
সন্তোষমোহন দেবের ছবি কাদামাখা নোংরা জায়গায় রাখা, 'অনিচ্ছাকৃত' বলে সুস্মিতার কাছে ক্ষমা চাইল জেলা ক্রীড়া সংস্থা
জেলা ক্রীড়া সংস্থার মূল মাঠের নাম সতীন্দ্রমোহন দেব মেমোরিয়াল স্টেডিয়াম, সন্তোষ মোহন দেব ক্রিকেট প্যাভিলিয়ন রয়েছে মাঠে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে এখনও জড়িয়ে রয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব। সেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠেই এক নোংরা কোনায় প্রায় ছয়মাস ধরে কাদা মাখা অবস্থায় ফেলে রাখা ছিল প্রয়াত সন্তোষ মোহন দেবের একটি ছবি। একদিকে যখন অটল বিহারী বাজপেয়ীর মূর্তি স্থাপন হচ্ছে, তরুণ গগৈর অস্থি বরাকে বিসর্জন হচ্ছে, শিলচরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মতো সংগঠন সন্তোষ মোহন দেবের ছবির প্রতি চরম অবহেলা দেখিয়ে আদতে তাকে অপমান করেছে, এমনটা বলছেন অনেকেই।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে প্রয়াত হন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেব। তার শেষ যাত্রায় যোগ দিতে শিলচরে এসেছিলেন রাহুল গান্ধী সহ দলের তাবড় তাবড় নেতারা। সেই সময় শোভাযাত্রা করে সন্তোষ মোহন দেবের মৃতদেহ যখন জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তার একটি বড় প্রতিকৃতি বানানো হয়েছিল। সেটায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত পংক্তি,
‘তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি। সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি’ লেখা রয়েছে। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সেই বিশাল আকারের প্রতিকৃতি জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠের একটি কক্ষে রেখে দেওয়া হয়। একইভাবে আরও অন্যান্য জায়গায়ও সেদিন বড় আকারের প্রতিকৃতি বানানো হয়েছিল, সেগুলো প্রায় সব জায়গায় সসম্মানে রাখা হয়েছে। তবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ময়দানে যেভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রতিকৃতি অবহেলিত অবস্থায় রাখা হয়েছে এটা দেখে অনেকেই আঁতকে উঠেছেন।
ছবিটি পাওয়ার পর তার কন্যা সুস্মিতা দেব সরাসরি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এতে প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নেন ক্রীড়া সংস্থার সদস্যরা এবং আস্বাস দেন, ছবিটি সেখান থেকে সরিয়ে যোগ্য স্থানে রাখা হবে। সুস্মিতা এব্যাপারে বলেন, “ছবিটি দেখার পর আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং কথা দিয়েছেন ছবিটি সসম্মানে যোগ্য জায়গায় রাখা হবে। তারা এটাও বলেছেন, অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে অপমান করার উদ্দেশ্যে কাজটি করেননি। এছাড়া, আমি মনে করি সন্তোষ মোহন দেব অনেক বড় মাপের নেতা, তাকে সাধারণ মানুষ এখনও ভালোবাসেন, তাই এই ধরনের ছোটখাট ব্যাপারে তিনি অপমানিত হয়েছেন বলা যায়না। আর ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ যদি তাকে অপমান করার চেষ্টা করেও থাকে, তারা সেটা পারবে না। কারণ সন্তোষ মোহন দেব অত্যন্ত উঁচু স্তরের নেতা ছিলেন।”
জেলা ক্রীড়া সংস্থার তরফে বাবুল হোড় বলেন, “জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে বিভিন্ন কাজ চলছে, যারা কাজ করছেন হয়ত ভুলবশত ছবিটি এভাবে রেখে দিয়েছেন। আমরা যখন জানতে পেরেছি সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছি, ছবিটি পরিষ্কার করে ভালো জায়গায় রেখে দিতে। কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে কাজটি করেনি, একেবারেই সাধারণ ভুল বুঝাবুঝি এবং খানিকটা উদাসীনতার ফলে হয়েছে। আমরা অবশ্যই এটা নিয়ে দুঃখিত।”
তবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে কাজ করা অনেকেই বলছেন ছবিটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে রাখা ছিল। তাদের জিজ্ঞেস করলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তর দেন, “হ্যাঁ আমরা অনেকদিন ধরে ছবিটি এই অবস্থায় দেখছি।” এবার কথা হচ্ছে, ভুলবশত হোক বা ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা উদাসীনতার ফলে হোক, সন্তোষ মোহন দেবের মত নেতার ছবিকে এভাবে অবহেলা করে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছে।
Comments are closed.