Also read in

অভিভাবক ছাড়াই যদি শিলচর ডি এস এ চলতে পারে, তাহলে তাদের মোস্ট ওয়েলকাম : এ ও এ সচিব, ডি এস এর বিকল্প কাছাড় স্পোটস ফোরাম? সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন না কোওর

শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা সম্পর্কে আগামী কার্যনির্বাহী বৈঠকে আলোচনা করা হবে। সেই বৈঠকেই শিলচর ডি এস এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বরাক বুলেটিনকে এমনটাই জানালেন অসম অলিম্পিক সংস্থার (এ ও এ) সচিব লক্ষ্য কোওর। সেই সঙ্গে তিনি এটাও সাফ জানিয়ে দেন, শিলচর ডি এস এ সচিব বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং যেভাবে এ ও এর বিরুদ্ধে মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন, সেটা এ ও এর সিনিয়র সদস্যরা মোটেও ভাল চোখে দেখেননি। এখানেই না থেমে এ ও এ সচিব জানান, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা যদি অভিভাবক ছাড়া চলতে পারে, তাহলে তাদের স্বাগত।

গত ৩১ অক্টোবর বিশেষ সাধারণ সভা মুলতবি হওয়ার দিনই জি বি বৈঠকে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে এ ও এ কে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল। তুমুল বিক্ষোভের জেরে বিশেষ সাধারণ সভা মুলতবি করতে হয়েছিল ডি এস এ কে। সেদিন সন্ধ্যায় জিবি বৈঠকে এক কড়া অবস্থান নিয়েছিল সংস্থা। সেই বৈঠকে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এ ও এর বিরুদ্ধে এবার শেষ দেখে ছাড়া হবে। ঢের হয়েছে, আর সহ্য করা যাবে না। পরদিন সকালে জিবি বৈঠকের সমস্ত ব্রিফিং সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন বিজেন্দ্র। শিলচর ডি এস এর সেই কড়া অবস্থান যে ভালো চোখে দেখছে না এ ও এ, বিষয়টা সাফ জানিয়ে দেন সচিব লক্ষ্য কোওর। তিনি বলেন, ‘এ ও এর আসন্ন কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আমি বিষয়টা তুলব। খুব সম্ভবত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে এই বৈঠক। সেখানেই শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা সম্পর্কে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এওএ সচিব বলেন, ‘ওরা (শিলচর ডি এস এ) যেভাবে এ ও এ কে কাঠগড়ায় তুলেছে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছে। ‌ এমনকি শিলচর ডি এস এ সচিব বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং মিডিয়াতে বলেছেন, ‘এবার শেষ দেখে ছাড়া হবে’। ‘জঙ্গলে বাঘ দেখা হবে’। স্পোর্টসে এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়। আমাদের সিনিয়র সদস্যরা বিষয়টাকে মোটেও ভালোভাবে নেননি। নেওয়ার কথাও নয়।’

এ ও এ সচিব ফের একবার স্পষ্ট করে দেন, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান কমিটি অবৈধ। সংবিধান অবমাননা করেই সচিব পদে এসেছিলেন বিজেন্দ্র। তাই এই কমিটিকে এওএ স্বীকৃতি দেয়নি। এজন্যই সচিব কোওর আগের কমিটির সভাপতি বাবুল হোড় ও সচিব শিথিল ধরকে সংবিধান সংশোধন করে বিজিএম ডাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর সাফ কথা, সচিব বিজেন্দ্র কে তিনি কোনওদিনই কোনো নির্দেশ দেননি। কোওর বলেন, ‘আমরা তো শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিজিএমকে অবৈধ ঘোষণা করে ছিলাম। ওরা নিজেও স্বীকার করেছিল সংবিধান অবমাননা করা হয়েছে। তাহলে আমরা বিজেন্দ্র কে চিঠি কেন দেব বলুন তো? আমরা প্রথম কয়েকটি চিঠি তো শিথিল ধরের নামেই পাঠিয়েছি। তারপর থেকে সচিবের নাম উল্লেখ না করেই চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি সভাপতির নাম ও উল্লেখ করা হচ্ছে না।’

কোওর বলেন, ‘দেখুন, আমরা শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা ভাঙতে পারবো না, গড়তেও পারবো না। আমরা শুধু দেখবো ওরা সংবিধান অনুসারে কাজ করছে কি না। যদি ওরা সংবিধান না মেনে থাকে তাহলে আমরা ওদের অনুমোদন বাতিল করব।’ এ ও এ সচিব খানিকটা ক্ষোভের সুরেই বলেন, ‘দেখুন, আমি একটা কথা সাফ করে দিতে চাই। এ ও এ কিন্তু শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বি জি এমে নিজে থেকে নাক গলাতে যায়নি। ‌ আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছিল বলেই আমরা এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছি। এমনকি এখনও ওদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসছে। কই, অন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থা নিয়ে তো কোন সমস্যা নেই। যত সমস্যা শিলচর ডি এস এ নিয়েই।’ কোওর জানান, শিলচর ডি এস এ নিয়ে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। এইসব তিনি এ ও এর বৈঠকে তুলে ধরবেন। তিনি আরো জানান, শিলচর ডি এস এ শুধু শহরের স্পোর্টস নিয়েই কাজ করছে। ‌ কাছাড়ের গ্রামে-গঞ্জে কিছুই করছে না। এনিয়ে নাকি তার কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে।

শিলচর ডি এস এর বর্তমান কমিটি যেভাবে কুড়িটি ক্লাব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদ বাতিল করেছে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না এওএ সচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা ওদের বলেছিলাম সংবিধান সংশোধনী করতে। লাইভ মেম্বারদের সম্মান দিয়েই আমরা কথাটা বলেছিলাম। ‌ কিন্তু এভাবে স্কুল-কলেজের সদস্য পদ বাতিল করে দিতে ওদের কে বলেছিল? নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই ওরা এমনটা করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, গত দু’বছর থেকে করোনার জেরে সবকিছুই তো বন্ধ। তাহলে কিসের ভিত্তিতে এই সব স্কুল-কলেজ দের সদস্যপদ বাতিল করা হলো? দু’বছর আগে বি জি এমের সময় তো এরা সবাই এক্টিভ ছিল। তাহলে এখন ওরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল কি করে?’ কোওর বলেন, ‘মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, কোনো সংস্থা তাদের নির্বাচনের আগে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে না। ঠিক সেইভাবে কোনো সদস্য পদ বাতিল করতে পারবে না।’ কোওর আরও বলেন, ‘আবারো বলছি, আমরা নিজে থেকে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাইনি। এবারও অভিযোগ এসেছিল বলেই আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। একটা কথা আমি সাফ করে দেই, ওরা যদি ভাবে অভিভাবক না হলেও শিলচর ডি এস এ চলবে, তাহলে তাদের মোস্ট ওয়েলকাম।’

 

 

এ ও এ সচিব জানান, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ আমরা এখানে রয়েছি খেলাধুলার উন্নতির জন্য। রাজনীতির জন্য নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করছি যাতে করে এই সমস্যার সমাধান হয়। তবে এভাবে মন্তব্য করলে সমস্যার সমাধান হবে না। বিষয়টা নিয়ে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বাবুল হোড়ের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তিনি আমায় জানিয়েছেন, মিডিয়াতে তিনি এমন মন্তব্য করেননি। ‌ আমি যতটুকু জানি, শিলচরের ক্লাব গুলি এ ও এর বিরুদ্ধে নয়।’

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি শিলচরে গঠিত হয়েছে কাছাড় স্পোর্টস ফোরাম। কদিন আগেই এই ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল এক ক্রীড়া সম্মেলন ও। ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কাছাড়ের গ্রামে গঞ্জের খেলাধুলার উন্নতির জন্যই তারা কাজ করবে। গত সপ্তাহেই ফোরামের কর্মকর্তারা শিলচরের বিধায়ক দ্বীপায়ন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে লক্ষ্য কোওরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে এ ও এ সচিব বলেন, ‘হ্যাঁ, শিলচরের বিধায়কের নেতৃত্বে ফোরামের কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ‌ ওরা আমায় জানান, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা গ্রামেগঞ্জে কিছু করছে না। তাই ফোরাম গ্রামেগঞ্জে খেলাধুলা নিয়ে কাজ করতে চায়। ‌ এমনকি ডি এস এ যেসব ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল করেছে তাদের পক্ষ থেকেও নাকি ফোরামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ‘ তাহলে কি শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিকল্প হিসেবে কাছাড় স্পোর্টস ফোরামকে দেখছে এ ও এ? এর জবাবে লক্ষ্য বাবু বলেন, ‘ওরা একটা ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। তাই এ ও এ খেলাধুলার স্বার্থে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করবে। এর অর্থ এই নয় যে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিকল্প হিসেবে ওদের দেখা হচ্ছে। তবে হ্যাঁ, যদি শিলচরের ক্রীড়ামোদী জনগণ ফোরামের পক্ষে আওয়াজ তোলেন তাহলে অবশ্যই স্পোর্টস এর স্বার্থে বিষয়টা খতিয়ে দেখা হবে।’

Comments are closed.

error: Content is protected !!