Also read in

"এখনই বিদ্যালয় খুলে ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন বিপন্ন করবেন না," স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন প্রদীপ দত্ত রায়ের

সম্প্রতি আমেরিকায় স্কুল-কলেজ খোলার পর দুই সপ্তাহের মধ্যে বাহাত্তর হাজার ছাত্র-ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে প্রায় তিনলক্ষ ছাত্র ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাই আমি মনে করি অন্তত একটা শিক্ষাবর্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের চেয়ে মূল্যবান নয়। একটা শিক্ষাবর্ষ বাদ গেলে তাদের জীবনে এমন কোনও ক্ষতি হয়ে যাবে না যেটা তাদের জীবনের থেকে বেশি মূল্যবান। অতীতে আসুর আন্দোলনের ফলে একটা শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হয়েছিল, তাতে রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি, তারা আবার উঠে দাঁড়িয়েছিল। এখন সারা বিশ্বে মহামারী চলছে এই সময়ে বিদ্যালয় খুললে ছাত্র-ছাত্রীদের চরম বিপদের দিকে এগিয়ে দেওয়া হবে, এমনটাই মনে করেন বরিষ্ঠ সমাজসেবী তথা গোহাটি হাইকোর্টের প্রাক্তন আইনজীবী প্রদীপ দত্ত রায়।

শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ সিদ্ধান্তের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা শুনেছি, পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যের প্রত্যেক স্তরে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি খোলার কথা ভাবছেন রাজ্যসরকার। আমার মনে হয় এখনই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। কেননা, এখনও করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই অবস্থায় স্কুল-কলেজ খুললে পরে পড়ুয়াদের সুরক্ষা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকে যাবে। তাই রাজ্য সরকারের কাছে আমার প্রস্তাব, ব্যাপারটা আপনারা চিন্তা করে দেখুন আমার কাছে বহু অভিভাবক এবং ছাত্র ছাত্রী এব্যাপারে কথা বলেছে এবং আগ্রহ প্রকাশ করেছে, আমি যেন সরকারের কাছে বার্তা টুকু পাঠাই।

শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার কাছে আমার অনুরোধ, আপনি ব্যাপারটা নিয়ে আরেকটু পর্যালোচনা করুন, কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে কথা বলুন এবং সারা বিশ্বে বিদ্যালয় খোলার পর কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে সেটা ভেবে দেখুন। যেভাবে প্রত্যেকদিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় খোলা কতটুকু সঠিক সিদ্ধান্ত হবে এটা বিবেচনা করুন।”

পাশাপাশি তিনি সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বরাক উপত্যকার যুবসমাজের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ আবার তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন এলপি এবং এমই স্তরে শিক্ষক নিয়োগ হবে, তবে প্রত্যেকবার সরকারের এধরনের সিদ্ধান্তে বরাক উপত্যকার যুবক-যুবতীরা বঞ্চিত হয়, এটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি প্রায় হাজারখানেক চাকরি হয়েছে যেখানে বরাক উপত্যকার যুবক-যুবতীরা সুযোগ পায়নি। স্বাস্থ্য দপ্তরে ৩০০ চাকরি হয়েছে, জল সম্পদ বিভাগে ২০০ চাকরি হয়েছে, এমনকি কৃষি দপ্তরে ১৩৭ জনের চাকরি হয়েছে, কিন্তু এই তালিকায় বরাক উপত্যকায় একটি ছেলে-মেয়েও স্থান পায়নি। এভাবে যদি বরাকের প্রতি বঞ্চণা চলতে থাকে তাহলে এখানকার যুবক-যুবতীরা কোথায় যাবে? এখানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দেড় লক্ষেরও বেশি, ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ, করে এমএ পাস করে, বিএ পাস করে পর্যাপ্ত যোগ্যতা নিয়ে তারা ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী যেন তাদের আর উপেক্ষা না করেন। বরাক উপত্যকার যোগ্য প্রতিনিধিরা যেন তাদের যোগ্যতা দিয়েই সুযোগ পায়, সারা রাজ্যের অংশ হিসেবে বরাক উপত্যকার তিন জেলার যতটুকু পাওয়ার কথা সেই পদটুকু থেকে যেন আমাদের বঞ্চিত করা না হয়। রাজ্যের জনসংখ্যা অন্তত ৩০ শতাংশ বাঙালি, সেই নিরিখে রাজ্যে সব ধরনের সরকারি চাকরির জন্য অন্তত ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ দরকার। সেটা বরাক এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রত্যেক বাঙালির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এব্যাপারে আমি শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

Comments are closed.