লায়লাপুরে উড়ছে মিজোরামের ড্রোন ক্যামেরা, তিন কিলোমিটার দখলে, 'আমাদের কি সরকার নেই?', প্রশ্ন স্থানীয়দের
যদিও সরকারের প্রতিনিধিরা বলছেন অসম মিজোরাম-সীমান্ত এলাকায় অসমের জমি দখল করেনি মিজোরাম। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত অধিগ্রহণ হয়েছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে মিজোরামের পক্ষ থেকে কাজটি চলছে। শনিবার রাতের আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনার পর রবিবার দিনের বেলা এলাকায় মিজোরাম থেকে আসা ড্রোন ক্যামেরা চোখে পড়েছে। তার মানে তারা আরও এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে।
এছাড়া ফেসবুক লাইভ করে মিজোরামের অনেকেই অসমের ব্যাপারে নানান কটূক্তি করেন, তারা দাবি করেন অনেক বেশি জায়গা মিজোরামের এবং সেগুলো দখল করেই ছাড়বেন। উল্টোদিকে অসমের দিক থেকে কোনও ক্যামেরা মিজোরাম সীমান্ত পেরিয়ে যেতে পারে না। ওপারে কি হচ্ছে সেটা দেখার অধিকার আসামের নেই, অথচ তারা লাগাতার একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। অবশ্যই এতে সরাসরি মদত যোগাচ্ছে মিজোরামের সরকার।
স্থানীয়দের অভিমত, এধরনের ব্যবহার শুধু কয়েকটি পরিবার নয়, অসম সরকারের জন্য অপমানজনক। বিনা অনুমতিতে রাজ্যের সীমানা ভেতর ড্রোন পাঠিয়ে ভিডিও করছে মিজোরাম, আর আমাদের প্রশাসন এগুলো আটকাতে পারছে না।
উল্লেখ্য, আসাম-মিজোরাম সীমান্ত অঞ্চলে সম্প্রতি অধিগ্রহণের চেষ্টা তীব্রতর হয়েছে। একে তো সরকারি সাহায্যে সীমান্ত এলাকায় নানান হেনস্তার চেষ্টা চলে। লায়লাপুর এলাকার মানুষ এসব সহ্য করেও এলাকায় টিকে আছেন। তবে সম্প্রতি অধিগ্রহণের চেষ্টা এবং স্থানীয়দের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার শেষ রাতে লায়লাপুর এলাকায় জবর দখলের চেষ্টা চালায় মিজোরামের দুষ্কৃতীরা। তারা আসামের জমির ভিতর নিজেদের দখল জাহির করে নিজস্ব সীমান্ত ঘোষণা করে। তবে এলাকার মানুষ একজোট হয়ে এগুলো ভেঙ্গে দিতে সমর্থ হন। বড়োসড়ো গোষ্ঠী সংঘর্ষের সম্ভাবনা এড়াতে পুলিশের দল সেখানে উপস্থিত হয়। তাদের সহায়তায় দিনের বেলা দুষ্কৃতীদের হটিয়ে অধিগ্রহণ তুলে দিতে সমর্থ হন এলাকাবাসীরা। তবে পরিস্থিতি থমথমে ছিল এবং যেকোনো সময় পাল্টা আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এলাকায় পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা হয় কিন্তু রাতেরবেলা দুষ্কৃতীরা অন্তত চারটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দিতে সমর্থ হয়।
এদিন বিকেলে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি মিজোরাম সীমান্তে পরিদর্শনে গেলেও তাকে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। মিজোরাম সীমান্তে তারা প্রবেশ করতেই পারেননি এবং বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে, এমনটা খবর পাওয়া গেছে। যদিও জেলাশাসক এই খবরটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
এলাকায় কড়া পুলিশ পাহারা রয়েছে, পুলিশসুপার বিএল মিনা এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জগদীশ দাসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জগদীশ দাস জানিয়েছেন, এলাকায় কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় রয়েছে, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক কিন্তু দুই দিকেই সাধারন মানুষ জড়ো হয়েছেন। মিজোরামের পুলিশ বাহিনী তাদের দিকে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে এবং আমরা আমাদের দিকে সামাল দিচ্ছি।
দুপুরে বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য এলাকা পরিদর্শন করেছেন, তিনি পরিদর্শনের ফটো ফেসবুকে তুলে ধরেছেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, তিনি কোনও সমস্যা নিয়ে কথা বলেননি, এটি শুধুমাত্র একটি দায়সারা পরিদর্শন ছিল। তার কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আমি এলাকা পরিদর্শন করেছি। তবে এই মুহূর্তে এব্যাপারে কোনো বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা যাবেনা, এমনকি এব্যাপারে মন্তব্য করারও সময় এটা নয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই পরিস্থিতির খবর রাখছেন। আমরা আশা করছি পরিস্থিতি শান্ত হবে।”
এদিন সকালে শিলচরের প্রাক্তন সংসদ সুস্মিতা দেব এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি এই অধিগ্রহণের ঘটনাকে সরাসরি রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা বলে আখ্যা দেন। যাদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে দেখা করে তিনি পুরো ঘটনার বৃত্তান্ত নেন। পরে তিনি বলেন, “আমি আশ্চর্য হচ্ছি যে মিজোরাম সরকার বিজেপির বন্ধু জোটে রয়েছে, তারা এভাবে অসমের জমি দখলের জন্য আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছে। বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নেডার আহবায়ক, মিজোরাম সরকার এর অধীনেই রয়েছে। তবু তারা সাধারণ জমিবিবাদ মেটাতে পারছেন না। এটা একদিকে যেমন হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ব্যর্থতা, অন্যদিকে সর্বানন্দ সোনোয়ালেরও ব্যর্থতা। গৃহমন্ত্রক সোনোয়ালের হাতে রয়েছে, তার সুরক্ষা বাহিনীরা অধিগ্রহণের ব্যাপারে আগে থেকে খোঁজ নিতে ব্যর্থ। ফলে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন এলাকার মানুষ। আমি চাই কেন্দ্র সরকারের তরফে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হোক এবং স্থানীয় মানুষের সুরক্ষা দেওয়া হোক।”
Comments are closed.