বরাক বইমেলা-২০১৯ প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি
শেষ হল “ বরাক বইমেলা- ২০১৯” । বরাক উপত্যকার প্রধান শহর শিলচরের সার্কিট হাউস রোডের বিপিন পাল সভা স্থলে আয়োজিত এই মেলার সমাপ্তি সভায় আয়োজকদের মনে বিসর্জনের চাঁপা কান্না । ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু করে ২৪ নভেম্বর , দশ দিনের এই মেলাকে কেন্দ্র করে চলে কত আয়োজন বছর ব্যাপী । বই মেলা সাধারণত প্রকাশকেরা আয়োজন করেন, এতে থাকে ব্যবসায়িক লাভ ক্ষতির অঙ্ক । প্রকাশকদের আয়োজিত মেলায় থাকে সরকারি অনুদান। বরাক বইমেলার আয়োজক বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন ( বরাক বঙ্গ) নিজে প্রকাশন সংস্থা নয় , বই মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে কোন সরকারি অনুদানও পায় না। তবু আয়োজকদের মেলাকে সফল করতে আন্তরিকতার কোন অভাব থাকে না। বরাক বঙ্গ বইমেলা আয়োজনকে সামাজিক- সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতা হিসাবে মেনে নিয়েছে।
মেলায় কোন প্রবেশমূল্য নেই , ছাত্র ছাত্রীদের বই কেনার জন্য উৎসাহিত করতে নানাবিধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীদের দুই শত টাকার পছন্দের বই কেনার কুপন দেওয়া হয় , মহিলাদের মেলামুখী করতে রন্ধন প্রতিযোগিতা সহ প্রতি সন্ধ্যায় বর্ণময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মনোজ্ঞ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৯ , সময়ের হিসাবে এক যুগ পার করে পেছন ফিরে তাকালে মনে পড়ে ডাক বাংলোর ছোট পরিসর অতিক্রম করে বিপিন পাল সভাস্থলের বড় পরিসরে উত্তরণের সংগ্রামের কথা । ২০০৯ সালে এন বি টির ( ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট) সহযোগী হয়ে জাতীয়স্তরের বইমেলার সফল আয়োজনের অভিজ্ঞতা এবং ২০১৯ এ প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশের প্রায় ১৫টি প্রকাশনার যোগদানে বইমেলার আন্তর্জাতিক চেহারা পাওয়ার পেছনে এই উপত্যকার সাহিত্য সংস্কৃতি প্রসারে আয়োজকদের দায়বদ্ধতাই প্রমাণিত। পঞ্চাশটিরও বেশি প্রকাশক / বই বিপণী সংস্থাকে নিয়ে আসামের এক প্রান্তিক জেলা শহরে বই মেলার আয়োজন অনেক বড় কথা। বরাক উপত্যকার নিজস্ব প্রকাশনার সম্ভার নিয়ে ব্যাতায়ন , সৃজন, বিন্ধিয়ারা ডালা সাজিয়েছিল ।
দশদিনের বই মেলা উদ্বোধনের মুখ্য অতিথি তথা উদ্বোধকের এবং বিশেষ অতিথির বক্তব্য এতটাই পরিমিত এবং পরিণত ছিল যে শুরুতেই ২০১৯ এর বইমেলা উঁচু মাত্রায় পৌঁছে গিয়ে বিরাট প্রত্যাশা তৈরি করেছিল । উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কথা সাহিত্যিক সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্যামল ভট্টাচার্য এবং বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস উপদেষ্টা ঋষিকেষ গোস্বামী মহাশয় । বইমেলায় বেশ কয়েকটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসামের বর্তমান অস্থিরতা ও অস্তিত্বের সংকট বিষয়ক , বরাকের অর্থনীতির দিশা অন্বেষণ বিষয়ক ইত্যাদি। বিদ্যাসাগরের দ্বিশততম জন্ম বছর উপলক্ষে সাহিত্য বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় বইমেলায় । কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বক্তা হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন বিষয়ে তাদের চিন্তা ভাবনা জানা এবং অনুধাবনের চেষ্টা করা হয় ।তাছাড়া বহুভাষিক কবি সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়।সাহিত্য উপসমিতির আহবানে বাংলা নেপালি হিন্দি অসমিয়া সহ বহুভাষিক কবি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় সর্বাধিক নম্বর পাওয়ার জন্য বিশাল পুরকায়স্থকে অনুরূপা বিশ্বাস স্মৃতি সম্মানে সম্মানিত করা হয়। বইমেলার মুক্তমঞ্চ প্রয়াত প্রকৌশলী আশিস গুপ্তের নামে নামকরণ করা হয় ।
সমাপ্তি সভায় “ বইকথা” নামক ক্রোড়পত্রের উন্মোচন করা হয়। সমাপনী সভায় মুখ্য অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আসাম সরকারের মাননীয় মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, সম্মানিত অতিথি শিবাজি বন্দোপাধ্যায়, ডিরেক্টর এন আই টি, শিলচর। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ ডঃ রাজদীপ রায় ও শিলচর পুরসভার সভাপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। আগামী বছরগুলোতে আরো বড় আকারের বইমেলা আয়োজন করা হবে বলে আয়োজক সংগঠন আশাবাদী ।
Comments are closed.