Also read in

"গুয়াহাটিতে বসেই থানার পর্যবেক্ষণ করবেন ডিজিপি-মুখ্যমন্ত্রী", উধারবন্দে মৈত্রী প্রকল্পের থানা উদ্বোধনে সর্বানন্দ

অসম সরকারের মৈত্রী প্রকল্পের অধীনে ৭৩টি পুলিশ থানাকে উন্নতমানের রূপ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে বরাক উপত্যকার পাঁচটি থানাকে উন্নত করা হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে কাছাড়ের উধারবন্দ, জয়পুর ও ধলাই সহ বদরপুর এবং হাইলাকান্দি থানা। রবিবার এই পাঁচটি থানা উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। এদিন প্রথমে উধারবন্দ এবং জয়পুর থানা উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। সেখানে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন আগামীতে রাজ্যের প্রত্যেকটি থানা মৈত্রী প্রকল্পের অধীনে নতুন রূপে সেজে উঠবে।

তিনি বলেন, “২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই স্বপ্ন দেখেছিলেন সারাদেশের পুলিশ স্মার্ট হবে অর্থাৎ প্রযুক্তিগতভাবে তাদের উন্নত করা হবে। তার স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তব হতে শুরু করেছে। আমরা রাজ্যের ৩৪৪টি থানাকে অত্যাধুনিক রূপ দিয়ে, প্রযুক্তিগতভাবে এগুলোকে স্মার্ট করে তুলবো, ইতিমধ্যে ৭৩টি থানা স্মার্ট হয়েছে। একসময় গুয়াহাটিতে বসেই সারা রাজ্যের থানার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারব আমরা। তাদের সমস্যাগুলো সরাসরি শুনে সমাধান করতে পারব, ফলে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক উন্নত হবে। রাজ্যের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে বরাক উপত্যকায় প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি থানা নতুন রূপ পেয়েছে। আগামীতে আরও থানা এই প্রকল্পের আওতায় আসবে। আমরা প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছি বরাক এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। অতীতে কংগ্রেস সরকার এই এলাকাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অন্ধকারে রেখেছে। ভালো রাস্তা থেকে শুরু করে কোনও প্রকল্প বরাক উপত্যকায় আসতে দেওয়া হয়নি। অথচ গত সাড়ে চার বছরে উপত্যকা বিভিন্ন দিক থেকে দেশের যেকোনও উন্নত এলাকার সমকক্ষ হয়ে উঠতে পেরেছে। তবে এখনও অনেক দিক বাকি রয়েছে, যেগুলো আমরা আগামী পাঁচ বছরে সম্পন্ন করব।
বরাক নদীকে জলপথের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করা হবে, এখানে লজিস্টিক পার্ক বানানো হবে, এলাকায় উৎপাদন বৃদ্ধি হবে এবং এখানে উৎপাদিত সামগ্রী বিদেশে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আমরা শুধু মুখে কথা বলে মানুষের বাহবা কুড়োই না, কাজের মাধ্যমে জনগণকে তাদের প্রাপ্যটুকু ফিরিয়ে দিই। আজকের প্রজন্ম অনেক স্মার্ট, তারা নিজের চোখে যেটা দেখে সেটাই বিশ্বাস করে। আমরা গত সাড়ে চার বছরে দুই উপত্যকার যুব সমাজের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছি।”

এদিন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগ দেন বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, অসম পুলিশের ডিজিপি ভাস্কর জ্যোতি মোহন্ত, সাংসদ রাজদীপ রায়, কাছাড় জেলার প্রত্যেক সমষ্টির বিধায়ক, পুলিশ সুপার বিএল মিনা, জেলাশাসক কীর্তি জল্লি সহ অন্যান্যরা।

ডিজিপি ভাস্কর জ্যোতি মোহন্ত বলেন, “আমরা চাই রাজ্যের প্রত্যেক থানাকে উন্নতমানের রূপ দিয়ে ই-কানেক্টের মাধ্যমে সেগুলোকে একসূত্রে জুড়ে দিতে। আমি বা মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল নিজে তার কার্যালয়ে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রত্যেক থানার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারব। ভারতবর্ষে এখনো কোন রাজ্যে এমন ব্যবস্থা নেই।

অতীতে বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে কথা হয়েছে তবে কোনও সরকার এতটা কঠোর মনোভাব নিয়ে সেগুলো দমনের চেষ্টা করেনি। ২০১৬ সালের আগের পাঁচ বছরে রাজ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিভিন্ন ঘটনায় তিনশোর বেশি ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, অথচ গত সাড়ে চার বছরে এই সংখ্যা শূন্য। আমার মনে হয় এটা একটা রেকর্ড যা গিনিজ বুকে স্থান পাওয়ার যোগ্য। এপিএসসি হোক বা পুলিশের পরীক্ষা, যেখানে দুর্নীতি ধরা পড়েছে একেবারে উচ্চপদস্থ আধিকারিক থেকে শুরু করে এসব কাজে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতি রোধ করতে পরীক্ষা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা এমন কাজ করলে পুলিশের সাহস বাড়ে, আমরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি। রাজ্যের পুলিশকে স্মার্ট করে তুলতে যত টাকার প্রয়োজন ততটাই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। শুধু থানাগুলো বানানো নয় পরবর্তীতে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা তহবিল গঠন করা হয়েছে। আমি এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে কথা দিচ্ছি, আপনি আমাদের শক্ত করে তুলেছেন, আমরাও আইন ব্যবস্থাকে দৃঢ় হাতে সামলে রাজ্যকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবো।”

এদিন কাছাড় জেলার পুলিশ সুপার অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ রাখেন। বাঙালি না হয়েও তিনি পুরো ভাষণ বাংলায় দেন, অতীতে জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরি এমনটা করেছিলেন।

উধারবন্দ থানায় বসেই মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য অতিথিরা জয়পুর থানার উদ্বোধন করেন। এরপর তারা ধলাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেখানে আরও তিনটি থানা সহ বায়ো-ডাইভারসিটি পার্ক উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

Comments are closed.