Also read in

বদরপুরে স্থানীয়রা দুষ্প্রাপ্য বেঙ্গল মনিটরকে বেধে রাখল,বন বিভাগ ঘুমে ; "এই প্রজাতি বিলুপ্তপ্রায়," অধ্যাপক পার্থঙ্কর চৌধুরী

 ভারতে থাকা ভারানাসের চারটি প্রজাতির মধ্যে দুটি বরাক উপত্যকায় দেখা গেছে, এশিয়ান ওয়াটার মনিটর (ভি সালভেটর) এবং বেঙ্গল মনিটর (ভি বেঙ্গালেনসিস)। বৃহস্পতিবার বিকেলে বদরপুর এলাকার স্থানীয়রা বরাক ভ্যালি সিমেন্ট কারখানার কাছে একটি বিশাল সরিসৃপ দেখতে পান। তারা ধাওয়া করে এটাকে আটকে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেলে। এভাবে বন্দী হয়ে সরীসৃপটি অস্বস্তিতে ছটপট করছিলো।

“গত শতাব্দী থেকে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বন ধ্বংসের কারণে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হয়েছে। কৃষি জমি সম্প্রসারণ, বন দখল, চা বাগান স্থাপন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে বন্যপ্রাণীদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এই মানুষ – বন্যপ্রাণীর সংঘাতে প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড, মাংস এবং তেলের জন্য বারানিডদের শিকার বেড়েছে। যাইহোক, এই প্রাণীকুলের সংরক্ষণের অবস্থা, বাস্তুশাস্ত্র এবং এই অঞ্চলে বারানিডের হুমকির উপর গবেষণার অভাব রয়েছে,” আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক পার্থঙ্কর চৌধুরী।

তিনি যোগ করেন, “এই প্রজাতিটি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ছে। ভারতের বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, এটি একটি সূচী -১ প্রজাতি। এদের ধরা এবং হত্যা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং তবুও এগুলোকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ধরা বা হত্যা করা হয়। এই প্রাণীকুলের সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা জোরদার করা উচিত। ” অধ্যাপক এটা স্পষ্ট করে দেন যে এই সরীসৃপ মানুষের জীবনের জন্য কোন অবস্থায়ই হুমকি নয়।

বন্য জীবন (সুরক্ষা) আইন, ১৯৭২ ছয়টি তফসিল সূচীতে বিভক্ত। প্রতিটি সূচী বিভিন্ন ধরণের সুরক্ষা দেয়। তফসিল ১ এবং তফসিল ২ বন্য প্রাণীদের চরম সুরক্ষা প্রদান করে এবং এই ধরনের বিধান লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা অনেক বেশি। সূচী ১ এর অধীনে থাকা একটি সরীসৃপ কয়েক ঘন্টার জন্য একটি খুঁটিতে বাঁধা ছিল এবং ছবি-ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল, তবুও, করিমগঞ্জ বন বিভাগ এই সমস্ত বিষয়ে কিছুই জনতনা।

 

রেঞ্জার এবং ডিএফও এই ঘটনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিলেন। “করিমগঞ্জ বন বিভাগে বেঙ্গল মনিটর টিকটিকি ধরা পড়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি,” রেঞ্জার সামস উদ্দিন বলেন। ডিএফও ও অজ্ঞ ছিলেন। পরে রেঞ্জার জানালেন যে, সরীসৃপটি বদরপুরে ধরা পড়েছে। “এলাকাবাসী এটিকে বেঁধে রেখেছিল। কিন্তু পরে যখন তারা বুঝতে পারল যে বন বিভাগের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করবেন, তখন তারা সরীসৃপটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়, ”বলেন রেঞ্জার সামস উদ্দিন।

বন বিভাগ যদি সূচী ১ য়ে থাকা একটি সরীসৃপ সম্পর্কে এত নিরাসক্ত থাকতে পারে । কেউ কি সহজভাবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতিকে বেঁধে ইচ্ছামত ছেড়ে দিতে পারে? এই ঘটনা সচেতনতার অভাব প্রকাশ করে। বন বিভাগ এই ঘটনার তদন্ত করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে কিনা এটাই দেখার বিষয়।

Comments are closed.