ভ্যাকসিন নিতে অনীহা দেখাচ্ছেন কোভিড যোদ্ধারাই! দ্বিতীয়দিন মেডিক্যালে নিলেন ১০ জন, তৃতীয় দিন সিভিলে মাত্র ৮ জন
সারাদেশের প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে কোভিড ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যাকসিন ড্রাইভ শুরু করেছে কেন্দ্র সরকার। ১৬ জানুয়ারি শুরু হওয়া প্রক্রিয়ায় প্রথম অধিকার দেওয়া হয়েছে ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের, তাদের ‘কোভিড যোদ্ধা’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। কাছাড় জেলায় শুধুমাত্র কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। প্রায় এক সপ্তাহে জেলায় মাত্র তিন দিন ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে এবং এতে স্বাস্থ্যকর্মীরা চরম অনীহা দেখাচ্ছেন। অন্তত সরকারিভাবে যে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হচ্ছে এতে এমনটাই পরিষ্কার।
শনিবারের পর কাছাড় জেলায় গত মঙ্গলবার দ্বিতীয়বার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেদিন ৯৭ জন ব্যক্তির ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা ছিল, অথচ মাত্র ১০ জন সেটা নিতে আসেন। বৃহস্পতিবার জেলায় ভ্যাকসিন তৃতীয়বারের মতো প্রদান করা হয়, এদিন সিভিল হাসপাতলে মাত্র ৮ জন লোক ভ্যাকসিন নিয়েছেন। কেন্দ্র সরকারের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি সেন্টারে প্রতিদিন ১০০ জন ব্যক্তি ভ্যাকসিন নেবেন। অথচ স্বাস্থ্যকর্মীদের এতটা অনীহায় অবশ্যই সাধারণ মানুষের প্রতি একটি ভুল বার্তা প্রেরণ করা হচ্ছে।
সরকারের বড় বড় মন্ত্রী থেকে শুরু করে জেলাস্তরের স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক, অনেকেই কোভিড পরিস্থিতিতে নিয়ে নানান বিষয়ে সাধারণ মানুষকে দোষারোপ করেছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞান দিতে পিছপা হননি তারা। অথচ কঠিন পরিস্থিতিতে এই স্বাস্থ্যকর্মীরাই মুখ ফেরাচ্ছেন। কাছাড় জেলা শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সিভিল হাসপাতাল ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরে শুধুমাত্র ডাক্তার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। যাদের ‘কোভিড যোদ্ধা’ বলে এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তারাই ভ্যাকসিন নিতে অনীহা দেখাচ্ছেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সত্যওয়ান জানিয়েছেন, শনিবার ভ্যাকসিন প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর রবিবার এবং সোমবার সেটা দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার আগে থেকে নাম লেখানো অনেকেই ভ্যাকসিন নিতে আসেননি। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাম লেখানো ৯৭ জন ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য কর্মীর মধ্যে মাত্র ১০ জন ভ্যাকসিন নেন। সিভিল হাসপাতালে অবস্থাও প্রায় কাছাকাছি, নাম লেখানো ৭৬ জনের মধ্যে ৩২ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার শিলচর মেডিকেল কলেজে ৬৭ জন ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য কর্মীর নাম উঠে আসে, এর মধ্যে ২৫ জন এগিয়ে এসে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এদিন সিভিল হাসপাতালে ৩৪ জনের নাম উঠে এসেছিল, তবে মাত্র ৮ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
প্রথমদিন অর্থাৎ ১৬ জানুয়ারি সিভিল হাসপাতালে ১০০ জন নাম লেখানো স্বাস্থ্য কর্মীর মধ্যে ৪৬ জন ব্যক্তি ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন এবং শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাম লেখানো ১০১ জনের মধ্যে ৬৬ জন ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। কাউকে জোরকরে ভ্যাকসিন নিতে বলা হচ্ছেনা, তবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনেই ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের এতটা অনীহা অবশ্যই পুরো প্রক্রিয়ার সফলতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া থেকে শুরু করে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ রবি কান্নানের মতো চিকিৎসকরা ভ্যাকসিন নিতে এগিয়ে এসেছিলেন। ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া প্রথমদিন ভ্যাকসিন নিয়ে হাসপাতালে কর্মরত প্রত্যেক ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছিলেন, তারা যেন এতে পিছপা না হন। তবু জেলায় প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে শুরু হওয়া ভ্যাকসিন ড্রাইভ।
সম্প্রতি প্রয়োজনের বেশি ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয় ১০০০টি কোভিড ভ্যাকসিন। এতে সোমবার পুরো প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। মঙ্গলবার প্রক্রিয়া শুরু হলেও শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাম লেখানো ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে মাত্র দশ শতাংশ লোক ভ্যাকসিন নেন।
এদিকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ বাবুল বেজবরুয়া জানিয়েছেন, হাসপাতালের মেশিন খারাপ হয়নি। ভ্যাকসিন ডোজ নষ্ট হওয়ার পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। তবে কি কারণে রয়েছে এটা তিনি স্পষ্ট করে জানান নি, বিভাগীয় স্তরে তদন্ত চলছে, তদন্তের রিপোর্ট এলে পরেই পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে আদতে কি হয়েছিল। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে গুয়াহাটি থেকে একটি বিশেষ দল তদন্তের জন্য শিলচরে পাঠানো হয়েছে। তারা তিন দিন ধরে থাকবে এবং নিরপেক্ষভাবে পুরো ব্যাপারটি খতিয়ে দেখবে। তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আদালতে স্বাস্থ্য বিভাগ দোষী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
Comments are closed.