কাছাড়ে মাল্টি মডেল লজিস্টিক পার্কে সম্মতি নির্মলা সীতারমনের, ১২৭ বিঘা জমি নির্ধারণ করা হয়েছে, জানালেন সাংসদ রাজদীপ
গত বছর ডিসেম্বর মাসে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর মূর্তি উন্মোচন করতে শিলচরে এসে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গাডকারি ঘোষণা করেছিলেন দেশের দ্বিতীয় মাল্টি মডেল লজিস্টিক পার্ক কাছাড় জেলায় হবে। পরবর্তীতে নির্বাচনে বিজেপির নানান প্রতিশ্রুতির মধ্যে এই প্রতিশ্রুতিও স্থান পেয়েছিল। তবে ঠিক কোথায় পার্কটি হবে এবং কাজ কতটুকু এগিয়েছে এই বিষয়ে বিশেষ কোনও কথাবার্তা হয়নি। এবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এই কাজের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের যোগান দিতে রাজি হয়েছেন। এছাড়া কাছাড় জেলায় বরাক নদীর পাশে ১২৭ বিঘা জমি একাজের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, এমনটাই জানালেন শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়। আগামীকাল থেকে একমাসব্যাপী সংসদের বিশেষ অধিবেশনে যোগ দিতে দিল্লি যাচ্ছেন সাংসদ। এর আগে রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
মাল্টিমোড লজিস্টিক পার্ক নিয়ে তিনি বলেন, “দেশের প্রথম এবং দ্বিতীয় লজিস্টিক পার্ক অসমে হচ্ছে এবং দ্বিতীয়টা বরাক উপত্যকায়, এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমি যখন সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে এই প্রসঙ্গ তুলে ধরি, তিনি প্রশ্ন করেন কেন বরাক উপত্যকায় দ্বিতীয় পার্কটি হওয়া উচিত? এই উপত্যকায় ভৌগোলিক অবস্থান এবং এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে অন্যান্য রাজ্য সহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের তুলে ধরার সম্ভাবনাগুলো তাকে বুঝিয়ে বলায় তিনি শুধুমাত্র লজিস্টিক পার্ক নয়, কাছাড় জেলায় গ্রীনফিল্ড বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তাও স্বীকার করেন। লজিস্টিক পার্ক জলপথের বাণিজ্যকে সড়ক এবং রেলপথের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে বিরাট ব্যবসার সম্ভাবনা গড়ে তোলে। এর পাশেই থাকতে হয় বড় আকারের বিমানবন্দর। পরিকল্পনা এত বড় যা বাস্তব হলে পুরো উপত্যকার চেহারা পাল্টে যেতে পারে। প্রায় ২০০ বিঘা জমির প্রয়োজন এবং ইতিমধ্যে আমরা ১২৭ দীঘা নির্ধারণ করে নিয়েছি। প্রয়োজনে আরও ৮০ বিঘা জমি আশেপাশেই পাওয়া সম্ভব। এদিকে গ্রীনফিল্ড বিমানবন্দরের জন্য আগেই একটি বিশেষ দল তিনটি জায়গা পরিদর্শন করেছে এবং নিজেদের রিপোর্ট কেন্দ্র সরকারের কাছে তুলে ধরেছে। এই দুই প্রকল্প বাস্তব করার ক্ষেত্রে মূল বিষয় হচ্ছে টাকা এবং সেটা আসবে নির্মলা সীতারমনের বিভাগ থেকে। তিনি যেহেতু রাজি হয়েছেন ফলে আমরা আশার নতুন আলো দেখতে পাচ্ছি।”
সম্প্রতি সর্বানন্দ সোনোয়াল কেন্দ্রীয় জল পরিবহন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন এবং এই মাল্টি মডেল লজিস্টিক পার্ক অনেকটা তার অধীনেই রয়েছে। যখন নীতিন গাডকারি শিলচরে দাঁড়িয়ে গতবছর প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন, তার সঙ্গেই ছিলেন সর্বানন্দ সোনোয়াল। রাজদীপ রায় জানান, নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি সর্বানন্দ সোনোয়ালের কাছে যান এবং তার সঙ্গেও বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়েছে।
সংসদের বিশেষ অধিবেশনে তিনি কি কি বিষয় তুলে ধরবেন, এই প্রসঙ্গে রাজদীপ বলেন, “১৫টি প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে এবং প্রায় লটারির মাধ্যমে ঠিক করা হবে আমি কি কি বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি। তবে বরাক উপত্যকার বিশেষ কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাব, কেননা এখন সংসদে প্রয়োজনের খাতিরে অনেক বেশি সময় দেওয়া হয়। বরাক উপত্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে মিজোরামের সঙ্গে জমি বিবাদ, সবগুলো ক্ষেত্রেই কথা বলার চেষ্টা করব। তবে সেখানে অনেকটাই কাজ করবে ভাগ্য।”
রাঙ্গিরখাড়ি পয়েন্ট থেকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পয়েন্ট পর্যন্ত চার-লেন সড়ক গড়ে তোলার কাজ গতবছর শুরু হয়েছে, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় জমি অধিগ্রহণের ঝামেলার দরুন কাজ আটকে রয়েছে। সম্প্রতি সাংসদ রাজদীপ রায় এবং শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী বাধা দেওয়ায় একটা অংশের কাজ পুরোপুরি বন্ধ। এই বিষয়ে রাজদীপ রায় বলেন, “যে অংশে জমি বিবাদ নেই সেখানে কাজ চলছে, কিন্তু আমরা অসম্পূর্ণ সড়ক গড়ে তুলতে পারিনা। বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে এব্যাপারে কথা হয়েছে এবং তারা ১৯৫৩ সালের ম্যাপ দেখে প্রথমে অধিগ্রহণের ছক গড়ে তুলবেন। এরপরেও যদি দেখা যায় কোনও ব্যক্তির আগে থেকেই পাট্টা জমি রয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সেই জমি অধিগ্রহণের কাজে নেমে পড়বো। তবে এই ক্ষেত্রে পুরনো এস্টিমেটে কাজ শেষ করা সম্ভব নয়, তাই রাজ্য সরকারকে আরও কিছু অর্থের যোগান দিতে হবে।”
বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে। বরাক উপত্যকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাজেটে স্থান পায়নি বলে অনেকের অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে রাজদীপ রায় বলেন, “আগেই বলা হয়েছিল জনগণের অভিমত নেওয়া হবে এবং তার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। কুড়ি হাজারের বেশি ই-মেইল সরকারের কাছে গেছে এবং এর থেকে বেছে বিভিন্ন দাবি বাজেটে যুক্ত করা হয়েছে। বাজেট পেশ হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী অজন্তা নেওগের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এবং তিনি জানিয়েছেন, এই বাজেট শুধু প্রতিশ্রুতি নয় বরং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগেই কাজ শুরু হয়েছে তাই সেটা বাজেটের সংযুক্ত করা হয়নি, তবে এর মানে এই নয় যে প্রকল্পগুলো নিয়ে সরকার কাজ করবে না। যেমন শিলচরের সিভিল হাসপাতালকে উন্নত করার যে পরিকল্পনা, সেটা আগেই ঘোষণা করা হয়েছে, বাজেটে নতুন করে এই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। করিমগঞ্জে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন নিয়ে জমি নির্ধারণ হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কিছুটা মতবিরোধ হয়তো এর জন্য দায়ী, কিন্তু এই বিষয়টির আগামীতে সমাধান হবে। আরো ছোট ছোট বিষয় রয়েছে যেগুলোর সরাসরি বাজেটে স্থান না পেলেও মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে এব্যাপারে কথা বলেন এবং কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলোচনা হয়।”
মহাসড়কের যে অংশে কাজ শেষ হয়নি সেটা নিয়ে সম্প্রতি হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বেশকিছু বৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন। এছাড়া গত বছর কেন্দ্রীয় পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গাডকারি ঘোষণা করেছিলেন ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এই বিষয়ে রাজদীপ রায় বলেন, “আগামী বছর মার্চের মধ্যে না হোক আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু অংশ একেবারেই ধসে গেছে এবং সেখানে বাইপাস বানিয়ে সড়ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এমনটা হয়ে গেলে শুধু সড়কটি দর্শনীয় স্থান হয়ে দাঁড়াবে। মহাসড়ক গড়ে তোলার কিছু নিয়ম রয়েছে সেটা কম্প্রোমাইজ করে আমরা সড়কের কাজ শেষ করতে চাই না।”
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন পরিষেবার ব্যাপারে তার বয়ান, “শুধুমাত্র একটা হাসপাতালকে ঘিরে সব কথা বললে হবে না। দেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় ডাক্তাররা শুধুমাত্র একটা হাসপাতালে একটা সময়ে পরিষেবা দেবার জন্য হয়তো আসতে চাইবেন না। আমাদের দরকার একটা পরিবেশ গড়ে তোলার, যেখানে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের উন্নত পরিষেবা থাকবে। যেসব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আসবেন তারা দুই ক্ষেত্রেই রোগী দেখবেন এবং নিজের ইচ্ছেমত সিদ্ধান্ত নেবেন। দেশের কোথাও শুধুমাত্র সরকারি পরিষেবাকে উন্নত করে উন্নত চিকিৎসার পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এই কথা বুঝে আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে। আমি রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও এবিষয়ে কথা বলেছি।”
Comments are closed.