিএসএফের তরফে জানানো হয়েছিল, ড্রাগস পাচারকারীরা নিত্যনতুন পদ্ধতিতে তাদের পাচারকার্য চালিয়ে যায়। ড্রাগস পাচারকারীরা সীমান্তের এপারে দাঁড়িয়ে ঢিল ছোড়ে ওপারের ড্রাগস পাঠিয়ে দিত। ওপার থেকে পাথরে বেঁধে টাকা এদিকে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এমন আরও অনেক পদ্ধতির মাধ্যমে পাচার হয়েছে এবং অনেক সময় সেগুলো ভেস্তে দিয়েছে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীরা। সরকার যখন সারা রাজ্যে ড্রাগসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে বলে ফলাও করে প্রচার করছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আশ্বাস পালনে এখনও কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সরকারকে। শনিবার আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবসে বরাক উপত্যকায় অন্তত এটুকু আক্ষেপ থেকেই যাবে।
Comments are closed.