Also read in

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের বিচক্ষণতায় উদ্ধার পাঁচটি বিরল প্রজাতির সাপ, "এর পেছনে থাকতে পারে বড়মাপের দুষ্কৃতি চক্র," বলছেন ডিএফও

সাধারণত সাপুড়েদের সাপের খেলা দেখে আমরা আনন্দ নিই, তবে চিন্তাই করিনা আদৌ কেমন অবস্থায় আছে সাপগুলো। তবে সমাজে অনেক সচেতন লোক রয়েছেন যারা এসব নিয়ে চিন্তা করেন। রবিবার সকালে আইরঙমারা এলাকায় এক সাপুড়ে সাপ খেলা দেখাচ্ছিলো, আর সেখানেই তাকে পাকড়াও করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তথা পরিবেশ-সচেতন যুবক সুমিত নাথ। প্রথমে বাধা দিলেও পরে লোকটি পালিয়ে যায় এবং সাপগুলো উদ্ধার করেন সুমিত নাথ এবং তার সহযোগীরা। পরে সেগুলো বন বিভাগের তরফ থেকে উদ্ধার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থঙ্কর চৌধুরীর সহায়তায় বন বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয় বিভিন্ন বিরল প্রজাতির সাপগুলো। বন বিভাগের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, যে সাপুড়ে কাজটি করছিল তাকে ধরার চেষ্টা চলছে এবং তারা সন্দেহ করছেন এর পিছনে একটি দুষ্টচক্র কাজ করছে। কাছাড় জেলার ডিএফও সানিদেও চৌধুরী এব্যাপারে বলেন, “সাধারণ মানুষের সহায়তায় আমরা অনেক বিরল প্রজাতির প্রাণীকে রক্ষা করতে পারছি। রবিবার সকালে উদ্ধার হওয়া পাঁচটি সাপ এর অন্যতম নিদর্শন। যে সাপগুলো উদ্ধার হয়েছে, তারমধ্যে দুটো স্থানীয় প্রজাতির এবং তিনটে বাইরের। স্থানীয় প্রজাতির সাপগুলোকে সুস্থ করে কাছাড়ের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া যাবে। তবে বাকিগুলো কোথায় রাখা হবে এটা নিয়ে গুয়াহাটির আসাম চিড়িয়াখানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রয়োজনে সবগুলো সেখানে পাঠানো হবে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ধরতে চাইছি আমরা। শুধু মাত্র পাঁচটা সাপ ধরা পড়েছে, ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়, আমাদের ধারণা যে চক্র এই কাজটি করছে, তাদের কাছে আরও সাপ রয়েছে। সাধারণ মানুষ তাদের ধরার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। কাছাড় জেলার এবং করিমগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের কাছে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি তারা যাতে আমাদের সাহায্য করেন।”

ডিএফও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সুমিত নাথকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “সুমিত নাথের বিচক্ষণতা এবং সাহসের জন্য আমরা বিরল প্রজাতির প্রাণী গুলোকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি। সম্প্রতি আরও অনেক ঘটনায় সাধারণ মানুষ নিজেদের সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন এবং নিরীহ প্রাণী রক্ষা হয়েছে। আমাদের আধিকারিকরাও সব সময় তৎপর থাকেন এবং আমি নিজেও প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি ফোনে যোগাযোগ রাখি। কেউ এমন ঘটনা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানিয়ে দেবেন, তাহলে আমরা শুধুমাত্র প্রাণীদের উদ্ধার করা নয়, যে ব্যক্তি এদের আটকে কষ্ট দিচ্ছে তাকেও ধরতে পারব। এদের ধরলে আরো অনেক আটক হওয়া প্রাণী উদ্ধারের সূত্র বেরিয়ে আসবে।”

পার্থঙ্কর চৌধুরী বলেন, “আমাদের বিভাগের গবেষক সুমিত নাথের বিচক্ষণতা এবং সাহসের জন্যই কাজটি হয়েছে। এদিন যে প্রজাতির সাপ উদ্ধার হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, পঙ্খীরাজ বা লাউডগা, ওরনেট ফ্লাইং স্নেইক, মনসা/কালনাগিনী, বাদামী লাউডগা এবং স্পকটিকেল গোখরা। এদের মধ্যে যেগুলো স্থানীয় তাদের আমাদের অঞ্চলে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব। তবে বাইরের প্রজাতির সাপ এখানে ছাড়লে তারা বাঁচবে না। বনবিভাগ অন্তত এগুলোকে যদি গুয়াহাটির চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেয় তাহলে তাদের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। তবে আমার মনে আরেকটি ভয় রয়েছে, যদি এই পাঁচটির বাইরে অন্য সাপ থাকে তাহলে ঠিক কতটা রয়েছে এবং তাদের অবস্থা কেমন। দুষ্কৃতিরা ভয় পেয়ে যদি সাপগুলোর ক্ষতি করে সেটা হবে সবথেকে দুঃখজনক।”

Comments are closed.

error: Content is protected !!