"কাছাড় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীন অবহেলার কারণে আমার ২৭ বছরের পরিষেবা অবমানিত হলো," ডিডিআইপিআর ইন্দ্রানী গোস্বামী
সাংবাদিকরা যখন মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কভার না করে বেরিয়ে যান তখন বোঝাই গেছিল বিষয়টি অনেক দূর গড়াবে। কারণ অনুষ্ঠানটি ছিল স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর। পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ইন্দ্রাণী গোস্বামীকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু এরপরও প্রশ্ন থেকে যায়, এ দিনের অব্যবস্থা তথা যাবতীয় ব্যর্থতার জন্য কি তিনি সত্যিই দায়ী ছিলেন?
ইন্দ্রাণী গোস্বামীকে বরখাস্ত করে বলা হয় যে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে তিনি সেদিন তার কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকায় প্রচন্ড রকম ভাবে অব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। চিঠিতে বলা হয়, তিনি তার দায়িত্ব পালন করেননি বলে প্রচন্ড অব্যবস্থার সৃষ্টি হয় এবং ফল স্বরূপ সাংবাদিকরা মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কভার না করে চলে যান।
“কিন্তু আমি তো ছুটিতে ছিলাম” জানালেন ইন্দ্রানী গোস্বামী। তিনি বলেন, “তারা কিভাবে বলতে পারেন যে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাইনি, যেখানে কাছাড়ের তদানীন্তন জেলা উপায়ুক্ত বর্ণালী শর্মা আমার ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন”।
উল্লেখ্য, বরাক উপত্যকায় ২১ জনের প্রাণহানির পর ভূমিধসের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল শিলচর ভ্রমণ করার ১০ দিন পর ১৫ জুন তাকে বরখাস্ত করা হয়। এখানে আরো উল্লেখ করা যায়, তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তরের পক্ষ থেকে দুপুর সাড়ে বারোটায় প্রেসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত কোন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়নি এবং বিলম্বের কারণটা পর্যন্ত কেউ সাংবাদিকদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। চূড়ান্ত অব্যবস্থার ফলে সাংবাদিকরা স্লোগান দিতে দিতে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান।
গোস্বামী ঘটনাটির বিষয়ে বলেন, “সেদিন যেটা ঘটেছিল তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ছিল। কিন্তু এ জন্য আমাকে দায়ী করাটা সম্পূর্ণ অনায্য এবং অন্যায়”। তিনি জানান যে রক্তে শর্করার ভাগ ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কাছাড়ের জেলা স্বাস্থ্যসেবার যুগ্ম-পরিচালক মেডিকেল রিপোর্ট পরীক্ষার পর তাকে আরও ভালো চিকিৎসার জন্য গুয়াহাটিতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
“রোগ নির্ণয়ের পর আমি মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে ছুটির আবেদন করি। যা তৎকালীন জেলা উপায়ুক্ত বর্ণালী শর্মা মঞ্জুর করেছিলেন। তিনি কেবল আমার ছুটি মঞ্জুর করেন নি, সেইসঙ্গে এডিসি সুমিত সত্যবানকে কাছাড়ের পুলিশ সুপারকে চিঠি লিখে পাসের ব্যবস্থা করার জন্য বলেছিলেন। লকডাউনের মধ্যেও যাতে করে আমি গুয়াহাটি যেতে পারি” গোস্বামী যোগ করেন।
১৩ এপ্রিল যখন রাজ্যে লকডাউন চলছিল তখন এডিসি সুমিত সত্যবান কাছাড়ের পুলিশ সুপারকে এ বিষয়ে লিখেছিলেন, যাতে করে গোস্বামী মেঘালয় হয়ে গুয়াহাটিতে পৌঁছতে পারেন।
চাকরি থেকে এই সাময়িক বরখাস্ত গোস্বামীকে মানসিকভাবে একটা প্রচন্ড ধাক্কা দিয়েছিল। “আমি যেখানে ছুটিতে ছিলাম এবং যে বিষয়টি আমাকে অত্যধিক অবাক করেছে তাহলো, আমার পরিচালক সহ কেউ সাসপেনশনের আগে আমার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেননি”। যোগ করলেন ইন্দ্রানী।
সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়ার পর তিনি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে জানতে পেরেছিলেন যে তার ছুটির আবেদন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সদরদপ্তরে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন,”সরকারের কাছে খবরই ছিল না যে আমি ছুটিতে রয়েছি। কাছাড় জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব দায়িত্বজ্ঞানহীন অবহেলার ফলে আমার ২৭ বছরের চাকরি জীবনের অবমাননা হয়েছে। তারা আমার কাগজপত্রগুলো গুয়াহাটিতে পাঠাননি পর্যন্ত।”
“কাছাড়ের জেলা প্রশাসনের এভাবে নথিপত্রগুলো গুয়াহাটিতে না পাঠানো যেমন আমাকে অবাক করেছে, তেমনি আমি এপ্রিলের মাঝামাঝি ছুটিতে গিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী ৩ জুন শিলচর গিয়েছিলেন। এই অবস্থায় এখানে প্রশ্ন থেকেই যায়, প্রশাসন বা ডিআইপিআর কোনও ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক কেন নিয়োগ করেনি। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর কেন তারা বুঝতে পারল যে তাদের কারোর প্রয়োজন ছিল”,গোস্বামী যোগ করেন।
Comments are closed.