Also read in

এবার পজিটিভ গ্রীন হিলস হাসপাতালের কর্ণধার রুদ্র নারায়ণ গুপ্ত এবং চিকিৎসক মনিকা দেব

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন গ্রীন হিলস হাসপাতালের কর্ণধার রুদ্র নারায়ণ গুপ্ত এবং চিকিৎসক মনিকা দেব সহ আরও কয়েকজন। সোমবার সকালে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট ১২ জন ব্যক্তি নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ মনিকা দেব সহ অন্যান্যরা।

রুদ্র নারায়ণ গুপ্ত গ্রীন হিলস হাসপাতালে ডিরেক্টর হওয়ার পাশাপাশি রামানুজ গুপ্ত জুনিয়র কলেজ এবং রামানুজ বিদ্যাপীঠেরও কর্ণধার। তিনি পজিটিভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গত কয়েকদিন তার সংস্পর্শে যারা এসেছেন প্রত্যেকের তালিকা তৈরি করেছেন এবং তাদের সঙ্গে কিভাবে এবং কোথায় দেখা হয়েছিল এটাও স্পষ্ট করেছেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, “একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের এইটুকু কাজ করা উচিত। আমি ছাড়াও আমার হাসপাতালের কয়েকজন কর্মী পজিটিভ হয়েছেন। আমরা প্রত্যেকেই সুস্থ হয়ে ফিরব এবং কিভাবে ভাইরাসের সংক্রমণ আটকানো যায় এ নিয়ে প্রশাসনকে পুরোপুরি ভাবে সাহায্য করবো।” তিনি আরও বলেন, “এই দুঃসময়ে আমরা চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করিনি, বিপদ রয়েছে জেনেও আমরা সব ধরনের সাবধানতা বজায় রেখে ঘর থেকে বেরিয়েছি। জানিনা কার সংস্পর্শে আমাদের হাসপাতালে সংক্রমণ হয়েছে, তবে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির পরীক্ষা করানো হচ্ছে। কোনভাবেই কেউ যেন বাকি না থাকে, সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি আক্রান্ত হওয়া চিকিৎসক ওরিনা রাহা গ্রীন হিলস হাসপাতলে একটি অপারেশন করেছিলেন। এরপর এই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে কাজ করা একজন মাসি এবং আরেক টেকনিশিয়ান পজিটিভ হন। এবার হাসপাতালের কর্ণধার রুদ্র নারায়ণ গুপ্ত নিজে পজিটিভ হয়েছেন।

এদিকে প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ মনিকা দেবেরও করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, গ্রীন হিলস এবং শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ আরো কয়েকটি জায়গায় তিনি রোগী দেখেছেন। ডাঃ ওরিনা রাহা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি নিজেই এগিয়ে এসে সোয়াব স্যাম্পল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এবার তার পজিটিভ আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজের একটি কন্টাক্ট লিস্ট তৈরি করেছেন। সম্প্রতি কয়েকদিনে তিনি যেসব রোগীর বা হাসপাতাল কর্মীর সংস্পর্শে এসেছেন প্রত্যেকের তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্যবিভাগের কাছে তুলে দিচ্ছেন। তার কথায়, “আমি যেসব রোগীদের দেখি তাদের আটকে রাখার মত কোন পদ্ধতি নেই। ফলে আমাকে চিকিৎসার কাজ শুরু করতেই হয়েছিল। আমরা অত্যন্ত সাবধানতার মধ্য দিয়ে কাজটি করেছি। এবার পজিটিভ হওয়ার ফলে খুব একটা ভয় পাচ্ছি না, কারণ আমি অ্যাসিম্পটোমেটিক। আমার সংস্পর্শে যারা এসেছেন প্রত্যেকের কাছে খবরটি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, তারা যেন সাবধান হয়ে পড়েন। অকারনে ভয় পেয়ে কেউ যেন লুকিয়ে না থাকেন। সন্দেহ থাকলে সামনে এসে টেস্ট করান এবং পজিটিভ হলে চিকিৎসা অংশ নিন।”

চিকিৎসক এবং হাসপাতালের কর্ণধার পজিটিভ হয়েছেন, এই খবর বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই শিলচর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক তথা শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা গোষ্ঠী সংক্রমনের প্রথম পর্যায়ে ঢুকে পড়েছি, এটা পরিষ্কার। শুধুমাত্র শিলচর শহর নয়, সারা রাজ্যে পরিস্থিতি প্রায় এক। ফলে এখন আমাদের প্রত্যেককে আরো বেশি সাবধান হতে হবে। এখন পরিস্থিতি এমন যে আমাদের ছোট থেকে ছোট ভুল বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। একজন চিকিৎসক পজিটিভ হওয়ার পর তার সংস্পর্শে আসা প্রত্যেক রোগীর পরীক্ষা হবে এটাই এখন নিয়ম। গ্রীন হিলস হাসপাতালের কর্ণধার রুদ্র নারায়ণ গুপ্ত একজন দায়িত্ববান নাগরিক, তার স্ত্রী চিকিৎসক এবং করোনা যোদ্ধা। তারা এই পরিস্থিতিতে সমাজের সেবা দিয়ে গেছেন এবং আজ একজন পজিটিভ হয়েছেন। সমাজের দায়িত্ববান মানুষ হিসেবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা কাউকে অকারণে দোষারোপ করব না। পারলে তাদের পাশে দাঁড়াবো এবং এর থেকে প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে নিজেরা সচেতন থাকবো।

Comments are closed.