তুষারপাত হয়নি হাফলংয়ে, জমা বরফগুলো 'ফ্রস্ট', বলছেন বিশেষজ্ঞরা
হাফলং থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরে মেঘালয় সীমান্ত সংলগ্ন থুরুক এবং কিপেইলো গ্রামে সম্প্রতি শেষরাতে এবং সকালে ঘাসে, গাছের পাতায় বরফ দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন এলাকাটি রাজ্যের সব থেকে ঠান্ডা এলাকা, আবার কেউ কেউ বলছেন এটা স্নো-ফল বা তুষারপাত ছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটা বরফ হলেও তুষারপাতের ঘটনা নয়। এলাকায় যে বরফ দেখা গেছে সেটা ফ্রস্ট, বাতাসের জলীয় অংশ ঠান্ডায় জমে গেছে, যাকে তুষারও বলা চলে। তবে এটা মাটির কাছাকাছি এলাকায় জলীয় অংশ বরফ হওয়ার ঘটনা, বায়ুমণ্ডল থেকে বৃষ্টির মত মাটিতে বরফ পড়ে নি, ফলে একে তুষারপাত বলা যায়না। যদি তুষারপাত হতো, তাহলে ঘরবাড়িগুলোর ছাদেও বরফ থাকতো, যেটা চোখে পড়েনি। এছাড়া এলাকার তাপমাত্রা এখন ছয় ডিগ্রির কাছাকাছি, এই পরিস্থিতিতে তুষারপাত হওয়া সম্ভব নয়।
ডিমা হাসাও জেলার বনবিভাগের আধিকারিক তুহিন লাঙথাসা জানিয়েছেন, জেলার ওই এলাকাগুলোয় প্রায় প্রতিবছরই এমন হতে দেখা যায়, তবে সেটা তুষারপাত নয়। তুষারপাত হতে হলে প্রকৃতির তাপমাত্রা অন্তত শূন্যের কাছাকাছি যেতে হবে, এছাড়াও নানান বিষয় থেকে যায় যেগুলো মিললে পরেই কোনও এলাকায় তুষারপাত হওয়া সম্ভব। অবশ্যই এটা হলে আমাদের জেলার পর্যটনের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যেত। তবে সেই দিক থেকেও আমাদের পরিকাঠামোগত উন্নতি হয়নি। তুষারপাত হয়েছে বলে খবর বের হওয়ায় অনেকেই ডিমা হাসাও জেলার পর্যটন নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন, এটা ভালো কথা। তবে আমরা চাই না ভুল তথ্যের মাধ্যমে জেলা প্রচারে আসুক। যদিও এই ফ্রস্ট ব্যাপারটা ও খুবই বিরল এবং ভাগ্য থাকলেই দেখার সুযোগ হয়।’
তুষারপাত এবং ফ্রস্টের মধ্যে কি তফাৎ, এব্যাপারে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক পার্থঙ্কর চৌধুরী বলেন, তুষারপাত হতে হলে পরিবেশে বিশেষ পরিস্থিতি দেখা দিতে হবে, এর অন্যতম দিক হচ্ছে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রী বা তার নিচে পৌঁছে যাওয়া। তবে ৫ থেকে ৯ ডিগ্রিতেও ফ্রস্ট দেখা দেওয়া সম্ভব। তুষারপাত হলে বায়ুমণ্ডল থেকে বৃষ্টির মত বরফের কনা পড়বে, কিন্তু ফ্রস্ট মাটির কাছাকাছি এলাকায় জমতে পারে। অনেকেই দুটোকে গুলিয়ে নিতে পারেন, তবে তাদের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকলেও চরিত্রগতভাবে দুটো পুরোপুরি আলাদা। ভারতবর্ষের এতদঞ্চলে সাধারণত তুষারপাতের ঘটনা দেখা যায় না কেননা আমাদের পরিবেশ এমন, সেখানে শূন্য ডিগ্রির নিচে এসে পৌঁছয়না তাপমাত্রা। অন্তত উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যে খুব কম এমনটা হয়েছে।’
ডিমা হাসাও জেলায় তুষারপাত হয়েছে বলে অনেকেই ফেসবুকে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। আবার অনেকেই পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন এটা তুষারপাত নয় বরং ফ্রস্ট। বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন এটা ফ্রস্টই।
Comments are closed.