Also read in

রনং দেহি মুডে শিলচর ডি এস এ, এবার শেষ দেখে ছাড়তে চান সদস্যরা, এ ও একে চিঠির জবাব দিল সংস্থা

সবকিছুর একটা সীমা আছে। ঢের হয়েছে, আর নয়।‌ এবার শেষ দেখে ছাড়া হবে। দেরিতে হলেও অবশেষে রুখে দাঁড়াল শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। রবিবার সকালে তুমুল বিক্ষোভের জেরে বিশেষ সাধারণ সভা মুলতবি হয়ে যায়। সংস্থার ইতিহাসে এই কলঙ্কিত ঘটনার পর বিকেলে ছিল গভর্নিং বডির বৈঠক। সেই বৈঠকে শুধু একটি এজেন্ডা ছিল। ‌ তা হচ্ছে অসম অলিম্পিক সংস্থার চিঠির জবাব নিয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহন। আর এই বৈঠকেই একজোট হয়ে রুখে দাঁড়ানোর কড়া বার্তা দিলেন সংস্থার সদস্যরা। সেই সঙ্গে ঘরের শত্রু বিভীষণদের ও মুন্ডুপাত করা হলো।

এ দিনের বৈঠকে সংস্থার সচিব বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং আরো একবার স্পষ্ট করে দেন, কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাতিল করার সিদ্ধান্তটা তিনি ও সভাপতি বাবুল হোড় এককভাবে নেননি। সিদ্ধান্তটা জিবি বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সংবিধানেই নির্দেশ রয়েছে যারা টানা দুটি টার্ম নিষ্ক্রিয় থাকবে অর্থাৎ সংস্থার কোনো ধরনের খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ করবে না তাদের সদস্য পদ এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে। কাজেই সংবিধান মেনেই যখন কাজ করা হয়েছে তাহলে কেন এভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হল? কার নির্দেশে এবং কী উদ্দেশ্য নিয়ে এমনটা করা হয়েছিল? এই প্রশ্ন তুলেন সংস্থার সচিব। তিনি আরো জানান, অসম অলম্পিক সংস্থার সংবিধানের কপি চেয়ে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়ে ছিল শিলচর ডি এস এ। তবে আজ পর্যন্ত এর কোনো জবাব আসেনি।

এদিনের বৈঠকে সংস্থার প্রধান গেটের বাইরে তুমুল বিক্ষোভ জানানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানানো হয়। তবে এতে আপত্তি জানান সংস্থার সহ-সভাপতি মৃদুল মজুমদার। ‌ তার বক্তব্য ছিল যেহেতু এজেন্ডা তে নেই, তাই জিবি বৈঠকে সকালের বিক্ষোভ প্রদর্শন কে নিন্দা জানানো ঠিক নয়। আরো একজনও মৃদুল মজুমদারের সুরে কথা বলেন। এরপরই চাঁচাছোলা ভাষায় তাদের আক্রমণ করেন সংস্থার বাকি সদস্যরা। তাদের পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, গত ২ অক্টোবর এর জিবি বৈঠকের উপস্থিত থেকেও টু শব্দও করেননি, অথচ বাইরে গিয়ে ক্লাব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল হওয়ার সিদ্ধান্তকে ভুল আখ্যা দিচ্ছেন, সংস্থার বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন, এসব মেনে নেওয়া যায় না। সংস্থার ভিতর থেকে সংস্থার বদনাম করবেন, এটা মেনে নেওয়া যাবে না। তাই আগে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করুন। মৃদুল মজুমদারদের কড়া ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘সদস্যপদ বাতিল হওয়ার সিদ্ধান্ত কে যদি আপনারা ভুল মনে করেন, তাহলে নিজেদের পদ থেকে আজই ইস্তফা দিয়ে সরকারের পক্ষে যেতে পারেন।’

সব প্রত্যেক সদস্য এক সুরে জানান, সহ্যের একটা সীমা রয়েছে। অনেক হয়েছে, আর নয়। এবার সংস্থার মর্যাদা রক্ষা করতে রুখে দাঁড়াতে হবে। এদিনের সভায় বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আইনজীবী সৌমেন চৌধুরি কে। তিনি সভায় ব্যাখ্যা করেন, অসম অলম্পিক সংস্থা এবং শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বডি। দুটোরই নিজস্ব সংবিধান রয়েছে। সৌমেন বাবু সভায় জানান, ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার অধীনে রয়েছে অসম অলিম্পিক সংস্থা। কাজেই অসম অলিম্পিক নিজে থেকে কোনও নিয়ম তৈরি করতে পারবে না। তার চলতে হবে ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার নিয়ম মেনেই। তিনি আরো জানান, শুধু দুটি ক্ষেত্রেই শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদন বাতিল করতে পারে অসম অলিম্পিক। এক-অসম অলিম্পিক সংস্থা আয়োজিত স্পোর্টস ইভেন্টে অংশ না নিলে। দুই- সময়মতো অসম অলিম্পিক সংস্থার ফি না দিলে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই দুটি নিয়মের মধ্যে দুটোই পালন করে চলেছে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। নিয়মিত স্পোর্টস ইভেন্টে অংশ নিচ্ছে এবং পাঁচ দিন আগেই অসম অলিম্পিক সংস্থার ফি বাবদ দু হাজার টাকা জমা দিয়েছে। সৌমেন বাবুর কাছ থেকে এই নিয়ম কানুন জানার পর আরো যেন উদ্যমী হয়ে ওঠেন সংস্থার সদস্যরা। তারা প্রশ্ন তুলেন, যাদের অনুমোদন বাতিল করার ক্ষমতাই নেই, তারাই নাকি দিনের-পর-দিন অনুমোদন বাতিলের ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে? ঢের হয়েছে, এবার শেষ দেখে ছাড়া হবে।

জিবি বৈঠকের খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটা প্রশ্ন তুলেন বিজয়ী সংঘের সচিব আশিষ রায়। তিনি সবার কাছে জানতে চান, যদি বিজয়ী সংঘ নিজেদের সংবিধান সংশোধন করে তাহলে কি শিলচর ডি এস এর অনুমতি লাগবে? জবাব আসে, না। এরপর আশিষ বাবু চ্যালেঞ্জার সুরে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, তাহলে অসম অলিম্পিক আবার আমাদের বিষয়ে নাক গলাচ্ছে কোন স্বার্থে?

রবিবারের জিবি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অসম অলিম্পিক সংস্থা সাতদিনের সময়সীমা দিয়ে যে চিঠির জবাব চেয়ে ছিল সেটা তৈরি করে দেবেন সৌমেন বাবু। তাকেই এই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। সেই অনুসারে সোমবার সন্ধ্যায় শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে একটা চিঠি পাঠানো হয়েছে অসম অলিম্পিক সংস্থায়। এই চিঠির প্রতিলিপি যাবে ইন্ডিয়ান অলিম্পিক সংস্থা এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড: হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কাছে।

নিয়ম অনুসারে এজেন্ডায় থাকা বিষয়ের উপর সংস্থার পক্ষ থেকে কোনও চিঠি গেলে সেটা জিবি বৈঠকে পড়ে শোনান সংস্থার সচিব। তবে এই দিনের বৈঠকে বিজেন্দ্র সাফ জানিয়ে দেন, সংস্থার কিছু সদস্যর উপর থেকে তার বিশ্বাস উঠে গেছে। কারণ কিছু সদস্য সংস্থার বিরুদ্ধে কাজ করে চলেছেন। ‌ ভেতরের খবর লিক করছেন। তাই তিনি এই চিঠি জিবি বৈঠকে পড়ে শোনাতে চান না। ‌ উপস্থিত সদস্যরা সবাই সচিবের বক্তব্য সায় দিয়ে জানান, অসম অলিম্পিক সংস্থায় যে চিঠি পাঠানো হবে সেটা জিবি বৈঠকে তুলে ধরার দরকার নেই। সচিব ও সভাপতি মিলে সেই চিঠি তৈরি করে পাঠিয়ে দিলেই হবে।

সব শেষে সংস্থার সভাপতি বাবুল হোড় বলেন, ‘আমাদের সংস্থায় সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। ‌ সংবিধানে এর উল্লেখ রয়েছে। কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সংস্থাতেই আপিল করা যেতে পারে। সেটা না করে কয়েকজন সদস্য বারবার বাইরে গিয়ে সংস্থার বিরুদ্ধে মন্তব্য করছেন। ‌ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন। ‌ এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

সব মিলিয়ে অসম অলম্পিক সংস্থার অনুমোদন বাতিল করার হুমকিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা জানিয়ে দিল, ‘এবার খেলা হবে।’

Comments are closed.