Also read in

ব্যাঙ্কে চাকরি দেওয়ার নাম করে শত শত বেকারদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে এক মহিলা গ্রেফতার শিলচরে

চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ার ঘটনা আজকাল আর তেমন কিছু নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু অসাধু এবং অবৈধ উপায়ে টাকা নেওয়ার মতো প্রতারণামূলক ঘটনা শিলচরে এক নতুন মাত্রা পায় যখন কোন এক মহিলা বরাক উপত্যকা জুড়ে শত শত বেকার যুবকদের ব্যাঙ্কে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মত ঘটনার অভিযোগ উঠে। ব্যাঙ্কে চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রচুর সংখ্যক বেকারের কাছ থেকে পয়সা আদায় করার এই প্রতারণামূলক কাজটি গত ছয় মাস ধরে চালানো হচ্ছিল।

এই প্রতারণামূলক কাজের শিকার হয়ে যারা টাকা দিয়েছিলেন তাদের অভিযোগ অনুযায়ী অভিযুক্ত অপরাধীর নাম পায়েল ভট্টাচার্য, যিনি শিলচর ঘনিয়ালা এলাকার বাসিন্দা। তাদের অভিযোগ, তিনি প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে ৬০০০ টাকা করে নিয়েছিলেন এবং তাদের একটি ব্যাঙ্কে চাকরির দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু গত ছয় মাস বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে এই প্রার্থীদেরকে নানা অজুহাত দেখিয়ে তাদের চাকরিতে যোগদানের বিষয়টি পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। চাকরিতে যোগদানের জন্য ছয় মাস ধরে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার পর এক সময় অধৈর্য্য হয়ে তারা সেই মহিলার উপর চাপ সৃষ্টি করেন। তাই তিনি বাধ্য হয়ে বুধবার শিলচরের এন এন দত্ত রোডের একটি অ্যাপার্টমেন্টে তাদের সবাইকে ডেকে ছিলেন। যখন সব চাকরির প্রার্থীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন তখন পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে ওঠে এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, কারণ সেখানে জড়ো হওয়া লোকের সংখ্যা তিনশো’র বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাদের চাকরিতে যোগদানের বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সেই মহিলার দেওয়া ব্যাখ্যা মোটেই তাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাদের সন্দেহ বাড়তে থাকে।

” ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে একটি ব্যাঙ্কে আমাদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যত গত ছয় মাস কিংবা তারও বেশি সময় ধরে এই মহিলা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করেছেন। এমনকি সেই মহিলা কখনো কখনো এমনটাও বলেছেন যে সম্পূর্ণ টাকা দেওয়ার পরই তাদের চাকরিতে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হবে। আমরা যখন সবাই এ নিয়ে প্রচন্ড জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলাম তখন তিনি বাধ্য হয়ে আমাদের সবাইকে এন এন দত্ত রোডে তার অফিসে ডেকেছিলেন। আমাদের সবাইকে প্রথমে বলা হয়েছিল যে মাত্র ৪০ জনকেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত করা হবে। কিন্তু এখানে উপস্থিত হওয়ার পর আজ আমরা দেখতে পেলাম প্রায় ৩০০ জনের উপস্থিতিতে এক বড় মাপের ভিড়ের সৃষ্টি হয়েছে। তারপর যখন পায়েল ভট্টাচার্যের স্বাক্ষরিত আমাদের চাকরিতে যোগদানের অফিশিয়াল কাগজে কোন অফিসের সিল ছিল না তখন পুরো বিষয়টি আমাদের কাছে এক মস্ত বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।” এমনটাই জানালেন এই প্রতারণার শিকার হওয়া এক ব্যক্তি, যিনি নিজেও পায়েল ভট্টাচার্যকে চাকরির জন্য ছয় হাজার টাকা দিয়েছিলেন।

তার আশ্বাসে অসন্তুষ্ট হয়ে চাকরির প্রার্থীরা তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তার কাছে দাবি করেন। তারা জানান যে যদি পায়েল ভট্টাচার্য তাদের টাকা ফেরত দিতে সক্ষম হয় তাহলে তারা বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন না। কিন্তু সেই মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাঙ্কে পৌঁছানোর পর তারা আবিষ্কার করেন যে তার ব্যাঙ্ক একাউন্ট প্রায় শূন্য। তারমানে সে তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং শিলচর থানায় তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনের মতে, পায়েল ভট্টাচার্য তার মায়ের সাথে মালুগ্রামের ঘনিয়ালা এলাকায় থাকেন। তাদের কেউ কেউ পায়েল ভট্টাচার্যের প্রতিশ্রুত চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য নিজের চাকরিও ছেড়ে দিয়েছিলেন। আরেক ভুক্তভোগী বলেন, “আমাদের বলা হয়েছিল যে চাকরির অফারটা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অধীনে রয়েছে এবং সেই উদ্দেশ্যে আমাদেরকে আরবিআই লেভেল যুক্ত একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করানো হয়েছিল। এমনটাও বলা হয়েছিল যে আমাদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। যখন আমরা তাকে ফোন করেছিলাম তখন সে আমাদেরকে এন এন দত্ত রোডের অ্যাপার্টমেন্টে যেতে বলেছিল। সেখানে আমরা অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে গিয়ে দেখলাম সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘ক্রিপ্টো ডেভলপারস প্রাইভেট লিমিটেড’। সেখানে আমাদেরকে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছিল এবং তারপর আমাদেরকে সাত, আট, নয় সেপ্টেম্বরে বঙ্গ ভবনে যেতে বলা হয়েছিল।

শিলচর সদর থানার ওসি বলেন, পায়েল ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং এখনো তদন্ত চলছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই অপরাধীকে তাদের হেফাজতে নিয়েছে।

Comments are closed.