ফেসবুকে শ্রীরামচন্দ্রের নামে অপমানজনক মন্তব্যের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনের বিরুদ্ধে শিলচর সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযোগ, তিনি শ্রীরামচন্দ্রের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। পুলিশের কাছে দায়ের করা এজাহারে বলা হয়েছে, “প্রভু শ্রীরামচন্দ্রের বিরুদ্ধে লাগাতার অপমানজনক মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিন্দ্য সেন। এতে হিন্দু ভাবাবেগসম্পন্ন সাধারণ মানুষের মনে আঘাত লেগেছে। একজন অধ্যাপক হয়ে বিশেষ একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভাবাবেগ নিয়ে বারবার অপমানজনক মন্তব্য করা উচিত হয়নি।”
অধ্যাপক অনিন্দ্য সেন সম্প্রতি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে শ্রীরামচন্দ্রের সীতা দেবীকে ত্যাগ করা নিয়ে একটি কটুক্তি করেছিলেন। এতে বিভিন্ন মহলে তার সমালোচনা হয়েছে। এবার তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “রামায়নের বিভিন্ন সংস্করণ রয়েছে এবং প্রায় প্রত্যেক সংস্করণে একটা কথা পরিস্কার লেখা হয়েছে, শ্রীরামচন্দ্র একসময় তার স্ত্রীকে ত্যাগ করেছিলেন। অনেক মনীষীরা পর্যন্ত শ্রীরামচন্দ্রের চরিত্রের এই দিকটির সমালোচনা করেছেন। আমিও ঠিক তাই করেছি, ফলে এটা কোনো নতুন কথা নয়। তবে আমার মন্তব্যে যদি কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লেগে থাকে তাহলে আমি দুঃখিত। সমাজের কোনও ব্যক্তির মনে আঘাত দেওয়ার বা শ্রীরামচন্দ্রের অপমান করার আমার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।”
অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৫এ, ২৯৪ এবং ৫০১ ধারায় মামলা গ্রহণ করেছে পুলিশ। লাগাতার উস্কানিমূলক মন্তব্য, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত ইত্যাদির জন্য ২৯৫এ ধারায়, কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লাগাতার কটুক্তি এবং উস্কানি মূলক মন্তব্যের দায়ে ২৯৪ ধারায় এবং জেনেশুনে সামাজিক মাধ্যমে উস্কানিমূলক মন্তব্য করার দায়ে ৫০১ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।
শহরের একাংশ পড়ুয়া তার বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে। গুরুচরণ কলেজের ছাত্র রোহিত লিখেছে, “হিন্দু দেব-দেবীদের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য করা এক ধরনের লোকের কাছে ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে তারা নিজেদের শিক্ষার প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”
ছাত্রটি আরো বলে, “সরকারের কোন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা একজন নাগরিক করতেই পারে, এটা তার মৌলিক অধিকার। তবে সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা অত্যন্ত নিম্ন স্তরের চিন্তাধারার প্রমাণ। কেউ যখন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন বলে রাস্তায় নেমে গোমাংস ভক্ষণ করেন সেটা শিক্ষিত ব্যক্তির পরিচয় হতে পারে না। অন্তত আমরা এই শিক্ষাকে প্রশ্রয় দিতে পারছিনা।”
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যেসব তথ্য প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো যাচাই হবে। গ্রেফতার যোগ্য পরিস্থিতি দেখা দিলে পুলিশ নিজের মত করে কাজ করবে। তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে সমাজে কোন ধরনের অশান্তি যাতে দেখা না দেয় সেটাই প্রশাসনের প্রথম উদ্দেশ্য। কোনভাবেই উস্কানিমূলক কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না।
Comments are closed.