
বিধায়কের বিরোধিতা করায় গ্রেফতার ছাত্র, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ, বাধ্য হয়ে মুক্ত করল পুলিশ
গতকাল কালাইন-লক্ষীপুরে ট্রাকের ধাক্কায় পাঁচ পড়ুয়ার মৃত্যুর পর এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ঘটনার দুই ঘন্টা পর স্থানীয় বিধায়ক অমর চাঁদ জৈন এলাকায় এলে অনেকেই ক্ষুব্ধ হন এবং তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সেদিন রাতে স্থানীয় এক পড়ুয়া শিবলী বরভুঁইয়ার নামে এজাহার দায়ের করেন বিধায়ক অমর চাঁদ জৈন এবং ছাত্রটিকে আটক করে পুলিশ। এতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয় পড়ুয়ারা, দ্রুতগামী গাড়ির চাকায় পাঁচ ছাত্রের মৃত্যুর পর চালকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এতে ছাত্ররা কালাইন সহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। শেষমেষ বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেফতার করা ছাত্রটিকে ছাড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। তবে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়নি; পড়ুয়াদের দাবি, আগে গ্রেফতার হওয়া ছাত্রটি স্বাভাবিকভাবে কলেজে এসে ঢুকবে এরপর অবরোধ তুলে নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটিগড়া বদরপুর সহ বরাকের বিভিন্ন এলাকার ছাত্ররা ‘জাস্টিস ফর শিবলী বরভুঁইয়া’ বলে পোস্ট দিতে থাকেন। এর কারণ হচ্ছে বুধবার রাতে ছাত্রটিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে নাকি জনপ্রতিনিধিকে আক্রমণ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে সে আর পাঁচজন মানুষের সঙ্গে মিলে বিধায়কের বিরুদ্ধে ছিল, অবশ্যই সেটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে জানা গেছে বিধায়ক অমর চাঁদ জৈন নাকি বুধবার রাতে তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতেই গ্রেফতার। শিবলী বরভুঁইয়া নিজেও বদরপুর নবীনচন্দ্র কলেজের একজন ছাত্র। তার সহপাঠী পাঁচজন গাড়ির চাকায় পিষে মারা গেছেন, আর স্থানীয় বিধায়ক এলাকায় পৌঁছতে অনেক বেশি দেরি করেছেন, এতেই প্রতিবাদ করেছিল সে। শুধুমাত্র একা প্রতিবাদ করেনি, এলাকার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন এবং বিধায়ককে পুলিশের পাহারার মাধ্যমে এলাকা থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল, এমনটাই বলেছেন অনেক প্রত্যক্ষদর্শীরা।
শিবলী বরভুঁইয়ার গ্রেফতার হওয়ার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্ররা জোরালো আওয়াজ তোলে। কালাইন, কাটিগড়া, বদরপুর, নিলামবাজার ইত্যাদি এলাকায় তারা রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধ করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেব সহ অনেক রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তারা সরাসরি প্রশ্ন করেন গণতন্ত্রে ছাত্রদের উপর এভাবে আঘাত কেন করছে পুলিশ?
সুস্মিতা দেব বলেন, “মূল ঘটনায় দোষীদের ধরতে পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ছে না অথচ তারা প্রতিবাদকারী ছাত্রকে গ্রেফতার করছে। এতে কি প্রমাণ হয়, কি তাদের উদ্দেশ্য? আমরা সরাসরি পুলিশের আধিকারিকদের কাছে প্রশ্ন করেছি, তারা উত্তর দিতে পারেননি। জেলায় একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, এছাড়া অপরাধমূলক কাজ অনেক বেড়ে গিয়েছে, কোনও ক্ষেত্রে পুলিশ অপরাধীকে ধরতে পারে না। একজন পড়ুয়া, যে নিজে ভোটদাতাও, তার অধিকার রয়েছে জনপ্রতিনিধির সমালোচনা করা, প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার। এতে গ্রেফতার করার মতো কোনো পরিস্থিতি এখন দেশে নেই। হয়ত মূল বিষয় থেকে মোড় ঘুরিয়ে দিতেই এধরনের কার্যকলাপ চলছে। অথবা বিধায়কের নির্দেশে পুলিশ কাজটি করেছে। দুই ক্ষেত্রেই আমরা তাদের তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে শিবলী বরভুঁইয়াকে মুক্ত করে পুলিশ। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, গ্রেফতার নয় শিবলী বরভুঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, এতে অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই।
তবে পড়ুয়ারা এখনই অবরোধ তুলে দিতে নারাজ। তাদের দাবি, যখন শিবলী বরভুঁইয়ার ওপর থেকে সব ধরনের অভিযোগ প্রত্যাহার করে তাকে মুক্ত করা হবে এবং সে স্বাভাবিকভাবে কলেজে ফিরবে, তখন অবরোধ প্রত্যাহার হবে। তারা বলেন, “আমাদের চোখের সামনে পাঁচ সহপাঠীকে নৃশংসভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে, অথচ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিলেন না পুলিশ প্রশাসন এবং আমাদের জনপ্রতিনিধিরা। উল্টো আরেক ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং তাকে আটক করল পুলিশ। এমন ব্যবহার কেন হবে, ছাত্ররা এটা মেনে নিতে পারবে না। আমাদের দাবি, শিবলী বরভুঁইয়ার বিরুদ্ধে যে এজাহার দায়ের করা হয়েছে সেটা প্রত্যাহার করতে হবে, তাকে মুক্ত করে স্ব-সম্মানে ফিরিয়ে দিতে হবে, সে যখন স্বাভাবিকভাবে কলেজে এসে ঢুকবে, আমরা অবরোধ প্রত্যাহার করব। তবে আপাতত সড়ক অবরোধ তুলে দিলেও আমাদের পাঁচ সহপাঠির মৃত্যুর ঘটনা ভুলে যাচ্ছি না। অপরাধীকে শাস্তি দিয়ে আগামীতে এধরনের ঘটনা বন্ধ করা না করলে ছাত্ররা এবার উপত্যকা জুড়ে উত্তাল আন্দোলন করবে।”
Comments are closed.