আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কর্মীকে সিআরএস পদে নিযুক্তি: প্রশ্নের মুখে রেল বিভাগের 'জিরো টলারেন্স নীতি'
তৎকাল টিকিট নিয়ে জালিয়াতি এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে মাস চারেক আগে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন শিলচরের রেলকর্মী অর্পিতা দাস। বিভাগের অ্যান্টি ফ্রড শাখা ৩ জুন সকাল ১১টায় তার কাউন্টারে হানা দিয়ে কিছু বেনামি টিকিট এবং টাকার জালিয়াতি ধরেছিল। ছয় মাসের ইনক্রিমেন্ট কর্তন সহ বিভাগের তরফে অন্যান্য শাস্তি পেয়েছিলেন কর্মীটি। সেই অর্পিতা দাসকেই শিলচর রেল স্টেশনের চিফ রিজার্ভেশন সুপারেন্টেন্ড (ইনচার্জ) হিসেবে নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত একজন আধিকারিককে প্রমোশন দিয়ে আরো বড় পদে বহাল করায় প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে রেল বিভাগ। সরকার যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে ফলাও করে প্রচার করছেন, সেই সময় এই রেল বিভাগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে নরম সুরে কথা বলছে।
অর্পিতা দাস এতদিন শিলচরে রেলস্টেশনের এসিস্ট্যান্ট রিজার্ভেশন সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছিলেন। প্রায় দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রেল বিভাগে রয়েছেন তিনি, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ৩ জুন সকালে এগারোটা নাগাদ বিভাগের দুর্নীতি দমন শাখা আচমকা কাউন্টারে হানা দেয় এবং অর্পিতা দাসের কাউন্টার থেকে বেশকিছু সন্দেহজনক তথ্য উদ্ধার হয়। বিভাগের সূত্র মতে, প্রায় কুড়ি হাজার টাকা নগদ অর্থের গরমিল সহ বেশ কিছু বেনামী টিকেট উদ্ধার হয় এদিন। এর উপর ভিত্তি করে অর্পিতা দাসের ছয় মাসের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করা এবং তাকে তার পদ থেকে নিচু পদে স্থানান্তরিত করা সহ কিছু কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পাশাপাশি কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন থাকা কাউন্টারে না রাখার উদ্দেশ্যে তাকে লালাবাজার স্টেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তাকে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। কিন্তু সেখানেও স্টেশন মাস্টারের আইডি ব্যবহার করে টিকিট কাটতে শুরু করেন অর্পিতা। স্থানীয় এক ব্যক্তি বিভাগকে চিঠি লিখে জানান, অর্পিতা দাস তার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে টিকিট দিচ্ছেন। বিভাগের আভ্যন্তরীণ স্তরে এ নিয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল সেটা পরিষ্কার না হলেও অর্পিতাকে লালাবাজারও ছেড়ে আসতে হয় এবং বদরপুরে পাকাপাকিভাবে ট্রান্সফারের তোড়জোড় শুরু হয়। তবে পরিবারের বয়স্ক সদস্যের শারীরিক অবনতির অজুহাত দেখিয়ে অর্পিতা শিলচরে ফিরে আসার আবেদন জানান। মানবিকতার খাতিরে রেল বিভাগ তার আবেদন টুকু মেনে নেয়।
নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ের রেলওয়ের সিপিআরও প্রণব জ্যোতি শর্মা ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমাদের শিলচর স্টেশনের কর্মী অর্পিতা দাসকে দুর্নীতি দমন শাখার সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি তার পরিবারের সদস্যের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে শিলচরে ফিরে আসার আবেদন জানিয়েছেন। মানবিকতার খাতিরে তার আবেদন টুকু মেনে নিলেও আমরা বিভাগকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, তাকে যেন এমন কোন শাখায় দেওয়া না হয় যেখান থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠেছে আমরা চাই না এরফলে বিভাগের ছবি সাধারণ মানুষের কাছে খারাপ হোক।”
বিভাগীয় উচ্চস্তরের আধিকারিকরা সাফাই গাইলেও আদতে কিন্তু ঘটছে তার ঠিক উল্টোটা। শিলচর রেলস্টেশনের রিজার্ভেশন কাউন্টারে বসে দুর্নীতি করার অভিযোগ ছিল অর্পিতা দাসের বিরুদ্ধে। তখন তিনি ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট রিজার্ভেশন সুপারভাইজার। এবার চিফ রিজার্ভেশন সুপারভাইজার সুবল দাস বদলি হচ্ছেন এবং সেই পদটি দেওয়া হচ্ছে অর্পিতা দাসকে। যে বিভাগে বসে আর্থিক কেলেংকারী করে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন অর্পিতা, সেই বিভাগেই উচ্চপদস্থ আধিকারিক হয়ে আবার ফিরে আসছেন তিনি।
অর্পিতার সঙ্গে এব্যাপারে কথা বললে তিনি জানান, আর্থিক কেলেঙ্কারি নয় তবে পারিবারিক কারণে রেলের টাকা তার স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি, পরে অবশ্য সে টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। লালাবাজারে যাওয়ার পর সেখানে টিকেট কাউন্টার চালু করার কথা স্বীকার করেন অর্পিতা। তবে তার ‘ছোটখাটো’ ভুল গুলোকে দুর্নীতি বলতে নারাজ তিনি।
অর্পিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অনেকেই টুইট করেছেন।পাশাপাশি লিখিত অভিযোগ ও প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পাঠানো হয়েছে। সারাদেশে রেল বিভাগের টুইট করলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে বিভাগের একটা সুনাম আছে। তবে শিলচরে রেলকর্মীর বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকার পরও এখন পর্যন্ত মন্ত্রকের তরফে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবশ্যই প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
Comments are closed.