Also read in

আইপিএলের দ্বিতীয় পর্বেও শিলচরে রমরমিয়ে চলছে ক্রিকেট জুয়া, 'কড়া নজর রাখছে পুলিশ', জানালেন, এসপি রমনদীপ

ইউ এ ই তে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আই পি এল) দ্বিতীয় পর্ব শুরু হওয়ার দু সপ্তাহ হল। গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে মরু দেশে শুরু হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ। এর আগে দেশের মাটিতে করোনার তাণ্ডবের জেরে মাঝপথেই বন্ধ করতে হয়েছিল আইপিএল। আর এরই মধ্যে শিলচরে জমে উঠেছে আইপিএল জুয়া। অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। প্রতিবছরই এভাবে আইপিএল এর মাধ্যমে ভালো ব্যবসা করে থাকেন জুয়াড়িরা। আশ্চর্যের বিষয় হলো, করোনাকালে যখন গোটা বিশ্ব আর্থিক মান্দায় ভুগছে এমন একটা আবহেও রমরমিয়ে ব্যবসা চলছে আইপিএল জুয়াড়িদের।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, আইপিএল এর প্রতিটি সংস্করণ এর সঙ্গে জুয়াড়িরাও নিজেদের আরো ‘আপডেট’ করছে। এখন আইপিএল জুয়া চলছে হাইটেক ফর্মুলায়। এমনকি অ্যাপও তৈরী করে নিয়েছে জুয়াড়িরা। যদিও শিলচর শহরে বা আশপাশের অধিকাংশ এলাকাতেই ফোনে আইপিএল জুয়া চলছে।
শহরের তারাপুর রামনগর, আশ্রম রোড, রংপুর, চেংকুড়ি রোড, কলেজ রোড, রাঙ্গেরখাড়ি, ন্যাশনাল হাইওয়ে এবং দাস কলোনিতে জমে উঠেছে আইপিএল জুয়া। কয়েক বছর আগে শহরের বিভিন্ন স্থানে জুয়াড়িরা ঘাঁটি গেড়ে আইপিএলের ব্যবসা চালাত। তবে গত বছর থেকে তারা এই ‘সিস্টেম’ বদলে ফেলেছে। পুলিশের ভয়ে এখন আর নির্দিষ্ট কোনও স্থানে বসে না জুয়াড়িরা। বরং মোবাইল মারফত ব্যবসা চালায়। ‌ তবে শহরের জুয়াড়িরাও এখন হাইটেক পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।

শহরের প্রতিটি স্থানে এভাবে আইপিএল জুয়া কে কন্ট্রোল করে দাস কলোনি ও শিব কলোনির একজন বস। তার নির্দেশেই চলে গোটা সিস্টেম। প্রতিদিন রাত্রে ম্যাচ শেষে ‘অডিট রিপোর্ট’ জমা পড়ে সেই বসের হাতে। বাইরে থেকেও আইপিএল জুয়া ‘কন্ট্রোল’ করা হয়।

আইপিএল জুয়াতে শহরের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকেরা অংশ নিচ্ছেন। তবে সংখ্যাতে টিনএজাররা বেশি। এখন তো আইপিএল জুয়া এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে যেখানে অনেক গৃহবধূরাও নিজ নিজ পছন্দের আইপিএল টিমে টাকা লাগাচ্ছেন। এই আইপিএল জুয়ার ফলে অনেকেই সর্বহারা হয়েছেন। এমনও খবর পাওয়া গেছে যেখানে জুয়ায় মোটা অংকের টাকা হেরে ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করতে হয়েছে অনেককে। আইপিএল জুয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুবসমাজ।

সূত্র অনুসারে যা খবর মিলেছে সেই অনুযায়ী কোন দল জিতবে, টস কারা জিতবে এসব ছাড়াও প্রতি পাঁচ ওভার করে গ্রাহকদের চারটি সেশন দেয় জুয়াড়িরা। অর্থাৎ এই পাঁচ ওভারের সেশনে কত রান হবে, সেটা নিয়েও জুয়া খেলতে পারবেন গ্রাহকরা। ১৫-২০ ওভারের সেশনের কোড হচ্ছে ‘লম্বা’। তাছাড়া এবার আইপিএলে কোন দল চ্যাম্পিয়ন হবে, তা নিয়েও জুয়া খেলা যাবে। আইপিএলের আটটি দলের একটা নির্দিষ্ট দর রয়েছে। এই মুহূর্তে দরের হিসেবে শীর্ষে রয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস এবং দিল্লি ক্যাপিটালস। সবচেয়ে নিচে রয়েছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। অবশ্য প্রতি ম্যাচের পর এই দর উঠানামা করে। প্রথম পর্বে দল হিসেবে শীর্ষ তালিকায় ছিল আরসিবি ও। তবে দ্বিতীয় পর্বে টানা দু ম্যাচ হারার তাদের দর কমে গেছে।

কয়েকজন সূত্র অনুসারে জানা গেছে, শুধু আইপিএল নয়, এখন গোটা বছরজুড়েই শিলচরে ক্রিকেট জুয়া চলে থাকে। আইপিএলের মতো তেমন না হলেও প্রতিটি সিরিজ নিয়েই চলে বেটিং। শুধু আইপিএল নয়, সীমিত ওভারের প্রতিটি সিরিজ নিয়েই ক্রিকেট জুয়ার আসর বসে। আইপিএল অথবা আইসিসির কোনো মেগা ইভেন্ট হলে তো কথাই নেই। এই ক্রিকেট জুয়া তে এখন একরকম আসক্ত হয়ে পড়েছে যুব প্রজন্ম। আর আইপিএল ম্যাচ হলে তো কথাই নেই। এটা যেন এক উৎসবে পরিণত হয়েছে।

একদিকে যখন শহরে রমরমিয়ে চলছে আইপিএল জুয়া তখন জুয়াড়িরা পুলিশের নাগালের বাইরে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কাছাড়ের এসপি রমনদীপ কৌর বরাক বুলেটিন কে জানান, সব ধরনের অবৈধ এবং সমাজবিরোধীদের উপর কড়া নজর রেখে চলেছে পুলিশ। নির্দিষ্ট তথ্য হাতে পেলেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আইপিএল এর পরই শুরু হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তা নিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে শহরের জুয়াড়িরা। তাই এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসন যদি দ্রুত কড়া ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে কিন্তু পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

Comments are closed.