Also read in

ইউরো কাপ থেকে কোপা আমেরিকা, করোনাকালে একমাসের ফুটবল উৎসব

করোনার জন্য গতবছর কোপা আমেরিকা ও ইউরো কাপ দুটোই স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। ফলে লকডাউনে গৃহবন্দি অবস্থায় থাকাকালীন ফুটবলের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা। তবে এবার সুদে-আসলে তাদের সেই আক্ষেপ মিটে যাচ্ছে। শুক্রবার থেকে টানা এক মাস ফুটবল জ্বরে কাবু হয়ে পড়বে গোটা বিশ্ব। কারণ শুক্রবার ভারতীয় সময় অনুসারে রাত সাড়ে বারোটায় শুরু হয়ে যাবে ইউরোপীয় ফুটবলের মহাযজ্ঞ ইউরো কাপ। আর দুদিন বাদে লাতিন আমেরিকায় শুরু হবে কোপা আমেরিকা। এই দুইটি টুর্নামেন্ট দেখার জন্য আর তর সইছেনা ফুটবল পিপাসুদের।

মহামারী করোনার প্রকোপ এখনও অনেক দেশেই রয়েছে। তবে ভালো কথা হচ্ছে অধিকাংশ দেশেই দৈনিক সংক্রমণের হার ক্রমশই কমছে। ইউরোপের দেশগুলোতে তো পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে করোনার আতঙ্ক এখনো বিরাজমান। তাই ইউরো কাপের ম্যাচ গুলিতে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে সেটা কোনও ব্যাপার নয়। আসল ব্যাপার হচ্ছে বিশ্বকাপের পর ফের একবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেখা যাবে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, লিওনেল মেসি,কাইলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমার, করিম বেঞ্জেমা এবং লুইস সুয়ারেজের মত সুপারস্টারদের। তাও টানা একমাস! ফুটবল পিপাসুদের জন্য তো আগামী একমাস ফুটবল উৎসব। যেখানে একদিকে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব লড়াইয়ের মঞ্চে লড়বেন রোনাল্ডো-এমবাপে রা। অন্যদিকে, লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য মাঠে নামবেন মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফুটবলের ম্যাচ মানেই সময়ের একটা সমস্যা। বিশেষ করে ভারতীয়দের জন্য। তবে এখন আর সেই দিন নেই। এখন তো স্প্যানিশ লা লিগা এবং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ গুলির সুচি ভারতীয় দর্শকদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়। ঠিক সেইভাবেই এবারও কোপা আমেরিকা ও ইউরো কাপের সূচি তৈরি করা হয়েছে। ১১ জুন থেকে ইউরো কাপের ম্যাচ গুলির সময় হচ্ছে , সন্ধ্যে ৬:৩০, রাত ৯:৩০ ও রাত ১২:৩০। অন্যদিকে, কোপা আমেরিকার ম্যাচ গুলি হবে রাত ২:৩০ ও ভোর ৫:৩০ এ। ইউরোর ম্যাচ গুলি নিয়ে ভারতীয় দর্শকদের কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। এটা ভারতীয়দের জন্য পারফেক্ট টাইমিং। তবে হ্যাঁ, কোপার দর্শকদের জন্য সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এরও একটা সমাধান রয়েছে। সেটা হচ্ছে রাত সাড়ে বারোটায় ইউরো কাপের ম্যাচ দেখার পর রাত ২:৩০ এ কোপার ম্যাচ উপভোগ করতে পারবেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা। সত্তিকারের অর্থেই এটা সনে পে সুহাগা।

ইউরো কাপ এবং কোপা আমেরিকার ম্যাচ গুলি দেখা যাবে সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্কে। বেশ কিছু সময় থেকেই এই দুটি টুর্নামেন্টের প্রমো আসছিল সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্কে। কাজেই দুটি টুর্নামেন্ট কে ঘিরে গোটা বিশ্বেই দারুন একটা হাইপ তৈরি হয়েছে। ইউরোর মঞ্চে ফেবারিট এর তালিকায় রয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, চার বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি এবং তারকাসমৃদ্ধ বিশ্বের এক নম্বর বেলজিয়াম। এর বাইরে ও ইংল্যান্ড, ইতালি এবং স্পেনের হয়ে বাজি ধরছেন ফুটবলপ্রেমীরা।

দারুন একটা দল পর্তুগালের। যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। এই মুহূর্তে দারুন ছন্দে রয়েছে ফার্নান্দো সান্তোসের ছেলেরা। প্রস্তুতি ম্যাচে স্পেনের বিরুদ্ধে ড্র করার পর ইজরাইলকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে পর্তুগিজরা। এ মরশুমে তার ক্লাব জুভেন্তাস ব্যর্থ হলেও রোনাল্ডো কিন্তু ছিলেন মেজাজে। তাই এবার ইউরোপে খেতাব ধরে রাখার জন্য তিনি নিজের সেরাটা নিংড়ে দিতে চাইবেন। আর পাঁচটা গোল করলেই ফুটবল ইতিহাসে দেশের হয়ে টপ স্কোরার এর রেকর্ড করে ফেলবেন সিআর সেভেন। তবে পর্তুগাল শুধু রোনাল্ডো নির্ভর নয়। দলটা তে রয়েছেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ, জোয়াও ক্যান্সলো, জোয়াও ফেলিক্স, রুবেন ডায়াস, বার্নার্দো সিলভা এবং পেপের মতো তারকারা।

দল হিসাবে খুব একটা পিছিয়ে নেই জার্মানি ও। কোচ হিসেবে জোয়াকিম লোর এটাই শেষ এসাইনমেন্ট। তাই জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ী কোচ শেষটাও ট্রফি দিয়েই করতে চাইবেন। জার্মান দলে রয়েছেন একাধিক সুপারস্টার। থমাস মুলার, টিমো ওয়ের্নার, টনি ক্রুস, ইকাই গুন্ডহয়েন, জোশুয়া কিমিচ, মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন, ম্যানুয়েল নয়্যার, নরে সানে ও গ্রীনবের মতো ম্যাচ উইনার রা।

এবার আসা যাক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স দলে। কে নেই ফরাসি দলটা তে? করিম বেঞ্জেমা থেকে শুরু করে কিলিয়ান এমবাপে, অলিভার জিরুদ, আন্তোনিও গ্রিজম্যান, পল পগবা, হুগো লরিস, ওসমান ডেম্বেলে, রাফায়েল ভারানে, তুলিসোও এবং স্যামুয়েল উমিতি। তবে সম্ভবত এই মুহূর্তে ফরাসি দলের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার ভার্সেটাইল অ্যাঙ্গলো কন্তে। সম্প্রতি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে চেলসি। ‌ এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল কনতের। মূলত একজন মিডফিল্ডার হলেও গোটা মাঠ জুড়ে খেলতে পারেন। ডিফেন্সিভ এবং অফেন্সিভ দুটো দায়িত্বই পালন করতে পারেন।

দারুন একটা স্কোয়াড রয়েছে ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালি এবং বেলজিয়ামের ও। সম্ভবত এই ইউরো কাপের সবচেয়ে তারকাসমৃদ্ধ দল বেলজিয়াম। দেশের সোনালী প্রজন্মের ফুটবলাররা রয়েছেন মার্টিনেজ এর হাতে। তবে একটা তারকাখচিত দল হয়েও এডেন হ্যাজার্ডের হাতে কোনো ট্রফি নেই। স্পেন এবার একটা নতুন প্রজন্মের দল নিয়ে খেলতে নামবে। শেষবার বিশ্বকাপে তারা নিরাশা জনক পারফরম্যান্স করেছিল। তাই এবার ইউরো কাপ দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে স্প্যানিশরা। কেন জানিনা প্রত্যেকটি বড় টুর্নামেন্ট এর আগেই ইংল্যান্ডকে ফেভারিট এ তালিকায় রাখা হয়। ব্রিটিশ মিডিয়া তো যেন পাগল হয়ে যায় তাদের দলকে নিয়ে। তবে এবার সত্যিকার অর্থেই একটা দারুণ স্কোয়াড রয়েছে গ্যারেথ সাউথগেটের হাতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে গ্রুপ স্তরের প্রতিটি ম্যাচ তারা নিজেদের ঘরের মাঠে খেলবে। আর ফাইনাল টাও হবে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। তাই হেরি কেন, ফিল ফোডেনরা ঘরের মাঠে ইউরো জিততে মরিয়া থাকবেন। শুক্রবার রাত সাড়ে বারোটায় তুরস্ক ম্যাচ দিয়ে অভিযান শুরু করবে ইতালি। এটাই টুর্নামেন্ট ওপেনার।

ইউরো কাপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লড়াই গুলি হল ইংল্যান্ড ক্রোয়েশিয়া (১৩ জুন, সন্ধ্যে ৬:৩০), বেলজিয়াম রাশিয়া (১২ জুন,১২:৩০), হলান্ড ইউক্রেন (১৩ জুন, ১২:৩০), স্পেন সুইডেন (১৪ জুন, ১২:৩০), হাঙ্গেরি পর্তুগাল (১৫ জুন, ৯:৩০), ফ্রান্স জার্মানি (১৫ জুন,১২:৩০), ইতালি সুইজারল্যান্ড (১৬ জুন, ১২:৩০), ক্রোয়েশিয়া চেক প্রজাতন্ত্র (১৮ জুন, ৯:৩০), পর্তুগাল জার্মানি (৯:৩০), ইতালি ওয়েলস (২০ জুন, ৯:৩০) এবং পর্তুগাল ফ্রান্স (২৩ জুন, ১২:৩০)।

অন্যদিকে, কোপা আমেরিকায় জমজমাট লড়াইয়ে ফেভারিট হিসেবে নামবে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে এবং চিলি। এরমধ্যে এগিয়ে ব্রাজিল। ‌ যদিও দল হিসেবে ফুটবল বিশেষজ্ঞরা আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে রাখছেন। ‌ তবে ট্রফির খরা কাটাতে হলে মেসি নির্ভর ফুটবল খেললে হবে না।‌ আর্জেন্টিনাকে খেলতে হবে দল হিসাবে। দল হিসেবে খেলতে পারলে মেসি ও নিজের স্বাভাবিক ফুটবল খেলতে পারবেন। তখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে আর্জেন্টিনা। সব মিলিয়ে ইউরো কাপ এবং কোপা আমেরিকার জ্বরে কাবু গোটা বিশ্ব। আগামী এক মাস এই ফুটবল উৎসবের প্রতিটি মুহূর্ত চুটিয়ে উপভোগ করতে চাইবেন ফুটবল পিপাসুরা।

Comments are closed.

error: Content is protected !!